​বিশ্বের অদ্ভুত কিছু প্রাকৃতিক বিস্ময়

আমাদের এই পৃথিবীতে এমন অনেক প্রাকৃতিক বিস্ময় রয়েছে যা প্রতিনিয়ত আমাদের মুগ্ধ করে। যেমন আগুনের জলপ্রপাত, সরলরৈখিক রংধনু, গোলাপি বর্ণের হ্রদ, বর্গাকৃতির ঢেউ! শুনতে অবিশ্বাস্য মনে হলেও এসব চোখ ধাঁধানো অদ্ভুত প্রাকৃতিক সৃষ্টির অস্তিত্ব রয়েছে। The Earth Banglar Amazing Facts সিরিজের সপ্তম পর্বে আজ পৃথিবীর এমনই অবাক করা কিছু প্রাকৃতিক বিস্ময় নিয়ে আমাদের আজকের পর্ব।

প্রাকৃতিক বিস্ময় ১

আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়ায় ইয়োসেমিটি ন্যাশনাল পার্কে Horsetail Fall নামক একটি জলপ্রপাত রয়েছে। প্রতিবছর ফেব্রুয়ারি মাসে সেখানে গেলে আপনি এক অলৌকিক দৃশ্য দেখতে পাবেন। আপনার মনে হবে যেন আপনি পাহাড়ের গা বেয়ে আগুন পড়তে দেখছেন! এই বিশেষ কারণে জলপ্রপাতটির অন্য আরেকটি নাম হল Yosemite Firefall. কিন্তু আসলেই কি পাহাড়ের গা বেয়ে আগুন পড়তে থাকে? না, প্রকৃতপক্ষে এগুলো আগুন নয়। এগুলো পানি। মূলত সূর্যাস্তের সময় এই জলপ্রপাতটির ওপর সূর্যের আলো পতিত হয় যার কারণে পানির রং কমলা বা লাল রঙের দেখায়। এটিকেই Firefall বা অগ্নিপ্রপাত নাম দেওয়া হয়েছে। 

প্রাকৃতিক বিস্ময় ২

কানাডার ভ্যানকুভার শহরে সিলভিয়া হোটেল নামক একটি হোটেল রয়েছে। হোটেলটির বাইরের দেয়াল জুড়ে লেগে রয়েছে ভার্জিনিয়া ক্রিপার গাছ। এই গাছগুলোর প্রতি ঋতুতে রং পরিবর্তিত হয়। কখনো লাল, কখনো সবুজ, কখনো হলুদ, আবার কখনো বা গোলাপি! হোটেলটি দেখলে মনে হয় যেন গল্পের বই থেকে বেরিয়ে আসা কোনো রহস্যময় বাড়ি!

Colorful Hotel
সিলভিয়া হোটেল

প্রাকৃতিক বিস্ময় ৩

পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়াবহ সব প্রাকৃতিক দুর্যোগ গুলোর মধ্যে টর্নেডো উল্লেখযোগ্য। টর্নেডো বিভিন্ন আকৃতির হতে পারে, আবার বিভিন্ন ধরনেরও হতে পারে। তবে সবচেয়ে বিরল ও ভয়ঙ্কর ধরনের টর্নেডো হল ফায়ার টর্নেডো। সাধারণত ফায়ার টর্নেডো বন এবং মরুভূমি অঞ্চলে ঘটে। যখন প্রবল বেগে বায়ু আগুনের সংস্পর্শে আসে তখন এই টর্নেডোর সৃষ্টি হয়। সচরাচর এই আগুন ১০-৫০ মিটার লম্বা হয় এবং মাত্র কয়েক মিনিট পর্যন্ত স্থায়ী হয়। তবে কখনো কখনো আগুনের ভয়াবহতা দীর্ঘ সময় পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। ফায়ার টর্নেডোকে ফায়ার ডেভিল নামেও ডাকা হয় কেননা অনেকেই এই ধরনের টর্নেডোকে শয়তানের কান্ড হিসেবে অভিহিত করেন।

আরো জানুন: পৃথিবীর নতুন সপ্তম আশ্চর্য

প্রাকৃতিক বিস্ময় ৪

বুলগেরিয়ায় একটি গুহা আছে যার নাম Prohodna। এই গুহাটিতে দর্শনার্থীরা ভীর জমান প্রাকৃতিক নিদর্শন দেখার জন্য। কিন্তু সবচেয়ে আকর্ষণীয় নিদর্শনটি হল গুহার উপরে থাকা দুটি সমান আকারের গর্ত। ভরা পূর্ণিমায় এই গর্ত দুটির নিচে দাঁড়িয়ে যখন আপনি চাঁদ দেখবেন তখন মনে হবে যেন দুটি চোখ আপনার দিকে তাকিয়ে রয়েছে। এই নিদর্শনের ভিত্তিতেই গর্ত দুটির নাম রাখা হয়েছে The Eyes of God।

the eyes of god bulgaria
Prohodna গুহা

প্রাকৃতিক বিস্ময় ৫

রোমানিয়ায় রয়েছে এক অদ্ভুত সুন্দর জলপ্রপাত যার নাম বিগার ফলস। শৈবাল দ্বারা আবৃত এই দৃষ্টিনন্দন জলপ্রপাতটি রোমানিয়ার অন্যতম সেরা দর্শনীয় স্থান। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে অতিরিক্ত শৈবালের ওজনের কারণে ২০২১ সালে এই জলপ্রপাতের কিছু অংশ ভেঙে পড়ে।

প্রাকৃতিক বিস্ময় ৬

আমরা সবাই জানি, রংধনু দেখতে গোলাকার হয়। কিন্তু এই ধারণাটি সম্পূর্ণ সঠিক নয়। রংধনু কেবল গোলাকার নয়, সরলরৈখিকও হতে পারে! সাধারণত গোলাকৃতির রংধনুর ক্ষেত্রে সূর্যের আলো পানির কণায় প্রতিসরিত হয়। অন্যদিকে সরলরৈখিক রংধনুর ক্ষেত্রে সূর্যের আলো সরাসরি বরফ কণায় প্রতিসরিত হয়। ফলে এ ধরনের প্রতিসরণে রংধনুর আকৃতি সোজা দেখায়। সরলরৈখিক রংধনুর ইংরেজিতে নাম দেওয়া হয়েছে Fire Rainbow

আরো জানুন: বিশ্বের অজানা ও অদ্ভুত ১০টি তথ্য

প্রাকৃতিক বিস্ময় ৭

সাইবেরিয়ার একটি বিখ্যাত হ্রদ হচ্ছে বার্লিনস্কয়ি হ্রদ। এই হ্রদটির একটি চমকপ্রদ বৈশিষ্ট্য রয়েছে। আর তা হল, গ্রীষ্মকালে এর পানি গোলাপী বর্ণ ধারণ করে! পানির অতিরিক্ত লবণাক্ততা এবং Artemia salina নামক এক ধরনের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র চিংড়ী জাতীয় জীবের উপস্থিতির কারণেই হ্রদটির পানি দেখতে গোলাপি হয়। সাইবেরিয়ার বৃহত্তম লবণের উৎস হলো এই হ্রদটি। গোলাপি বর্ণ ধারণ করার এই বিশেষ বৈশিষ্ট্যের কারণে বার্লিনস্কয়ি হ্রদের আরেক নাম পিঙ্ক লেক

গোলাপি বর্ণের হ্রদ
বার্লিনস্কয়ি হ্রদ

প্রাকৃতিক বিস্ময় ৮

রাশিয়ার সাইবেরিয়ায় অবস্থিত আরেকটি বিখ্যাত হ্রদ হচ্ছে বৈকাল হ্রদ যা বিশ্বের গভীরতম এবং প্রাচীনতম হ্রদ হিসেবেও পরিচিত। এই হ্রদটি প্রায় ২ কোটি ৫০ লক্ষ বছর পুরনো। এর গভীরতা দেড় হাজার মিটারেরও বেশী। বৈকাল হ্রদ সাইবেরিয়ার নীল নয়ন বা সাইবেরিয়ার মুক্তা নামে পরিচিত। ১৯৯৬ সালে এই হ্রদটিকে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে ঘোষণা করে।

আরো জানুন: আমাজন জঙ্গলের ১৫টি অদ্ভুত সত্যি

প্রাকৃতিক বিস্ময় ৯

কখনো লিসবনে সমুদ্রপাড়ের কোনো পাহাড়ে উঠলে আপনার চোখে একটি অদ্ভুত দৃশ্য দেখতে পারেন। তা হলো, সমুদ্রে প্রচুর পরিমাণে বর্গাকৃতির সমুদ্রের ঢেউ। সমুদ্র তরঙ্গের এই অবস্থাকে বলে Cross Sea। মূলত সমুদ্রে ভিন্নমুখী দুটি ঢেউ তীর্যকভাবে মিলিত হলে এই ধরনের ঢেউয়ের উৎপত্তি হয়। Cross Sea সমুদ্রের একটি স্বাভাবিক অবস্থা হলেও এটি বেশ বিপদজনক। কেননা এর কারনে বিভিন্ন সময় জাহাজডুবির ঘটনা ঘটে। জলযান এরকম ঢেউগুলোতে ভারসাম্য বজায় রাখতে পারেনা যার ফলে দুর্ঘটনার সৃষ্টি হয়।

প্রাকৃতিক বিস্ময় ১০

তীক্ষ্ণ দৃষ্টির প্রাণীর উদাহরণ দিতে গেলে প্রথমেই চলে আসে ঈগল বা বাজপাখির কথা। এসব পাখির দৃষ্টিশক্তি মানুষের চেয়ে তিন-চার গুণ বেশি তীক্ষ্ণ হয়। কয়েক মাইল দূর থেকে এরা শিকার দেখতে পায়। প্রায় ১০ হাজার ফুট ওপর থেকে শিকার খোঁজে বাজপাখি। ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১০০ মাইল বেগে এরা শিকার ধরতে নিচে নামা শুরু করে। আশ্চর্যের বিষয় হলো, এই গতিতে চলেও শিকারের দিকে ঠিকই নজর রাখতে পারে বাজপাখি। আপনি যদি ঈগলের দৃষ্টিশক্তিতে একটা দশতলা ভবনের উপর থেকে তাকান তাহলে আপনি মাটিতে থাকা একটি পিঁপড়াকেও স্পষ্ট দেখতে পাবেন!

তো এই ছিল The Earth Bangla এর Amazing Facts Series এর সপ্তম Episode। আজকের কোন তথ্যটি আপনাকে সবচেয়ে বেশি অবাক করেছে তা আমাদের কমেন্টে জানাতে ভুলবেন না। খুব শিগ্রই আমারা এই সিরিজের নতুন পর্ব নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হবো। পৃথিবীর এরকম অদ্ভুত ও অজানা তথ্য জানতে আমাদের সাথেই থাকুন।

এছাড়াও যদি আপনি নিয়মিত বিশ্বের ছোট ছোট অদ্ভুত, রহস্যময় ও আশ্চর্যজনক বিষয় সম্পর্কে জানতে চান তাহলে আমাদের সামাজিক মাধ্যমগুলোর সাথে যুক্ত থাকুন।

ফেইসবুক পেইজ: The Earth Bangla

ইউটিউব চ্যানেল: The Earth Bangla

ইনস্টাগ্রাম পেজ: The Earth Bangla

ফেইসবুক গ্রুপ: The Earth Bangla Family

Post a Comment

Please do not Enter any spam comment or Link in the comment Box

নবীনতর পূর্বতন