বাংলাদেশের বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান

বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান বা ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট বলতে পৃথিবীর সেসব স্থাপনাগুলোকে বোঝানো হয় যেগুলো ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক, বৈজ্ঞানিক কিংবা অন্য যেকোনো দিক থেকে বিশেষ কোন বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। জাতিসংঘের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা ইউনেস্কো পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে অবস্থিত যে স্থাপনাগুলোকে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি প্রদান করে সেগুলোকেই ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট বলা হয়। ২০১৮ সাল পর্যন্ত পৃথিবীতে মোট ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট এর সংখ্যা হল ১০৯২টি। এর মধ্যে আমাদের বাংলাদেশে ইউনেস্কো স্বীকৃত ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট এর সংখ্যা ৩টি। আজকে আমরা আপনাদের জানাবো, বাংলাদেশে অবস্থিত ৩টি ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট সম্পর্কে।

১. মসজিদের শহর বাগেরহাট

মসজিদের শহর বাগেরহাট মূলত একটি বিলুপ্ত শহর। এটি বাংলাদেশের খুলনা বিভাগে অবস্থিত। ১৯৮৩ সালে ইউনেস্কো এই শহরটিকে সাংস্কৃতিক বিভাগের অন্তর্ভুক্ত করে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট এর স্বীকৃতি প্রদান করে। ১৫শ শতকের দিকে তুর্কি সেনাপতি খান জাহান আলী এই শহরটি গড়ে তুলেছিলেন। পূর্বে এই শহরের নাম ছিল খলিফতাবাদ। ২০১১ সালে বিশ্বের হারিয়ে যাওয়া ১৫টি শহরের একটি তালিকা তৈরি করেছিলো আমেরিকায় প্রকাশিত বিখ্যাত ম্যাগাজিন সংস্থা ফোর্বস, এই তালিকায় ৫০টির বেশি ইসলামিক স্থাপত্যের সমন্বয়ে তৈরি মসজিদের শহর বাগেরহাট অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। এই শহরের সবচেয়ে বিখ্যাত মসজিদটি হল ষাট গম্বুজ মসজিদ। এছাড়া এই শহরের আরো কিছু উল্লেখযোগ্য মসজিদ হল নয় গম্বুজ মসজিদ, সিংগরা মসজিদ, রনভিজয়পুর মসজিদ, চুনাখোলা মসজিদ ইত্যাদি। এই শহরের অসাধারণ সব ইসলামিক স্থাপত্য পুরো বিশ্বে এই শহরকে অনন্য করে রেখেছে।

আরো জানুন: যে ১০টি কারণে বাংলাদেশ সবার থেকে আলাদা

২. পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার

পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার হল পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ বৌদ্ধ বিহার। একে সোমপুর বিহার বা সোমপুর মহাবিহার নামেও ডাকা হয়। এই বৌদ্ধ বিহারটি বাংলাদেশের রাজশাহী বিভাগের নওগাঁ জেলায় অবস্থিত। ১৯৮৫ সালে ইউনেস্কো এই বিহারকে সাংস্কৃতিক বিভাগের অন্তর্ভুক্ত করে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট এর স্বীকৃতি প্রদান করে। সাধারণত বৌদ্ধ বিহার বলতে এমন একটি জায়গা বোঝানো হয় যেখানে বৌদ্ধ ধর্ম সম্পর্কিত বিভিন্ন কাজ করা হয় এবং বৌদ্ধ ধর্ম শিক্ষা দেওয়া হয়। পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারের ইতিহাস থেকে জানা যায় যে, অষ্টম শতকের শেষের দিকে পালবংশের দ্বিতীয় রাজা শ্রী ধর্মপাল দেব এই বিহার তৈরি করেছিলেন। পূর্বে এই বিহারটি প্রায় ৩০০ বছর ধরে বৌদ্ধদের বিখ্যাত ধর্ম শিক্ষাদান কেন্দ্র ছিল। সেসময় উপমহাদেশের বিভিন্ন দেশ থেকে বৌদ্ধরা এই বিহারে ধর্মজ্ঞান অর্জন করতে আসতো। ১৮৭৯ সালে স্যার আলেকজান্ডার কানিংহাম সর্বপ্রথম এই বিশাল স্থাপনাটি আবিষ্কার করেছিলেন। এই বিহারটি বর্তমানে বিভিন্ন পর্যটকদের জন্য অন্যতম আকর্ষণ।

আরো জানুন: বিশ্বের ১০টি স্বাধীন দেশের পতাকার অর্থ

৩. সুন্দরবন

সুন্দরবন বাংলাদেশের খুলনা বিভাগে অবস্থিত। এটি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট। ১৯৯৭ সালে ইউনেস্কো সুন্দরবনকে প্রাকৃতিক বিভাগের অন্তর্ভুক্ত করে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট এর স্বীকৃতি প্রদান করে। সাধারণত ম্যানগ্রোভ বলতে এক বিশেষ ধরণের উদ্ভিদকে বোঝানো হয় যা সমুদ্র উপকূলবর্তী অঞ্চলগুলোর লবনাক্ত পানিতে জন্মায়। বাংলাদেশের ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবনেও অসংখ্য ম্যানগ্রোভ গাছ জন্মায়। সুন্দরবনের আয়তন ১,৩৯,৫০০ হেক্টর। সুন্দরবনের মোট বনাঞ্চলের ৬০% রয়েছে বাংলাদেশে আর বাকি ৪০% রয়েছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে। সুন্দরবনে রয়েছে পৃথিবীর অন্যতম একটি বাঘের প্রজাতি যার নাম রয়েল বেঙ্গল টাইগার। এই বাঘের গর্জন প্রায় ৩ কিলোমিটার দূর থেকে শুনতে পাওয়া যায়। দুর্ভাগ্যবশত  প্রায়ই অবৈধভাবে সুন্দরবনে রয়েল বেঙ্গল টাইগার এর শিকার করার কারণে এই বাঘ ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। রয়েল বেঙ্গল টাইগার ছাড়াও সুন্দরবনে নানান ধরণের পাখি, চিত্রা হরিণ, কুমির, সাপসহ আরো অসংখ্য প্রজাতির প্রাণী দেখতে পাওয়া যায়। সুন্দরবনের অপরূপ বৈচিত্র্য সকল শ্রেনির পর্যটকদের আগমনের অন্যতম কারণ।

আরো জানুন: পৃথিবীর নতুন সপ্তম আশ্চর্য

এই ছিল আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত বাংলাদেশের ৩টি ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট এর বিস্তারিত তথ্য। এর মধ্যে কোন ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটে আপনি ঘুরতে গিয়েছেন এবং সেখানে আপনার অভিজ্ঞতা কেমন ছিল তা অবশ্যই আমাদের কমেন্টে জানান। পৃথিবীর এরকম অদ্ভুত সব অজানা তথ্য জানতে আমাদের সাথেই থাকুন।

এছাড়াও যদি আপনি নিয়মিত বিশ্বের ছোট ছোট অদ্ভুত, রহস্যময় ও আশ্চর্যজনক বিষয় সম্পর্কে জানতে চান তাহলে আমাদের সামাজিক মাধ্যমগুলোর সাথে যুক্ত থাকুন।

ফেইসবুক পেইজ: The Earth Bangla

ইউটিউব চ্যানেল: The Earth Bangla

ইনস্টাগ্রাম পেজ: The Earth Bangla

ফেইসবুক গ্রুপ: The Earth Bangla Family

প্রশ্নপর্ব

পৃথিবীতে মোট ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট এর সংখ্যা কয়টি?

২০১৮ সাল পর্যন্ত পৃথিবীতে মোট ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট এর সংখ্যা হল ১০৯২টি। এই স্থানগুলো মোট ১৩৮টি রাষ্ট্রে অবস্থিত।

বাংলাদেশের সবচেয়ে পুরনো শহর কোনটি ?

বাংলাদেশের প্রাচীন শহর পুণ্ড্রবর্ধন যা বর্তমানে মহাস্থানগড় নামে পরিচিত। মহাস্থানগড়ের বর্তমান অবস্থান বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলায় করতোয়া নদীর পশ্চিম তীরে গেলে এই শহরের ধ্বংসাবশেষ দেখা যায়৷।

বাংলার প্রাচীন জনপদ কোনটি?

বাংলাদেশের সর্বপ্রাচীন জনপদ হলাে পুণ্ড্র। বগুড়া, রাজশাহী, রংপুর ও দিনাজপুর জেলার অবস্থানভূমিকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠে পুণ্ড্র জনপদ। প্রাচীন পুণ্ড রাজ্যের রাজধানী ছিল পুণ্ড্রবর্ধন বা পুণ্ড্রনগর।

বাংলাদেশের প্রথম জেলা কোনটি?

চট্টগ্রাম বাংলাদেশের প্রথম জেলা যা ১৬৬৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং ১৯৮৪ সালের ৭ নভেম্বর ফেনী জেলা প্রতিষ্ঠা করা হয়।

বাংলাদেশের ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট কয়টি?

ইউনেস্কো স্বীকৃত বাংলাদেশে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট এর সংখ্যা ৩টি। বাগেরহাট শহর, পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার এবং সুন্দরবন।

বাগেরহাট শহর

মসজিদের শহর বাগেরহাট মূলত একটি বিলুপ্ত শহর। এটি বাংলাদেশের খুলনা বিভাগে অবস্থিত। পূর্বে এই শহরের নাম ছিল খলিফতাবাদ। ১৯৮৩ সালে ইউনেস্কো এই শহরটিকে সাংস্কৃতিক বিভাগের অন্তর্ভুক্ত করে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট এর স্বীকৃতি প্রদান করে। এই শহরের সবচেয়ে বিখ্যাত মসজিদটি হল ষাট গম্বুজ মসজিদ।

পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার

পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারকে সোমপুর বিহার বা সোমপুর মহাবিহার নামেও ডাকা হয়। এটি বাংলাদেশের রাজশাহী বিভাগের নওগাঁ জেলায় অবস্থিত। পূর্বে এই বিহারটি প্রায় ৩০০ বছর ধরে বৌদ্ধদের বিখ্যাত ধর্ম শিক্ষাদান কেন্দ্র ছিল। ১৯৮৫ সালে ইউনেস্কো এই বিহারকে সাংস্কৃতিক বিভাগের অন্তর্ভুক্ত করে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট এর স্বীকৃতি প্রদান করে।

রয়েল বেঙ্গল টাইগার

পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবনে রয়েছে পৃথিবীর অন্যতম একটি বাঘের প্রজাতি যার নাম রয়েল বেঙ্গল টাইগার। এই বাঘের গর্জন প্রায় ৩ কিলোমিটার দূর থেকে শুনতে পাওয়া যায়।

Post a Comment

Please do not Enter any spam comment or Link in the comment Box

নবীনতর পূর্বতন