মানুষ ছাড়া পৃথিবী কেমন হবে
সৌরজগতের একমাত্র
গ্রহ পৃথিবী, যেখানে মানুষের
বসবাস রয়েছে। অর্থাৎ মানুষ ছাড়া পৃথিবীর অস্তিত্ব যেন কল্পনাই করা যায় না। কিন্তু
আপনি কি কখনো ভেবে দেখেছেন যদি সত্যি সত্যি পৃথিবীতে কোন মানুষ না থাকে, যদি কোনো ভাইরাসের আক্রমণে, রহস্যময় কোনো রোগে আক্রান্ত হয়ে, কিংবা বিষাক্ত কোনো রাসায়নিক দুর্ঘটনায় যদি
পৃথিবীর সব মানুষ নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় তাহলে পৃথিবীতে কী ঘটতে পারে ? কি হবে মানুষ
ছাড়া মানুষের এই নির্মান এর। কিভাবে বসবাস করবে বাকি প্রানীরা এই পৃথিবীতে? পৃথিবীর সব মানুষ নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবার পরও হাজার বছর পর্যন্ত কী কী হতে পারে এবং মানুষ
ছাড়া পৃথিবী কেমন হতে পারে তাই দেখানোর
চেষ্টা করা হয়েছে।
উৎসাহী
বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন সময় এ প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছেন। বিজ্ঞানীদের
অনুমান অনুযায়ী সবার প্রথম যে পরিবর্তন টি হবে তা হলো ধীরে ধীরে পৃথিবীর সব আলো
নিভে যাবে। কারন পৃথিবীর অধিকাংশ পাওয়ার স্টেশন ফসিফুয়েলের সাহায্যেই চলে আর এই
গুলোকে চালায় মানুষ। মানুষ না থাকলে সেগুলো নিয়ন্ত্রণ করার মতো কেউ না থাকায় কয়েক
ঘন্টার ব্যবধানেই বিশ্বের অধিকাংশ এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাবে। কেবলমাত্র
উইন্ডমিল, সোলার প্যানেল
এবং জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে সরবরাহকৃত এলাকাতেই বিদ্যুৎ প্রবাহ অবিচ্ছিন্ন থাকবে।
উইন্ডমিলের লুব্রিক্যান্ট শেষ হয়ে গেলে এবং সোলার প্যানেলের উপর ধুলোবালি পড়ে তা
আচ্ছাদিত হয়ে গেলে কয়েক মাসের মধ্যে সেগুলোও অকার্যকর হয়ে যাবে। শেষপর্যন্ত
শুধুমাত্র জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন অব্যাহত থাকতে পারে। এগুলো
কয়েক মাস, এমনকি কয়েক বছর
পর্যন্তও কার্যকর থাকতে পারে। তবে অব্যবস্থাপনায় সেগুলোও নষ্ট হয়ে গেলে কয়েক শত
বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো পৃথিবী সম্পূর্ণ অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে পড়বে।
আরো জানুন: বিশ্বের সবচেয়ে বড় ১০টি দেশ
পৃথিবীর তেল এবং গ্যাস শোধনাগারগুলোতে বিস্ফোরণ এবং অগ্নিকান্ডের সৃষ্টি হবে। নিয়ন্ত্রণ করার কেউ না থাকায় সেগুলো মাসের পর মাস ধরে জ্বলতে থাকবে। লোকালয় কিংবা বনাঞ্চল থেকে বেশি দূরে অবস্থিত না হলে অগ্নিকান্ড ব্যাপক আকার ধারণ করতে পারে। প্রথম ৪৮ ঘন্টার মধ্যেই শক্তি গ্রহণের মাত্রায় ব্যাপক হ্রাস হওয়ায় বিশ্বের নিউক্লিয়ার রিঅ্যাক্টরগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে সেফ মোডে চলে যাবে।
দুই-তিন দিনের মধ্যেই পৃথিবীর অধিকাংশ ভূগর্ভস্থ রেললাইন এবং টানেল পানিতে সম্পূর্ণ নিমজ্জিত হয়ে যাবে। নিয়মিত পানি নিষ্কাশনের জন্য অধিকাংশ ভূগর্ভস্থ রেললাইন এবং টানেলেই পাম্প ব্যবহার করা হয়। বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায় এবং জেনারেটরের জ্বালানি শেষ হয়ে যাওয়ায় সেগুলো বন্ধ হয়ে যাবে এবং পানি নিষ্কাশন করা সম্ভব না হওয়ায় ধীরে ধীরে ভূগর্ভস্থ পানিতে পরিপূর্ণ হয়ে সম্পূর্ণ পরিত্যক্ত হয়ে পড়বে।
এখন মানুষ ছাড়াও এই পৃথিবী তে মিলিয়ন এর বেশী প্রজাতির প্রানী
বসবাস করে থাকে, তাদের কি হবে ?
প্রথমেতো ১০ দিনের মধ্যেই অধিকাংশ পোষা প্রাণী অনাহারে মৃত্যুবরণ করবে। যারা বাইরে খাদ্যের খোজের বের হবে তাদের বাইরের অথবা জংলি পশুরা মেরে খেয়ে ফেলবে। এছাড়াও প্রথম কয়েক দিনের মধ্যেই বিশ্বের শত কোটি গরু, ছাগল, শূকর, মুরগিসহ বিভিন্ন ধরনের প্রাণী তাদের খামার থেকে বেরিয়ে পড়বে। যারা বের হতে পারবে না তারা খামারের ভেতরেই মারা যাবে। আর যারা বের হতে পারবে তারাও বাইরের পরিবেশের সাথে অভ্যস্ত না হওয়ায় এবং খাবারের সংকট থাকায় ধীরে ধীরে মারা পড়বে অথবা হিংস্র বন্য পশুরা মেরে খেয়ে ফেলবে। বেঁচে থাকবে কেবল আগে থেকেই বাইরে থাকা হিংস্র বন্য পশুরা। বিভিন্ন জাতের ইঁদুর এবং তেলাপোকা বেঁচে থাকলেও যেগুলো মানুষের ফেলে দেওয়া ময়লার উপর নির্ভরশীল ছিল, খাদ্যের অভাবে তাদের সংখ্যাও বিপুলভাবে হ্রাস পাবে। কিন্তু পশুপাখী আরো বিপদে পরবে মানুষ পৃথিবী থেকে উধাও হওয়ার একমাস পর থেকে। যত কুলিং ওয়াটার কোল্ড প্রডাকশনে ব্যবহৃত হয় বিদ্যুৎ তৈরিতে তা সব তরল থেকে উজ্জ হতে শুরু হবে। যার ফলে প্রত্যেক্টি কয়লার পাওয়ার পয়েন্ট ধিরে ধিরে গলেতে থাকবে এবং হটাৎ ই ফেটে যাবে। এর ফলে তৈরি হবে রেডিয়েশন। যার কারণে লক্ষ্য লক্ষ্য প্রানী ঐ রেডিয়েশন এর প্রভাবে মারা যাবে।
আরো জানুন: আমাজন জঙ্গলের ১৫টি অদ্ভুত সত্যি
সময় এর সাথে সাথে
পৃথিবী আবার নিজের মত হতে শুরু করবে। মানুষ দ্বারা তৈরি রেডিয়েশন, পলিয়শন খুব তারাতারি পৃথিবী থেকে দূর হবে। কারন
নতুন ভাবে এইসব তৈরি করার মত কেউ থকাবে না। ২০ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে ফুটপাথ এবং
রাস্তাঘাটগুলোতে ফাটল ধরে সেখানে আগাছা এবং গাছপালা জন্মাতে থাকবে। এ সময়ের মধ্যে
ফুটপাত এবং খোলা চত্বরগুলোর তিন-চতুর্থাংশই ঘাস এবং আগাছায় আবৃত হয়ে যাবে। মোটামুটি ২০০ বছরের মধ্যে পৃথিবীর অধিকাংশ কনক্রিটের
বিল্ডিং ভেঙে পড়তে শুরু করবে।
ব্যবস্থাপনার অভাবে স্টিলের তৈরি ভবন এবং ব্রিজগুলোতে বৃষ্টির পানি এবং বাতাসের অক্সিজেনের বিক্রিয়ায় মরিচা ধরতে শুরু করবে। ৩০০ বছরের মধ্যে আইফেল টাওয়ার, গোল্ডেন গেট ব্রিজসহ বিশ্বের অধিকাংশ স্টিলের স্থাপনা ভেঙে পড়তে শুরু করবে। বালির উপর তৈরি দুবাই, লাজভেগাস, রাজস্থান, মিশরের মত শহর গুলো আস্তে আস্তে সম্পূর্ন বালির নিচে চলে যাবে। যত মজবুতই হোক, ব্যবস্থাপনা না থাকায় কয়েকশো বছরের মধ্যে বাঁধগুলোও ভেঙে পড়বে এবং পৃথিবীর অনেক এলাকা পানিতে তলিয়ে যাবে, রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে যাবে। আর বাকি সব শহর রাস্তাঘাট গুলি জংগলে পরিনত হবে। সব বাড়িঘর বিল্ডিং এ ও উদ্ভিদ জন্মাবে। প্রকৃতি ধীরে ধীরে মানব সভ্যতাকে গ্রাস করে নিতে থাকবে। কয়েক হাজার বছর পরে মানুষের নির্মিত শহরগুলোর খুব কম চিহ্নই অবশিষ্ট থাকবে। ১০ হাজার বছর পর কেবলমাত্র চীনের মহাপ্রাচীর, মিসরের পিরামিড এবং যুক্তরাষ্ট্রের মাউন্ট রাশমোর ন্যাশনাল মেমোরিয়াল ছাড়া বলতে গেলে মানুষের নির্মিত আর কোনো স্থাপনাই টিকে থাকবে না। একলক্ষ বছর পর তাও অবশিষ্ট থাকবে না। থাকবে কিছু প্লাস্টিকের বোতল, প্লাস্টিকের তৈরি দ্রব্য বা প্লাস্টিকের নোংরা আবর্জনা। তখন যদি কোনো এলিয়েন পৃথিবীতে ভ্রমণ করে তবে কেবলমাত্র কিছু প্লাস্টিকের অবশেষ ছাড়া মানুষের তৈরি কোনো কিছুই তারা খুঁজে পাবে না। প্রায় ৫০ লক্ষ বছর পর প্লাস্টিকের অবশেষও থাকবে না এই পৃথিবীতে অর্থাৎ ৫০ লক্ষ বছর পরে যদি পৃথিবী তে কোনো বুদ্ধিমান সভ্যতার সৃষ্টি হয় বা কোনো এলিয়েন পৃথিবীতে ভ্রমণ করে, তবে তারা হয়তো কোনো দিন জানতে ও পারবে না আমার আপনার মত কোনো মানুষের বসবাস ছিলো এই পৃথিবী তে।
আজকের বিষয়টি ভালো লেগে থাকলে শেয়ার করুন আপনার বন্ধুদের সাথে। পৃথিবীর এরকম অদ্ভুত সব অজানা তথ্য জানতে আমাদের সাথেই থাকুন।
এছাড়াও যদি আপনি নিয়মিত বিশ্বের ছোট ছোট অদ্ভুত, রহস্যময় ও আশ্চর্যজনক বিষয় সম্পর্কে জানতে চান তাহলে আমাদের সামাজিক মাধ্যমগুলোর সাথে যুক্ত থাকুন।
ফেইসবুক পেইজ:
ইউটিউব চ্যানেল:
ইনস্টাগ্রাম পেজ: The Earth Bangla
ফেইসবুক গ্রুপ:
প্রশ্নপর্ব
কিভাবে পৃথিবীর সব মানুষ নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে পারে?
যদি পৃথিবীর মানুষকে কোনো ভাইরাসের আক্রমণ করে, রহস্যময় কোনো রোগে আক্রান্ত হলে, কিংবা বিষাক্ত কোনো রাসায়নিক দুর্ঘটনা ঘটলে পৃথিবীর সব মানুষ নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে পারে।
পৃথিবীতে মানুষ না থাকলে সবার প্রথমে কি হবে?
বিজ্ঞানীদের অনুমান অনুযায়ী সবার প্রথম যে পরিবর্তন টি হবে তা হলো ধীরে ধীরে পৃথিবীর সব আলো নিভে যাবে। কারন পৃথিবীর অধিকাংশ পাওয়ার স্টেশন ফসিফুয়েলের সাহায্যেই চলে আর এই গুলোকে চালায় মানুষ। মানুষ না থাকলে সেগুলো নিয়ন্ত্রণ করার মতো কেউ না থাকায় কয়েক ঘন্টার ব্যবধানেই বিশ্বের অধিকাংশ এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাবে।
মানুষ ছাড়া মানুষের স্থাপনাগুলোর কি হবে ?
১০ হাজার বছর পর কেবলমাত্র চীনের মহাপ্রাচীর, মিসরের পিরামিড এবং যুক্তরাষ্ট্রের মাউন্ট রাশমোর ন্যাশনাল মেমোরিয়াল ছাড়া বলতে গেলে মানুষের নির্মিত আর কোনো স্থাপনাই টিকে থাকবে না। একলক্ষ বছর পর তাও অবশিষ্ট থাকবে না। থাকবে কিছু প্লাস্টিকের বোতল, প্লাস্টিকের তৈরি দ্রব্য বা প্লাস্টিকের নোংরা আবর্জনা।
মানুষ ছাড়া পৃথিবীর পশুপাখিদের কিভাবে ?
অধিকাংশ পোষা প্রাণী অনাহারে মৃত্যুবরণ করবে। বিভিন্ন জাতের ইঁদুর এবং তেলাপোকা বেঁচে থাকলেও যেগুলো মানুষের ফেলে দেওয়া ময়লার উপর নির্ভরশীল ছিল, খাদ্যের অভাবে তাদের সংখ্যাও বিপুলভাবে হ্রাস পাবে। নিয়ন্ত্রণ করার জন্য মানুষ না থাকায় পৃথিবীর পাওয়ার পয়েন্ট গুলো ফেটে রেডিয়েশন তৈরি করবে যার কারণে লক্ষ্য লক্ষ্য প্রানী ঐ রেডিয়েশন এর প্রভাবে মারা যাবে।
nice
উত্তরমুছুনএকটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Please do not Enter any spam comment or Link in the comment Box