বিশ্বের বৃহত্তম ১০টি অর্থনীতি

বর্তমানে পৃথিবীতে মোট ২০০ টিরও অধিক দেশ রয়েছে যার মধ্যে মাত্র ১০টি দেশের কাছেই পৃথিবীর মোট সম্পদের অর্ধেকেরও বেশি সম্পদ রয়েছে। এই দেশগুলোকে জিডিপির আকারে বিশ্বের সবচেয়ে বৃহত্তম অর্থনৈতিক শক্তি বা বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ বলা হয়। জিডিপি হলো কোন দেশের অভ্যন্তরে দেশি ও বিদেশি নাগরিকদের প্রতিবছর উৎপাদিত সব দ্রব্য ও সেবার মোট আর্থিক মূল্য। সর্বশেষ আইএমএফ এর দেয়া ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুকের রিপোর্ট অনুযায়ী শীর্ষ ১০ অর্থনৈতিক শক্তির হাতেই রয়েছে বিশ্বের মোট অর্থনীতির ৬৮ ভাগ ও বাকি ১৮০ দেশের হাতে রয়েছে মাত্র ৩২ ভাগ। The Earth Bangla এর সেরা ১০ সিরিজের আজকের পর্বে আমরা জানাবো বিশ্বের সবচেয়ে বড় ১০টি অর্থনীতির দেশ সম্পর্কে।

১. মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র

উত্তর আমেরিকায় অবস্থিত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ১৮৭১ সাল থেকে ১৪৯ বছর ধরে বিশ্বের এক নম্বর অর্থনীতি হয়ে আছেযুক্তরাষ্ট্রের কারেন্সি ডলার হল বিশ্বের প্রধান রিজার্ভ কারেন্সি। আয়তন এবং জনসংখ্যার দিক থেকেও এটি বিশ্বের তৃতীয় স্থানে রয়েছে। বর্তমানে দেশটির জিডিপি'র আকার প্রায় ২৫ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার যা বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই সাফল্যের পিছনে রয়েছে বেশ শক্তিশালী উদ্যোক্তা পরিকাঠামো, কঠোর পরিশ্রমী জীবনযাত্রা ও দীর্ঘ কার্যদিবস। দেশটির অর্থনীতি উন্মুক্ত হওয়ায় এখানে ব্যবসায়িক বিনিয়োগ ও সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগের (FDI) সুবিধা আছে। তাই, এই দেশকে বিশ্বের অন্যতম ভূ-রাজনৈতিক শক্তিও বলা হয়।

২. চীন

চীন বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশের পাশাপাশি বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনৈতিক শক্তি। চীনের রাজধানী নাম হলো বেইজিং এবং চীনকে বলা হয় পৃথিবীর কারখানা। কারন চীন বিশ্বের বৃহত্তম রপ্তানিকারক দেশ। কয়েক বছর আগে পৰ্যন্ত দেশটির অর্থনীতি খুব বেশি উন্নত ছিল না। কিন্তু বর্তমানে সারা বিশ্বের বাজারে চীনের জিনিসপত্রের আধিপত্য বিস্তার করে চলেছে। বর্তমান সময়ে চীনের মোট জিডিপি হল প্রায় ২০ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার যা বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি। বিভিন্ন অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে ২০২৮ সালের মধ্যে চীনের অর্থনীতি আমেরিকাকে ছাড়িয়ে যেতে পারে। সাম্প্রতিককালে, এই দেশটি বিশ্ব অর্থনীতিতে প্রভাবশালী ভূমিকা পালন করছে।

আরো জানুন: আয়তনে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ১০টি দেশ

৩. জাপান

জাপান পূর্ব এশিয়ার একটি দ্বীপ রাষ্ট্র যা পৃথিবীর বুকে সূর্যোদয়ের দেশ নামে পরিচিত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ধাক্কা সামলে বর্তমানে দেশটি বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি। ১৯৪৫ সালে যখন আমেরিকা জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে পারমাণবিক বোমা ফেলেছিল, তখন জাপানের পুরো আর্থসামাজিক অবস্থা ধ্বংস হয়ে যায়। পরবর্তীতে বিংশ্ব শতাব্দীর শেষভাগে দেশটির টেকনোলজি, ইলেকট্রনিক পণ্য ও অটোমোটিভ ইন্ডাস্ট্রির দ্রুত বিকাশ ঘটে  যা জাপানের অর্থনীতিকে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত করতে সাহায্য করেছে। বর্তমান সময়ে জাপানের মোট জিডিপি হল প্রায় ৫ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত প্রযুক্তির দেশগুলির তালিকায় শীর্ষে রয়েছে জাপান।

৪. জার্মানি

জার্মানি আনুষ্ঠানিকভাবে ফেডারেল রিপাবলিক অফ জার্মানি নামে পরিচিত যা ইউরোপের বৃহত্তম এবং বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতি। এটি ইউরোপ মহাদেশের দ্বিতীয় জনবহুল এবং আয়তনে সপ্তম বৃহত্তম দেশ। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের দিকে যাচ্ছে এমন অর্থনীতির মধ্যে জার্মানি সবচেয়ে এগিয়ে। বর্তমান সময়ে জার্মানির মোট জিডিপি হল প্রায় ৪.২ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারজার্মানির জিডিপির ৭০ শতাংশ তাদের দেশীয় পণ্যের উপর নির্ভরশীল। তবে গাড়ি, ভারী যন্ত্রপাতি, গৃহসামগ্রী আর রাসায়নিক পণ্য উৎপাদনে জার্মানি সেরা। এছাড়াও পর্যটনের দিক দিয়েও জার্মানি বিশ্বের শীর্ষস্থানে রয়েছে।

৫. ভারত

ভারত বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্র ও দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জনসংখ্যার দেশ হিসেবে পৃথিবীজুড়ে বিখ্যাত। দেশটিতে ২৮ টি রাজ্য ও ৮ টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল রয়েছে। বিংশ শতাব্দীর প্রথমভাগে ভারত কৃষিপ্রধান দেশ হিসেবে পরিচিত ছিল। তবে বর্তমানে ভারতের মোট জিডিপির ৬৫% আসে সেবা খাত থেকে। বর্তমান সময়ে ভারতের মোট জিডিপি হল প্রায় ৩.৪ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার যা ভারতকে বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত করেছে। যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সকে টপকে ২০২০ সালে ৫ম স্থানে উঠে আসে এই দেশটি। বর্তমানে ভারত বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ক্রমবর্ধমান অর্থনীতির মধ্যে একটি। তাই ২০২৫ সাল নাগাদ ভারতের অর্থনীতি জার্মানিকে ছাড়িয়ে যেতে পারে। এছাড়াও বিভিন্ন অর্থনীতিবিদদের মতে, ২০৫০ সালের মধ্যে ভারত বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনৈতিক শক্তি হয়ে উঠতে পারে।

আরো জানুন: বিশ্বের সবচেয়ে ছোট ১০টি দেশ

৬. যুক্তরাজ্য

যুক্তরাজ্য মূলত চারটি সাংবিধানিক রাষ্ট্র ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড, ওয়েলস এবং উত্তর আয়ারল্যান্ডের সমন্বয়ে গঠিত একটি দেশ। এই দেশটি ইউকে বা গ্রেট ব্রিটেন নামেও পরিচিত। একসময় এই দেশটি বিশ্বের প্রধান অর্থনৈতিক শক্তি ছিল তবে বর্তমানে এটি ইউরোপ মহাদেশের দ্বিতীয় ও বিশ্বের ষষ্ঠ বৃহত্তম অর্থনীতি। বর্তমান সময়ে যুক্তরাজ্যের মোট জিডিপি হল প্রায় ৩.২ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার যার ৭৫ ভাগের যোগান দেয় দেশটির সেবা খাত। বিশেষ করে এখানকার অর্থনীতি ফিন্যান্স, বীমা ও ব্যবসায়িক পরিষেবার উপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল।

৭. ফ্রান্স

ফ্রান্স ঐতিহাসিক এবং সাংস্কৃতিক দিক থেকে পশ্চিমা বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জাতিগুলোর একটি। বর্তমানে এটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের দ্বিতীয় বৃহত্তম এবং বিশ্বের সপ্তম বৃহত্তম অর্থনীতি। দেশটি তার ওয়াইন, অত্যাধুনিক খাবার ও প্যারিস শহরের জন্য বিখ্যাত। এছাড়াও দেশটির রাজধানী প্যারিসের আইফেল টাওয়ার, ফ্যাশন হাউস, ক্লাসিক্যাল আর্ট মিউজিয়াম এবং স্মৃতিস্তম্ভের ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে। তাই পর্যটন ফ্রান্সের অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রাখে। বর্তমান সময়ে ফ্রান্সের মোট জিডিপি হল প্রায় ২.৮ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার। এছাড়াও কৃষি দ্রব্য উৎপাদনে ফ্রান্স ইউরোপের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দেশ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের উৎপাদিত কৃষিপণ্যের এক তৃতীয়াংশ একাই সরবরাহ করে ফ্রান্স।

৮. কানাডা

আয়তনের দিক থেকে পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ কানাডা। অন্যান্য উন্নতদেশগুলির মত কানাডার অর্থনীতির সিংহভাগ সেবামূলক শিল্প নিয়ে গঠিত। প্রায় তিন চতুর্থাংশ কানাডাবাসী কোন না কোন সেবা শিল্পের সাথে যুক্ত আছেন। দেশটি OECD এবং G8 গ্রুপের সদস্য। আমেরিকার সাথে এই দেশের মুক্ত বাণিজ্য সম্পর্ক রয়েছে এবং প্রতি বছর এই দেশের মোট রপ্তানির প্রায় ৭৫% ভাগ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হয়। বর্তমান সময়ে কানাডার মোট জিডিপি হল প্রায় ২.২ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার যা দেশটিকে বিশ্বের অষ্টম বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত করেছে। কাঠ ও খনিজ তেল আহরণ কানাডার প্রধান দুইটি ভারী শিল্প। এছাড়াও দেশটিতে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম তেলের খনি রয়েছে।

আরো জানুন: বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল ১০টি শহর

৯. রাশিয়া

রাশিয়া সরকারিভাবে রুশ ফেডারেশন নামে পরিচিত যার পূর্ব নাম ছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন। আয়তনে এটি বিশ্বের বৃহত্তম দেশ। এটি বিশ্বের সর্বোচ্চ তেল ও গ্যাস উৎপাদনকারী দেশ। এছাড়াও রাশিয়া একটি পরাক্রমশালী রাষ্ট্র যেটি জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য। বর্তমান সময়ে রাশিয়ার মোট জিডিপি প্রায় ২.১ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার যা দেশটিকে বিশ্বের নবম বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত করেছে। রাশিয়ার অর্থনীতির বিশাল অংশই প্রাকৃতিক সম্পদের উপর নির্ভরশীল। প্রাকৃতিক গ্যাস, তেল, কয়লা ইত্যাদি খনিজ সম্পদের বিশাল ভান্ডার রাশিয়ার অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রাখে। ২০০২ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন রাশিয়াকে মুক্ত বাজার অর্থনীতি হিসেবে চিহ্নিত করে।

১০. ইতালি

ইতালি বিশ্বের সমৃদ্ধ দেশগুলির মধ্যে অন্যতম এবং ইউরোপের অন্যতম শক্তিশালী একটি দেশ। এটি একাধারে EU, G7, G20, ও OECD এর গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগে ইতালি প্রাথমিকভাবে একটি কৃষি প্রধান অর্থনীতি ছিল এবং কৃষি খাতের উপর নির্ভর করত। কিন্তু আজ এটি বিশ্বের অন্যান্য দেশে যন্ত্রপাতি, যানবাহন, খাদ্য, পোশাক, পণ্য ইত্যাদি রপ্তানি করে থাকে। বর্তমানে প্রায় ২ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার জিডিপি নিয়ে ইতালি ইউরোপের পঞ্চম বৃহত্তম ও বিশ্বের দশম বৃহত্তম অর্থনীতি। এই দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি মূলত ভোগ্যপণ্য শিল্পের দ্বারাই নিয়ন্ত্রিত হয়। তবে পর্যটন শিল্প এই দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।

তো এই ছিল বিশ্বের সবচেয়ে বড় ১০টি অর্থনৈতিক শক্তিশালী দেশের তালিকা। আজকের মতো আর কোন কোন বিষয়ের উপর এরকম তালিকা দেখতে চান তা আমাদের অবশ্যই কমেন্ট করে জানান। আজকের বিষয়টি (সেরা ১০) ভালো লেগে থাকলে শেয়ার করুন আপনার বন্ধুদের সাথে। পৃথিবীর এরকম (জানা-অজানা) অদ্ভুত সব অজানা তথ্য জানতে আমাদের সাথেই থাকুন।

এছাড়াও যদি আপনি নিয়মিত বিশ্বের ছোট ছোট অদ্ভুত, রহস্যময় ও আশ্চর্যজনক বিষয় সম্পর্কে জানতে চান তাহলে আমাদের সামাজিক মাধ্যমগুলোর সাথে যুক্ত থাকুন।

ফেইসবুক পেইজ: The Earth Bangla

ইউটিউব চ্যানেল: The Earth Bangla

ইনস্টাগ্রাম পেজ: The Earth Bangla

ফেইসবুক গ্রুপ: The Earth Bangla Family

Post a Comment

Please do not Enter any spam comment or Link in the comment Box

নবীনতর পূর্বতন