আফ্রিকার শীর্ষ ১০টি ক্ষুদ্রতম দেশ
আয়তন ও জনসংখ্যার দিক থেকে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মহাদেশ আফ্রিকা। প্রায় ৩ কোটি ৩ লক্ষ ৭০ হাজার বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই মহাদেশটি পৃথিবীর মোট স্থলভাগের ২০% জুড়ে রয়েছে। বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি এবং অঢেল খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ এই মহাদেশটিতে মোট ৫৪ টি দেশ রয়েছে যার অধিকাংশ আয়তনে বড় হলেও বেশ কিছু ছোট দেশ রয়েছে । The Earth Banglar সেরা ১০ সিরিজের আজকের পর্বে আমরা আপনাদের জানাবো আয়তনে আফ্রিকার সবচেয়ে ছোট ১০টি দেশ সম্পর্কে।
১০. বুরুন্ডি
বুরুন্ডি পূর্ব আফ্রিকায় অবস্থিত একটি স্থলবেষ্টিত দেশ। মাথাপিছু জিডিপির দিক থেকে এটি বিশ্বের সবচেয়ে দরিদ্র দেশ যেখানে ব্যাপক দারিদ্র্য, দুর্নীতি, বেকারত্ব, স্বাস্থ্যসেবার অভাব এবং নিরক্ষরতার মতো সমস্যা বিদ্যমান। আফ্রিকার দশম ক্ষুদ্রতম এই দেশটির আয়তন ২৭ হাজার ৮৩৪ বর্গকিলোমিটার। ১৯৬২ সালে স্বাধীনতা লাভের আগ পর্যন্ত বুরুন্ডি ছিল বেলজিয়ামের একটি উপনিবেশ। স্বাধীনতার পর থেকে দেশটিতে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা এবং সহিংসতা চলে আসছে যা দেশটির অবস্থার অবনতির প্রধান কারণ। বর্তমানে বুরুন্ডিতে দুইটি রাজধানী রয়েছে - গিতেগা এবং বুজুম্বুরা। দেশটির জনসংখ্যা প্রায় ১ কোটির অধিক যার বেশিরভাগই কৃষিজীবী।
৯. রুয়ান্ডা
রুয়ান্ডা আফ্রিকার মধ্যভাগে অবস্থিত একটি স্থলবেষ্টিত দেশ যার আয়তন ২৬ হাজার ৩৩৮ বর্গকিলোমিটার। উর্বর ও পাহাড়ী ভূমির কারণে এই দেশটিকে Land of a thousand hills বা হাজার পাহাড়ের দেশ বলা হয়। এটি আফ্রিকার নবম ক্ষুদ্রতম এবং আফ্রিকার সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ দেশগুলির মধ্যে একটি। দেশটির রাজধানী কিগালি এবং জনসংখ্যা প্রায় ১ কোটির অধিক। ১৯৬২ সালে বেলজিয়াম থেকে স্বাধীনতা লাভ করার সময় রুয়ান্ডা ছিল আফ্রিকার অন্যতম দরিদ্র দেশ। তবে ২০০০ এর দশকের শুরু থেকে রুয়ান্ডার অর্থনীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন আসে যা দেশটির মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত করে। বর্তমানে রুয়ান্ডা আফ্রিকার অন্যতম দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশ।
আরো জানুন: এশিয়ার সবচেয়ে ধনী ১০টি দেশ
৮. জিবুতি
জিবুতি আফ্রিকার পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত একটি ছোট দেশ। এটি আফ্রিকার অষ্টম ক্ষুদ্রতম দেশ যার আয়তন ২৩ হাজার ২০০ বর্গকিলোমিটার। দেশটির রাজধানী ও বৃহত্তম শহরের নামও জিবুতি। জিবুতি দেশটি লোহিত সাগর ও ভারত মহাসাগরের সংযোগস্থলে অবস্থিত। এই অবস্থান দেশটিকে আন্তর্জাতিকভাবে একটি গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ও বাণিজ্যিক কেন্দ্রতে পরিণত করেছে। দেশটিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, জাপান এবং ইতালিসহ বেশ কিছু দেশের সামরিক ঘাঁটি রয়েছে। এছাড়া দেশটির বন্দরগুলো মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা এবং এশিয়ার মধ্যে পণ্য পরিবহনের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। বর্তমানে দেশটির জনসংখ্যা প্রায় ৯ লক্ষ এবং এদের অধিকাংশ বন্দর নগরীগুলোতে বাস করে।
৭. ইসোয়াতিনি
ইসোয়াতিনি আফ্রিকার দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত একটি রাজতান্ত্রিক দেশ যার সরকারি নাম কিংডম অফ ইসোয়াতিনি। দেশটি সোয়াজিল্যান্ড নামে অধিক পরিচিত। ১৭ হাজার ৩৬৪ বর্গকিলোমিটার আয়তন নিয়ে দেশটি আফ্রিকার সপ্তম ক্ষুদ্রতম দেশ যার জনসংখ্যা প্রায় ১২ লক্ষ। ইসোয়াতিনির রাজধানী দুইটি - এম্বাবানে এবং লোবাম্বা। ১৯৬৮ সালে এই দেশটি ব্রিটিশ শাসন থেকে স্বাধীনতা লাভ করে। তবে স্বাধীনতার এত বছর পরেও ইসোয়াতিনি আফ্রিকার সবচেয়ে দরিদ্র দেশগুলোর একটি যেখানে বেকারত্ব, স্বাস্থ্যসেবার অভাব এবং নিরক্ষরতার মতো সমস্যা রয়েছে। দেশটিতে এইডস এবং যক্ষ্মা রোগ ব্যাপকভাবে বিস্তৃত। ২০২১ সালে ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের একটি সমীক্ষা অনুযায়ী, বিশ্বের সবচেয়ে কম আয়ুর দেশের তালিকায় ইসোয়াতিনির অবস্থান ৭ম যেখানে একজন সাধারণ মানুষের গড় আয়ু মাত্র ৫৭ বছর।
৬. গাম্বিয়া
গাম্বিয়া আফ্রিকার পশ্চিম উপকূলে অবস্থিত একটি ছোট দেশ যার আয়তন ১১ হাজার ৩০০ বর্গকিলোমিটার। এটি আফ্রিকা মহাদেশের মূল ভূখণ্ডের সবচেয়ে ছোট দেশ যেখানে প্রায় ২৪ লক্ষ মানুষের বসবাস। গাম্বিয়া দেশটির নাম এসেছে গাম্বিয়া নদী থেকে। এই নদীটি দেশটির মধ্যভাগ দিয়ে প্রবাহিত হয়ে আটলান্টিক মহাসাগরে পতিত হয়। আফ্রিকার ষষ্ঠ ক্ষুদ্রতম এই দেশটির রাজধানী বাঞ্জুল তবে এর বৃহত্তম শহরগুলো হল সেরেকুন্ডা এবং ব্রিকামা। গাম্বিয়ার অর্থনীতি কৃষি, মাছ ধরা এবং পর্যটন শিল্পের ওপর নির্ভরশীল এবং দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৭০% কৃষিক্ষেত্রে নিযুক্ত। এছাড়াও দেশটির ৫৩% জনসংখ্যা এখনও দারিদ্রসীমার নিচে বাস করে।
আরো জানুন: এশিয়ার সবচেয়ে ধনী ১০টি দেশ
৫. কেপ ভার্দে
কেপ ভার্দে আফ্রিকা মহাদেশের পশ্চিম উপকূলের কাছে অবস্থিত একটি দ্বীপ রাষ্ট্র যা আফ্রিকার পঞ্চম ক্ষুদ্রতম দেশ। আফ্রিকার এই দ্বীপটি পঞ্চদশ শতকে সর্বপ্রথম পর্তুগিজরা আবিষ্কার করে এবং তখন থেকেই এখানে মানব বসতি স্থাপন শুরু হয়। বর্তমানে দেশটির আয়তন ৪ হাজার ৩৩ বর্গকিলোমিটার। দেশটির বৃহত্তম শহর ও রাজধানী প্রায়া এবং জনসংখ্যা প্রায় ৫ লক্ষ। কেপ ভার্দে ১০টি বড় দ্বীপ এবং কিছু ছোট দ্বীপ নিয়ে গঠিত। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় দ্বীপটি হল সান্তিয়াগো। কেপ ভার্দের অর্থনীতি মূলত কৃষি এবং মাছ ধরার উপর নির্ভরশীল। এছাড়াও দেশটির একটি সমৃদ্ধ পর্যটন খাত রয়েছে।
৪. কোমোরোস
কোমোরোস দক্ষিণ-পূর্ব আফ্রিকার তিনটি দ্বীপ নিয়ে গঠিত একটি দ্বীপ রাষ্ট্র। এটি ভারত মহাসাগরের মোজাম্বিক চ্যানেলের উত্তর প্রান্তে অবস্থিত। প্রায় ২ হাজার ২৩৫ বর্গকিলোমিটার আয়তন নিয়ে কোমোরোস বর্তমানে আফ্রিকার চতুর্থ ক্ষুদ্র দেশ। দেশটির রাজধানী এবং বৃহত্তম শহর মোরোনি। ১৯৭৫ সালে এই দেশটি ফ্রান্স থেকে স্বাধীনতা লাভ করে। দেশটির বর্তমান জনসংখ্যা প্রায় সাড়ে ৮ লক্ষ যার অধিকাংশ কৃষিকাজে নিযুক্ত। দেশটির প্রধান রপ্তানি পণ্যগুলির মধ্যে রয়েছে কফি, ভ্যানিলা এবং লবঙ্গ। তবে দেশটির অর্থনীতি বেশ কিছু সমস্যার সম্মুখীন। এর মধ্যে রয়েছে দারিদ্র্য, বেকারত্ব এবং বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ।
৩. মরিশাস
মরিশাস আফ্রিকা মহাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলে অবস্থিত একটি দ্বীপ রাষ্ট্র। এটি আফ্রিকার তৃতীয় ক্ষুদ্রতম দেশ যার আয়তন প্রায় ২ হাজার ৪০ বর্গকিলোমিটার। দেশটির প্রধান সমুদ্র বন্দর ও রাজধানী পোর্ট লুইস। প্রায় ১২ লাখ জনসংখ্যার এই দেশের ৬৭% ভারতীয় বংশোদ্ভূত। মূলত ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক আমলে ভারত থেকে বিপুল সংখ্যক শ্রমিককে মরিশাসে কাজ করার জন্য নিয়ে আসা হতো। আর এভাবেই মরিশাসে ভারতীয়দের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। বর্তমানে মরিশাস আফ্রিকার একমাত্র দেশ যেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনসংখ্যা হিন্দু ধর্মাবলম্বী। হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট ইনডেক্স বা HDI সুচকে মরিশাস আফ্রিকার সবচেয়ে উন্নত দেশ। দেশটির একটি সমৃদ্ধ অর্থনীতি রয়েছে ফলে দেশটির জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নত। মরিশাস তার প্রাকৃতিক সম্পদ, সংস্কৃতি এবং ক্রমবর্ধমান পর্যটন শিল্পের উপর ভিত্তি করে একটি স্থিতিশীল এবং সমৃদ্ধ দেশ হয়ে উঠেছে।
আরো জানুন: এশিয়ার সবচেয়ে ধনী ১০টি দেশ
২. সাঁউ তোমে ও প্রিন্সিপে
মাত্র ৯৬৪ বর্গকিলোমিটার আয়তন নিয়ে সাঁউ তোমে ও প্রিন্সিপে আফ্রিকার দ্বিতীয় ক্ষুদ্রতম দেশ। এটি মধ্য আফ্রিকার পশ্চিম নিরক্ষীয় উপকূলে গিনি উপসাগরের মধ্যে অবস্থিত একটি দ্বীপ রাষ্ট্র যা পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষের কাছেই অজানা। সাঁউ তোমে এবং প্রিন্সিপে নামক দুটি প্রধান দ্বীপ নিয়ে দেশটি গঠিত। সর্বপ্রথম ১৫ শতকে পর্তুগিজ অভিযাত্রীরা এই দ্বীপ দুটি আবিষ্কার করে এবং তখন থেকে এখানে জনবসতি গড়ে উঠতে শুরু করে। ছোট এই দেশটির বর্তমান জনসংখ্যা ২ লক্ষের অধিক। দেশটির রাজধানী এবং বৃহত্তম শহর হল সাঁউ তোমে। বর্তমানে এটি একটি উন্নয়নশীল দেশ যার অর্থনীতি কৃষিনির্ভর। তবে দারিদ্র্যতা এখনও দেশটির একটি বড় সমস্যা।
১. সেশেলস
সেশেলস আফ্রিকা মহাদেশের পূর্ব উপকূলে অবস্থিত একটি দ্বীপ রাষ্ট্র যা আয়তনে আফ্রিকার সবচেয়ে ছোট দেশ। ভারত মহাসাগরের ১১৫ টি দ্বীপ নিয়ে গঠিত এই দেশটির আয়তন মাত্র ৪৫৭ বর্গকিলোমিটার। তবে এর মধ্যে বেশিরভাগ দ্বীপ জনবসতিহীন। দেশটির রাজধানী ও বৃহত্তম শহর ভিক্টোরিয়া। মাত্র ১ লক্ষ জনসংখ্যা এই দেশটি আফ্রিকার সবচেয়ে কম জনসংখ্যার দেশ, পাশাপাশি এটি মাথাপিছু আয়ের ভিত্তিতে আফ্রিকার শীর্ষ ধনী দেশগুলোর মধ্যে একটি। হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট ইনডেক্স বা HDI সূচকে সেশেলস আফ্রিকার সবচেয়ে উন্নত দেশের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। দেশটির অর্থনীতি অনেকাংশে পর্যটন শিল্পের উপর নির্ভরশীল। এছাড়া কৃষিকাজ এবং মাছ ধরা সেশেলসের অর্থনীতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ খাত।
এছাড়াও যদি আপনি নিয়মিত বিশ্বের ছোট ছোট অদ্ভুত, রহস্যময় ও আশ্চর্যজনক বিষয় সম্পর্কে জানতে চান তাহলে আমাদের সামাজিক মাধ্যমগুলোর সাথে যুক্ত থাকুন।
ফেইসবুক পেইজ:
ইউটিউব চ্যানেল:
ইনস্টাগ্রাম পেজ: The Earth Bangla
ফেইসবুক গ্রুপ:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Please do not Enter any spam comment or Link in the comment Box