বিশ্বের ১০টি স্বাধীন দেশের পতাকার অর্থ
পতাকা পৃথিবীর যেকোনো স্বাধীন দেশের জন্য একটি গৌরবের বিষয়। একটি পতাকা দিয়ে পৃথিবীর যেকোনো একটি স্বাধীন রাষ্ট্রকে নির্দেশ করা হয়। বিভিন্ন ক্ষেত্রে পতাকা একটি দেশকে প্রতিনিধিত্ব করে। এইসব পতাকার মধ্যে থাকে বিভিন্ন ডিজাইন এবং রঙ। যেকোনো পতাকার প্রতিটি ডিজাইন এবং রঙ কোন নির্দিষ্ট দেশের ঐতিহ্য এবং ইতিহাসকে নির্দেশ করে। অনেক ক্ষেত্রে এই পতাকাগুলো কোন একটি বিশেষ অর্থও প্রকাশ করে। আজকের আমরা পৃথিবীর ১০টি স্বাধীন দেশের পতাকার অর্থ সম্পর্কে আপনাদের জানাবো।
১. বাংলাদেশ
দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম একটি দেশ বাংলাদেশ। বাংলাদেশের পতাকাতে মোট ২টি রঙ রয়েছে। এগুলো হল লাল এবং সবুজ। বাংলাদেশের জাতীয় পতাকাতে রয়েছে একটি সবুজ আয়তক্ষেত্র যার মধ্যে একটি লাল রঙের বৃত্ত বিদ্যমান। এই পতাকাটির ডিজাইন করেছেন বাংলাদেশের বিখ্যাত চিত্রশিল্পী কামরুল হাসান। ১৯৭২ সালের ১৭ জানুয়ারি বাংলাদেশের এই পতাকাটি সরকারীভাবে গৃহীত হয়। বাংলাদেশের পতাকায় বিদ্যমান সবুজ রং বাংলাদেশের সবুজ প্রকৃতি এবং এদেশের তরুণদের প্রতীক। আর পতাকায় বিদ্যমান লাল রঙ বাংলাদেশের উদীয়মান সূর্যকে নির্দেশ করে। একইসাথে এই লাল রঙ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে শহিদ হওয়া যোদ্ধাদের রক্তের প্রতীক।
২. ভারত
ভারতের জাতীয় পতাকাতে মোট ৩ টি রঙ বিদ্যমান। এগুলো হল সাফরন, সাদা এবং সবুজ। এই পতাকার কেন্দ্রে চব্বিশটি দণ্ডযুক্ত নীল অশোকচক্র রয়েছে। ভারতের জাতীয় পতাকার ডিজাইন করেছেন পিঙ্গালি ভেঙ্কাইয়া। ১৯৪৭ সালের ২২ জুলাই এই পতাকাটি ভারতের জাতীয় পতাকা হিসেবে গৃহীত হয়। এই পতাকায় সাফরন রঙ ত্যাগ এবং সাহসকে নির্দেশ করে। সাদা রঙ শান্তি, সততা এবং পবিত্রতাকে নির্দেশ করে এবং সবুজ রঙ দেশের উর্বরতা, বৃদ্ধি এবং বিশ্বাসকে নির্দেশ করে। ভারতের পতাকায় বিদ্যমান অশোক চক্র আসলে ধর্মচক্রের প্রতীক। এই অশোকচক্রে রয়েছে ২৪টি দণ্ড যা দ্বারা একটি দিনের মূল্যবান ২৪ ঘন্টাকে বোঝায়। ভারতের এই পতাকাকে অনেক সময় ত্রিরঙ্গা পতাকা নামে ডাকা হয়।
আরো জানুন: বাংলাদেশ সম্পর্কে অজানা ও অবাক করা ১০ টি তথ্য
৩. পাকিস্তান
পাকিস্তানের জাতীয় পতাকাতে রয়েছে ২টি রঙ। যেগুলো হল সবুজ এবং সাদা। এই পতাকায় গাঢ় সবুজের মাঝে একটি নতুন চাঁদ এবং সাদা তারা রয়েছে এবং পতাকার বাম দিকে সাদা অংশ রয়েছে। পাকিস্তানের জাতীয় পতাকার ডিজাইন করেছেন সৈয়দ আমীরউদ্দিন কেদওয়াই। পাকিস্তান স্বাধীনতা লাভ করার ৩ দিন পূর্বে অর্থাৎ ১৯৪৭ সালের ১১ই আগস্ট পাকিস্তানের বর্তমান পতাকাটির নকশা গৃহীত হয়েছিল। উল্লেখ্য যে, পাকিস্তানের জাতীয় পতাকার নকশাটি অল ইন্ডিয়া মুসলিম লীগের ১৯০৬ সালের পতাকার ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছিল। এই পতাকায় গাঢ় সবুজ রঙ ইসলাম ধর্মের প্রতীক এবং পতাকার সাদা রঙ পাকিস্তানে বসবাসরত সংখ্যালঘু অমুসলিমদের প্রতীক। এই পতাকার মাঝখানে থাকা নতুন চাঁদ ও তারা যথাক্রমে উন্নতি এবং আলোর প্রতীক। পাকিস্তানের এই পতাকাকে প্রায়ই পারচাম-ই-সিতারা ও হিলাল নামে ডাকা হয়। যার অর্থ হল চাঁদ ও তারা খচিত পতাকা।
৪. জাপান
জাপান এই দেশটিকে আমরা অনেকেই সূর্যোদয়ের দেশ হিসেবে চিনি। আর এই সূর্যের সাথে জাপানের জাতীয় পতাকার সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে। জাপানের জাতীয় পতাকাতে রয়েছে সাদা আয়তক্ষেত্র যার মধ্যে একটি লাল বৃত্ত বিদ্যমান। এই লাল বৃত্তটি দ্বারা জাপানের সূর্যের দেবী Amaterasu কে বোঝানো হয়। জাপানিরা বিশ্বাস করে যে, সূর্যের দেবী Amaterasu জাপানের প্রতিষ্ঠাতা এবং জাপানের সকল সম্রাটদের পূর্বপুরুষ। তাই জাপানের পতাকার লাল রঙ এদেশের উদীয়মান সূর্যের প্রতীক। এছাড়া এই পতাকায় থাকা সাদা রঙ জাপানি মানুষদের সততা, বিশুদ্ধতা এবং পবিত্রতাকে নির্দেশ করে। ১৮৭০ সালের ২৭শে ফেব্রুয়ারী এই পতাকাটিকে জাপানের অসামরিক পতাকা হিসাবে নির্বাচিত করা হয়েছিল। পরবর্তীতে ১৯৯৯ সালের ১৩ই আগস্ট জাপানের বর্তমান পতাকাটিকে জাপানের জাতীয় পতাকা হিসাবে নির্বাচিত করা হয়। জাপানে এই পতাকাকে নিশোকি এবং হিনোমারু নামে ডাকা হয়। তবে একটি অবাক করার মত ব্যপার হল, জাপানের জাতীয় পতাকার ডিজাইনার কে প্রকৃতপক্ষে তা কেউ জানেনা।
আরো জানুন: বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল ১০টি শহর
৫. দক্ষিণ কোরিয়া
পূর্ব এশিয়ার অন্যতম একটি দেশ হল দক্ষিণ কোরিয়া। এই দেশের জাতীয় পতাকায় মূলত ৩টি অংশ রয়েছে। এগুলো হল সাদা বর্ণের আয়তক্ষেত্র, মাঝখানে অবস্থিত লাল ও নীল বর্ণের তায়েগুক এবং পতাকার চারটি কোনায় অবস্থিত চারটি কালো বর্ণের ট্রাইগ্রাম। এই পতাকার সাদা অংশ শান্তি এবং পবিত্রতার প্রতীক। পতাকায় বিদ্যমান বৃত্তের লাল অংশ দ্বারা মহাবিশ্বের সকল ভালো দিকগুলো এবং নীল অংশ দ্বারা মহাবিশ্বের সকল খারাপ দিকগুলোকে নির্দেশ করা হয়। মোটকথা মাঝখানের বৃত্তটি মহাবিশ্বের সকল ভাল মন্দের ভারসাম্যকে নির্দেশ করে। এই পতাকার প্রতিটি ট্রাইগ্রামের আলাদা আলাদা অর্থ রয়েছে। যেমন পতাকার ওপরের অংশের বামদিকের ট্রাইগ্রাম দ্বারা স্বর্গ এবং নিচের অংশের বামদিকের ট্রাইগ্রাম দ্বারা আগুন বোঝানো হয়। আবার পতাকার ওপরের অংশের ডানদিকের ট্রাইগ্রাম দ্বারা পানি এবং নিচের অংশের ডানদিকের ট্রাইগ্রাম দ্বারা পৃথিবী বোঝানো হয়। দক্ষিণ কোরিয়ার বর্তমান পতাকাটি ২০১১ সালের ৩০মে সরকারিভাবে গৃহীত হয়।
৬. উত্তর কোরিয়া
পূর্ব এশিয়ার অন্যতম ক্ষমতাশীল দেশ হল উত্তর কোরিয়া। এই দেশের পতাকা মোট ৩টি রঙ দিয়ে তৈরি। এগুলো হল লাল, সাদা এবং নীল। এছাড়া এই পতাকায় একটি লাল রঙের তারা রয়েছে। এই পতাকার লাল রঙের তারা দিয়ে কোরিয়ার বিপ্লবী ঐতিহ্যকে বোঝানো হয়। আর শুধু লাল রঙ দ্বারা উত্তর কোরিয়ার মানুষদের দেশপ্রেম এবং দৃঢ়সংকল্পকে বোঝানো হয়। এই পতাকার সাদা রঙ কোরিয়ান জাতি ও এর সংস্কৃতির ঐক্যকে বোঝায় এবং নীল রঙ দিয়ে উত্তর কোরিয়ার স্বাধীনতা, শান্তি, বন্ধুত্ব, এবং আন্তর্জাতিক ঐক্যের জন্য লড়াই করার ইচ্ছাকে বোঝায়। সর্বশেষ ১৯৯২ সালে উত্তর কোরিয়ার পতাকা পরিবর্তন করা হয়েছিল।
আরো জানুন: বিশ্বের সবচেয়ে বড় ১০টি দেশ
৭. আমেরিকা
বিশ্বের অন্যতম ক্ষমতাধর দেশ হল আমেরিকা। এই দেশের পতাকায় সাদা এবং লাল রঙের মোট ১৩টি স্ট্রাইপ রয়েছে এবং বামদিকে নীল রঙের মধ্যে ৫০টি ছোট ছোট তারা রয়েছে। পতাকার এই ১৩টি স্ট্রাইপ আসলে ১৩টি ব্রিটিশ উপনিবেশকে নির্দেশ করে যারা ব্রিটিশ শাসন থেকে আমেরিকার স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিল। আর পতাকায় যে ৫০টি ছোট ছোট তারা রয়েছে তা আমেরিকার বর্তমান ৫০টি প্রদেশকে বোঝায়। এছাড়া পতাকার সাদা রঙ আমেরিকার সরলতা এবং বিশুদ্ধতাকে বোঝায়। নীল রঙ সতর্কতা এবং ন্যায়বিচারকে বোঝায় এবং লাল রঙ স্থায়িত্ব এবং বীরত্বকে বোঝায়। ১৯৬০ সালের ৪ঠা জুলাই সর্বশেষ আমেরিকার পতাকা পরিবর্তন করে হয়েছিল।
৮. রাশিয়া
বিশ্বের অন্যতম আরেকটি ক্ষমতাধর দেশ হল রাশিয়া। এই দেশের পতাকায় যে ৩টি রঙ দেখতে পাওয়া যায় তা হল সাদা, নীল এবং লাল। রাশিয়ার পতাকার রঙগুলোর অর্থ নিয়ে বিভিন্ন মতামত প্রচলিত রয়েছে। তবে এর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় মতামতটি হল এই পতাকার সাদা রঙ রাশিয়ার আভিজাত্য এবং সরলতার প্রতীক। নীল রঙ বিশ্বস্ততা, সততা, এবং বিশুদ্ধতার প্রতীক এবং লাল রঙ সাহস, উদারতা এবং ভালবাসার প্রতীক। ১৯৯৩ সালের ১১ই ডিসেম্বর রাশিয়ার বর্তমান পতাকাটি গৃহীত হয়েছিল।
৯. চীন
পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি জনসংখ্যার দেশ চীন। চীনের জাতীয় পতাকাতে লাল আয়তক্ষেত্রের ওপর ৫টি সোনালি রঙের তারা রয়েছে। চীনের জাতীয় পতাকার ডিজাইন করেছেন চীনের অর্থনীতিবিদ জেং লিয়ান্সং। তার ব্যাখ্যা অনুযায়ী, চীনের জাতীয় পতাকার সবচেয়ে বড় তারাটি চীনের কমিউনিস্ট পার্টি এর প্রতীক। বাকি ৪টি ছোট তারাগুলো ৪টি সামাজিক শ্রেণীকে বোঝায়। এই শ্রেণীগুলো হল শ্রমিক শ্রেণী, কৃষক শ্রেণী, শহুরে মধ্যবিত্ত শ্রেণী এবং জাতীয় মধ্যবিত্ত শ্রেণী। ১৯৪৯ সালের ২৭শে সেপ্টেম্বর চীনের বর্তমান পতাকাটি জাতীয় পতাকা হিসেবে গৃহীত হয়।
আরো জানুন: বিশ্বের সবচেয়ে ছোট ১০টি দেশ
১০. ভুটান
ভুটানকে বলা হয় বজ্র ড্রাগন এর দেশ। আর সেজন্যই এদেশের পতাকাতেও রয়েছে সাদা রঙের একটি বজ্র ড্রাগন। এছাড়া এদেশের পতাকাতে যে ২টি রঙ রয়েছে তা হল কমলা এবং হলুদ। আপনি লক্ষ করলে দেখবেন যে, ভুটানের জাতীয় পতাকায় যে বজ্র ড্রাগনটি আছে তার নখরে কিছু রত্ন আঁকড়ে রয়েছে যা ভুটানের সমৃদ্ধির প্রতীক। এছাড়া ভুটানের জাতীয় পতাকার হলুদ রঙ ভুটানের রাজবংশের ধর্ম নিরপেক্ষ রাজতন্ত্রকে বোঝায় এবং পতাকার কমলা রঙটি বৌদ্ধ ধর্মকে নির্দেশ করে।
এই ছিল পৃথিবীর কিছু স্বাধীন দেশের পতাকাগুলোর অজানা অর্থ। আজকের বিষয়টি (সেরা ১০) ভালো লেগে থাকলে শেয়ার করুন আপনার বন্ধুদের সাথে। পৃথিবীর এরকম (জানা-অজানা) অদ্ভুত সব অজানা তথ্য জানতে আমাদের সাথেই থাকুন।
এছাড়াও যদি আপনি নিয়মিত বিশ্বের ছোট ছোট অদ্ভুত, রহস্যময় ও আশ্চর্যজনক বিষয় সম্পর্কে জানতে চান তাহলে আমাদের সামাজিক মাধ্যমগুলোর সাথে যুক্ত থাকুন।
ফেইসবুক পেইজ:
ইউটিউব চ্যানেল:
ইনস্টাগ্রাম পেজ: The Earth Bangla
ফেইসবুক গ্রুপ:
প্রশ্নপর্ব
বাংলাদেশের পতাকার ডিজাইনার কে?
বাংলাদেশের পতাকাটির ডিজাইন করেছেন বাংলাদেশের বিখ্যাত চিত্রশিল্পী কামরুল হাসান। ১৯৭২ সালের ১৭ জানুয়ারি বাংলাদেশের এই পতাকাটি সরকারীভাবে গৃহীত হয়।
ভারতের পতাকার ডিজাইনার কে?
ভারতের জাতীয় পতাকার ডিজাইন করেছেন পিঙ্গালি ভেঙ্কাইয়া। ১৯৪৭ সালের ২২ জুলাই এই পতাকাটি ভারতের জাতীয় পতাকা হিসেবে গৃহীত হয়।
ভারতের পতাকাকে কি নামে ডাকা হয়?
ভারতের পতাকাকে অনেক সময় ত্রিরঙ্গা পতাকা নামে ডাকা হয়।
পাকিস্তানের পতাকার ডিজাইনার কে?
পাকিস্তানের জাতীয় পতাকার ডিজাইন করেছেন সৈয়দ আমীরউদ্দিন কেদওয়াই। পাকিস্তান স্বাধীনতা লাভ করার ৩ দিন পূর্বে অর্থাৎ ১৯৪৭ সালের ১১ই আগস্ট পাকিস্তানের বর্তমান পতাকাটির নকশা গৃহীত হয়েছিল।
পাকিস্তানের পতাকাকে কি নামে ডাকা হয়?
পাকিস্তানের পতাকাকে প্রায়ই পারচাম-ই-সিতারা ও হিলাল নামে ডাকা হয়। যার অর্থ হল চাঁদ ও তারা খচিত পতাকা।
জাপানকে কিসের দেশ বলা হয়?
জাপান দেশটিকে আমরা অনেকেই সূর্যোদয়ের দেশ হিসেবে চিনি। তাই জাপানকে সূর্যোদয়ের দেশ বলা হয়।
চীনের পতাকার ডিজাইনার কে?
চীনের জাতীয় পতাকার ডিজাইন করেছেন চীনের অর্থনীতিবিদ জেং লিয়ান্সং।
ভুটানকে কিসের দেশ বলা হয়?
ভুটানকে বলা হয় বজ্র ড্রাগন এর দেশ।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Please do not Enter any spam comment or Link in the comment Box