বিশ্বের শীর্ষ ১০টি ধনী দেশ
একটি দেশ আর্থিকভাবে কতটা সচ্ছল তা বোঝার উপায় হচ্ছে একটি দেশের নাগরিকের ক্রয়ক্ষমতা কতটুকু তা জানা। অর্থাৎ একজন নাগরিক সাধারণত যা অর্থ আয় করে তা দিয়ে সে কী কী কিনতে পারে সেই সম্পর্কে জানা। কিন্তু একটি দেশের পণ্যের দাম কখনোই অন্য আরেকটি দেশের সাথে পুরোপুরি মিলবে না। আর এজন্যই বিভিন্ন দেশের অর্থনীতিকে একসাথে তুলনা করার জন্য পিপিপি এর ভিত্তিতে জিডিপি হিসাব করা হয়। পিপিপি এর পূর্ণরূপ হচ্ছে Purchasing Power Parity। এটি বিভিন্ন দেশের অর্থের মূল্য তুলনা করার একটি পদ্ধতি। এই জিডিপি (পিপিপি) এর মাধ্যমেই ধনী-গরিব দেশের পার্থক্য করা হয়ে থাকে। The Earth Banglar সেরা ১০ সিরিজের আজকের পর্বে আমরা আপনাদের জানাবো জিডিপি (পিপিপি) এর ভিত্তিতে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ১০ টি দেশ সম্পর্কে।
১. লুক্সেমবার্গ
বিশ্বের সবচেয়ে ধনী হল লুক্সেমবার্গ যার মাথাপিছু আয় ১ লক্ষ ৪০ হাজার ৬৯৪ মার্কিন ডলার। মাত্র ২ হাজার ৫৮৬ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই দেশটির মোট জনসংখ্যা প্রায় ৬ লক্ষ ৪৫ হাজার। আয়তন ও জনসংখ্যা উভয় দিক থেকেই ছোট হলেও এই দেশটি উচ্চ আয় এবং নিম্ন বেকারত্বের হারের জন্য পরিচিত। পশ্চিম ইউরোপে অবস্থিত এই দেশটির অর্থনীতি মূলত ব্যাংকিং, স্টীল এবং শিল্প খাতের উপর নির্ভরশীল। দেশটিতে রয়েছে আকর্ষণীয় কর নীতি এবং ব্যবসা-বান্ধব পরিবেশ যার ফলে এখানে অসংখ্য আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। এছাড়াও দেশটির একটি সমৃদ্ধ কৃষিখাত রয়েছে। বিগত কয়েক বছর ধরে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ১০ দেশগুলোর তালিকায় অবস্থান করছে দেশটি।
২. সিঙ্গাপুর
কোনো প্রাকৃতিক সম্পদ না থাকার পরেও কঠোর পরিশ্রম এবং উদ্ভাবনী শক্তির মাধ্যমে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী দেশগুলোর তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে সিঙ্গাপুর। এশিয়া মহাদেশের অন্যতম ক্ষুদ্র এই দেশটির আয়তন মাত্র ৭৩৩ বর্গকিলোমিটার যেখানে দেশটির মোট জনসংখ্যা প্রায় ৫৬ লক্ষ ৩৭ হাজার। আয়তনের তুলনায় এত বিপুল জনসংখ্যা থাকা সত্ত্বেও দেশটির মাথাপিছু আয় ১ লক্ষ ৩১ হাজার ৫৮০ মার্কিন ডলার। সিঙ্গাপুর এর উন্নত অবকাঠামো এবং দ্রুত বর্ধনশীল পর্যটন খাতের জন্য সুপরিচিত। তবে দেশটির আয়ের মূল উৎস হল ইলেকট্রনিক্স, জৈবপ্রযুক্তি এবং রাসায়নিক দ্রব্য রপ্তানি। দেশটিতে বিদেশি কোম্পানিগুলোর বাণিজ্য নিশ্চিত করার জন্য সরকার কর্তৃক বিভিন্ন সুবিধাজনক নীতিমালা রয়েছে। আর তাই এই দেশটিতে অসংখ্য বৈদেশিক কোম্পানি ও বিনিয়োগকারীদের দেখা মেলে।
আরো জানুন: আয়তনে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ১০টি দেশ
৩. আয়ারল্যান্ড
বিশ্বের সবচেয়ে ধনী দেশগুলোর তালিকায় তৃতীয় স্থানে রয়েছে আয়ারল্যান্ড। এটি ইউরোপের উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত একটি দ্বীপ রাষ্ট্র যার মাথাপিছু আয় ১ লক্ষ ২৪ হাজার ৫৯৬ মার্কিন ডলার। দেশটির আয়তন ৭০ হাজার ২৭৩ বর্গকিলোমিটার এবং মোট জনসংখ্যা প্রায় ৫১ লক্ষ ২৩ হাজার। দেশটির অর্থনীতি বিভিন্ন ফার্মাসিউটিক্যালস, রাসায়নিক দ্রব্য, কম্পিউটার, হার্ডওয়্যার, সফটওয়্যার এবং খাদ্যপণ্য রপ্তানির ওপর নির্ভরশীল। এই দেশে কর্পোরেট ট্যাক্স কম হওয়ায় অসংখ্য মাল্টি-বিলিয়ন ডলার কোম্পানি আয়ারল্যান্ডে তাদের ব্যবসা স্থানান্তর ও বৃদ্ধি করে যা দেশটির জিডিপি এবং জনগণের জীবনযাত্রায় মান উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে।
৪. কাতার
বিশ্বের চতুর্থ ধনী দেশ হল কাতার যার মাথাপিছু আয় ১ লক্ষ ১২ হাজার ৭৮৯ মার্কিন ডলার। ২০২০ সালে এই তালিকায় শীর্ষে ছিল কাতার। ১১ হাজার ৫৮১ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই দেশটি প্রায় ২৭ লক্ষ ৯৫ হাজার মানুষের আবাস্থল। মাত্র ৫০ বছর আগেও মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশটি ছিল ছোটখাটো মৎস্যশিল্প এবং মুক্তা আহরণের উপর নির্ভরশীল একটি দেশ, কিন্তু গত দুই দশকে দেশটি তেল রপ্তানির বিশ্বকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। মূলত তেল এবং প্রাকৃতিক গ্যাস রপ্তানি কাতারের বর্তমান অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি। এছাড়াও দেশটির একটি উল্লেখযোগ্য আয় আসে এর পর্যটন খাত থেকে।
৫. সুইজারল্যান্ড
বিশ্বের সবচেয়ে ধনী দেশগুলোর তালিকায় পঞ্চম স্থানে রয়েছে সুইজারল্যান্ড। ইউরোপে অবস্থিত ৪১ হাজার ২৮৫ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই দেশটি প্রায় ৮৬ লক্ষ ৩৬ হাজার মানুষের আবাস্থল। জীবনযাত্রার উচ্চ ব্যয়, ব্যয়বহুল পণ্য ও পরিষেবা এবং সুইস ফ্রাঙ্কের অত্যন্ত উচ্চ মূল্য থাকার পরেও এই দেশটির মাথাপিছু আয় ৮৪ হাজার ৬৫৮ মার্কিন ডলার। সুইস ব্যাংকিং দেশটির অর্থনীতিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও বিভিন্ন মূল্যবান ধাতু ও রত্ন, ফার্মাসিউটিক্যালস এবং যন্ত্রপাতি রপ্তানি দেশটির জিডিপিতে অবদান রাখে। পৃথিবীর স্বর্গ নামে পরিচিত এই দেশটির একটি সমৃদ্ধ পর্যটন খাতও রয়েছে।
আরো জানুন: বিশ্বের সবচেয়ে ছোট ১০টি দেশ
৬. সংযুক্ত আরব আমিরাত
বিশ্বের ষষ্ঠ ধনী দেশ হল সংযুক্ত আরব আমিরাত। মধ্যপ্রাচ্যে অবস্থিত এই দেশটির মাথাপিছু আয় ৭৮ হাজার ২৫৫ মার্কিন ডলার। দেশটির আয়তন ৮৩ হাজার ৬০০ বর্গকিলোমিটার এবং মোট জনসংখ্যা প্রায় ৯২ লক্ষ ৮২ হাজার। পূর্বে এই দেশটি মুক্তা শিল্পের ওপর নির্ভরশীল থাকলেও বর্তমানে দেশটির অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি হল তেল এবং প্রাকৃতিক গ্যাস রপ্তানি। দেশটির সবচেয়ে জনপ্রিয় শহর হচ্ছে দুবাই যা বিশ্বজুড়ে পর্যটকদের আকর্ষণের অন্যতম কারণ। বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু ভবন বুর্জ খলিফা এই শহরেই অবস্থিত।
৭. নরওয়ে
বিশ্বের সপ্তম ধনী দেশ হল নরওয়ে যার মাথাপিছু আয় ৭৭ হাজার ৮০৮ মার্কিন ডলার। দেশটির আয়তন ৩ লক্ষ ৮৫ হাজার ২০৭ বর্গকিলোমিটার এবং মোট জনসংখ্যা প্রায় ৫৪ লক্ষ ২৫ হাজার। উত্তর ইউরোপে অবস্থিত এই নর্ডিক দেশটি ভালো জীবনযাত্রার মান, উন্নত শিক্ষা ব্যবস্থা, সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবাসহ হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট ইনডেক্সের তালিকায় বিগত কয়েক বছর ধরে শীর্ষস্থানে রয়েছে। দেশটির অর্থনীতি বিশালভাবে তেল এবং গ্যাস সম্পদ রপ্তানির ওপর নির্ভরশীল। এছাড়াও দেশটি সামুদ্রিক খাবার, জলবিদ্যুৎ, কাঠ, খনিজ এবং মিঠা পানি রপ্তানি করে থাকে।
৮. মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হল বিশ্বের অষ্টম ধনী দেশ। প্রায় ৩৩ কোটি জনসংখ্যার এই দেশটির মাথাপিছু আয় ৭৬ হাজার ২৭ মার্কিন ডলার। দেশটির আয়তন ৩৭ লক্ষ ৯৬ হাজার ৭৪২ বর্গমাইল। দেশটির বিশাল আকারের অর্থনীতি এবং জিডিপি বৃদ্ধির উচ্চ হার অন্য যেকোনো দেশের তুলনায় অতুলনীয়। দেশটি তেল, গ্যাস, কম্পিউটার, ফার্মাসিউটিক্যালস, চিকিৎসা বিজ্ঞান, অ্যারোস্পেস, মিলিটারি টেকনোলজি, খাদ্যপণ্য ও পানীয়সহ বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে থাকে। বিশ্বের প্রায় ২০০ টিরও বেশি দেশের সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যিক সম্পর্ক রয়েছে।
আরো জানুন: বিশ্বের সবচেয়ে বড় ১০টি অর্থনীতির দেশ
৯. ব্রুনাই
বিশ্বের সবচেয়ে ধনী দেশগুলোর তালিকায় নবম স্থানে রয়েছে ব্রুনাই যার মাথাপিছু আয় ৭৪ হাজার ৯৫৩ মার্কিন ডলার। মাত্র ৫ হাজার ৭৬৫ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই দেশটির মোট জনসংখ্যা প্রায় ৪ লক্ষ ৬০ হাজার। এই দেশের অর্থনীতি প্রায় সম্পূর্ণরূপে অপরিশোধিত তেল এবং প্রাকৃতিক গ্যাস রপ্তানির ওপর নির্ভর করে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় অবস্থিত এই দেশের নাগরিকদের বিনামূল্যে শিক্ষা ও চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়। একটি সমীক্ষা অনুসারে, ব্রুনাইয়ে প্রতি ১০০০ মানুষের মধ্যে ৭২১ জনেরই নিজস্ব গাড়ি রয়েছে।
১০. সান মারিনো
বিশ্বের সবচেয়ে ধনী দেশগুলোর তালিকায় দশম স্থানে রয়েছে সান মারিনো। মাত্র ৩৩ হাজার জনসংখ্যার এই দেশটির মাথাপিছু আয় ৭০ হাজার ১৩৯ মার্কিন ডলার। দেশটির অর্থনীতি পর্যটন, ব্যাংকিং, সিরামিক, টাইলস, নির্মাণ সামগ্রী, আসবাবপত্র, পোশাক, কাপড়, রঙ, মানসম্পন্ন স্পিরিট এবং ওয়াইন উৎপাদন ও রপ্তানির উপর অনেক বেশি নির্ভর করে। বিশ্বের অন্যতম ধনী দেশ হওয়ার পাশাপাশি সান মারিনো বিশ্বের সবচেয়ে ছোট দেশগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য। ইউরোপে অবস্থিত এই দেশটির আয়তন মাত্র ৬১ বর্গকিলোমিটার।
তো এই ছিল বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ১০টি দেশের তালিকা। আজকের মতো আর কোন কোন বিষয়ের উপর এরকম তালিকা দেখতে চান তা আমাদের অবশ্যই কমেন্ট করে জানান। আজকের বিষয়টি (সেরা ১০) ভালো লেগে থাকলে শেয়ার করুন আপনার বন্ধুদের সাথে। পৃথিবীর এরকম (জানা-অজানা) অদ্ভুত সব অজানা তথ্য জানতে আমাদের সাথেই থাকুন।
এছাড়াও যদি আপনি নিয়মিত বিশ্বের ছোট ছোট অদ্ভুত, রহস্যময় ও আশ্চর্যজনক বিষয় সম্পর্কে জানতে চান তাহলে আমাদের সামাজিক মাধ্যমগুলোর সাথে যুক্ত থাকুন।
ফেইসবুক পেইজ:
ইউটিউব চ্যানেল:
ইনস্টাগ্রাম পেজ: The Earth Bangla
ফেইসবুক গ্রুপ:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Please do not Enter any spam comment or Link in the comment Box