মহাকাশ সম্পর্কে অজানা ১০টি সত্য
আমাদের এই সুবিশাল মহাবিশ্বের কতটুকুই বা আমাদের জানা রয়েছে? মহাবিশ্ব নিয়ে বিজ্ঞানীদের আগ্রহের কখনোই কোনো কমতি ছিল না। মহাবিশ্বের অজানাকে জানার আগ্রহ থেকেই কখনো উঠে এসেছে অনেক বিস্ময়কর তথ্য, কখনো বা আমরা জানতে পেরেছি কিছু মজার তথ্য। The Earth Banglar Amazing Facts সিরিজের অষ্টম পর্বে আজ মহাকাশ সম্পর্কে অজানা ও অদ্ভুত তথ্যগুলো নিয়ে আমাদের আজকের পর্ব।
তথ্য ১
২০০২ সালে নাসা এবং জার্মান এরোস্পেস সেন্টার DLR Grace নামক একটি যৌথ মিশনে চুক্তিবদ্ধ হয়। তারা হুবহু একই রকম দেখতে দুটি স্যাটেলাইট মহাকাশে প্রেরণ করে। মূলত স্যাটেলাইট দুটোকে পাঠানো হয় পৃথিবীর Gravity Anomalies বা মাধ্যাকর্ষণ অসঙ্গতি পরিমাপ করার জন্য। যদিও স্যাটেলাইট দুটির আসল নাম হচ্ছে GRACE-1 এবং GRACE-2 কিন্তু মজার ছলে স্যাটেলাইট দুটির নাম রাখা হয় টম এন্ড জেরি (Tom and Jerry)। পৃথিবীকে কেন্দ্র করে একটি স্যাটেলাইটের পেছনে অপর স্যাটেলাইটটি ছুটছে বলে এরকম হাস্যকর নামকরণ করা হয়েছিল।
আরো জানুন: বিজ্ঞান সম্পর্কে অজানা ও অবাক করা ১০টি তথ্য
তথ্য ২
আমরা জানি চাঁদে সর্বপ্রথম পা রাখা ব্যক্তি ছিল একজন আমেরিকান। এর পাশাপাশি চাঁদে সবচেয়ে বেশি পতাকা স্থাপন করার রেকর্ডটিও কিন্তু আমেরিকার দখলে। ১৯৬৯ থেকে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত ছয়টি আমেরিকান পতাকা চাঁদে স্থাপন করা হয়েছিল। এর মধ্যে কেবল পাঁচটি পতাকা এখনো অক্ষত অবস্থায় চাঁদে রয়েছে। তবে অবাক করার মত বিষয় হচ্ছে, আমেরিকার সেই সব পতাকাগুলো এখন বিবর্ণ হয়ে গিয়েছে। এর কারণ হিসেবে দায়ী করা হয় সূর্যের তেজস্ক্রিয়তাকে। যদি নতুন করে কখনো কাউকে আবার চাঁদে পাঠানো হয় তবে সে ব্যক্তি পাঁচটি সাদা পতাকা ছাড়া আর কিছুই দেখতে পাবে না।
তথ্য ৩
সৌরজগতের সবচেয়ে বড় গ্রহ হল বৃহস্পতি বা জুপিটার। ১৮৭৮ খ্রিষ্টাব্দ থেকে এই গ্রহে একটি ঘূর্ণিঝড় পরিলক্ষিত করা হচ্ছে। প্রায় ১৫০ বছর ধরে পরিলক্ষিত হয়ে আসা এই ঘূর্ণিঝড়টি বৃহস্পতি গ্রহে এখনো বিদ্যমান। এর আকার প্রায় দুইটি পৃথিবীর সমান। স্যাটেলাইট ইমেজ অনুযায়ী এই ঘূর্ণিঝড়টি বৃহস্পতির যে অঞ্চলে বিদ্যমান সেখানে একটি বিশাল লাল বিন্দু দেখতে পাওয়া যায় যার কারণে এর নাম রাখা হয়েছে The Great Red Spot।
তথ্য ৪
পৃথিবীর প্রতিটি দেশের যেমন আলাদা পতাকা আছে, তেমনি পৃথিবীরও নিজস্ব একটি পতাকা রয়েছে। পতাকাটির কেন্দ্রে সাতটি রিং রয়েছে যা একটি ফুল তৈরি করে এটি পৃথিবীতে জীবনের অস্তিত্বের প্রতীক। আমাদের গ্রহের সবকিছু প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে একে অপরের সাথে সংযুক্ত রয়েছে তা উপস্থাপন করার জন্য রিংগুলো সংযুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া পতাকার নীল রং দ্বারা জল বুঝানো হয়, যা জীবনের জন্য অপরিহার্য এবং আমাদের গ্রহের বেশিরভাগ অংশ সমুদ্রের প্রতিনিধিত্ব করে। যখন মানুষ প্রথমবার মঙ্গলে পৌঁছাবে তখন সেই মানুষ যেই দেশের হোক না কেন সে পৃথিবীর এই পতাকাটি মঙ্গলের মাটিতে স্থাপন করবে।
![]() |
পৃথিবীর পতাকা |
তথ্য ৫
আপনি কি জানেন সৌরজগতে এমন একটি গ্রহ রয়েছে যা রাশিয়ার চেয়েও ছোট? একটু চিন্তা করে দেখুন তো কোন গ্রহটি হতে পারে? উত্তরটা হচ্ছে প্লুটো। একটি তথ্যচিত্রে দেখা যায় প্লুটোর আয়তন যেখানে ১৬.৭ মিলিয়ন বর্গ কি.মি. সেখানে রাশিয়ার আয়তন ১৭.১ মিলিয়ন বর্গ কিলোমিটার!
আরো জানুন: বিশ্বের অবাক করা ১০টি প্রাকৃতিক বিস্ময়
তথ্য ৬
মহাবিশ্বে মোট কত বিলিয়ন বা ট্রিলিয়ন গ্যালাক্সি রয়েছে তা নিয়ে দ্বন্দ্বের শেষ নেই। আমরা যেই গ্যালাক্সিতে বসবাস করি তার নাম হচ্ছে মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি বা আকাশগঙ্গা ছায়াপথ। মহাবিশ্ব এতটাই বিশাল যে, আমরা যদি আলোর গতিতে যাত্রা করি তাহলেও আমাদের সবচেয়ে নিকটতম বড় গ্যালাক্সি এন্ড্রোমিডায় পৌঁছাতে সময় লাগবে ২৫ লক্ষ বছর!
তথ্য ৭
ভাষা মহাকাশ অভিযানের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আপনি জানলে অবাক হবেন যে, নাসার সকল এস্ট্রোনটদের জন্য ইংরেজি ভাষার পাশাপাশি রাশিয়ান ভাষা শেখা বাধ্যতামূলক। কেননা ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশন বা ISS এর অফিসিয়াল ভাষা হল ইংরেজি এবং রাশিয়ান। তাই আপনি যে দেশের এস্ট্রোনট হোন না কেন এবং যতগুলো ভাষাতেই পারদর্শী হোন না কেন আপনি রাশিয়ান ভাষা শিখতে বাধ্য।
তথ্য ৮
যদি প্রশ্ন করা হয়, মহাকাশের বাইরে কোন জিনিসটি ছাড়া কোনভাবেই বেঁচে থাকা সম্ভব নয়? তবে তার সহজ উত্তর হবে একটি স্পেস স্যুট। মহাকাশের কঠোর পরিবেশে অক্সিজেন এবং অভিকর্ষজ ত্বরণ ছাড়া বেঁচে থাকার জন্য স্পেস স্যুটের কোন বিকল্প নেই। মহাকাশের জন্য তৈরি এসব স্পেস স্যুটের ভূপৃষ্ঠে ওজন ১২৭ কেজি! কিন্তু মহাকাশের মাইক্রোগ্র্যাভিটি পরিবেশে এই স্যাুটগুলার ওজন শূন্য।
![]() |
মহাকাশের স্পেস স্যুট |
তথ্য ৯
আজ থেকে প্রায় ৪০০ বছর পূর্বে, সর্বপ্রথম দূরবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে মহাকাশে তাকিয়েছিলেন বিজ্ঞানী গ্যালিলিও। তিনি ছিলেন একজন ইতালিয়ান পদার্থবিজ্ঞানী, জ্যোতির্বিজ্ঞানী, গণিতজ্ঞ এবং দার্শনিক। জ্যোতির্বিদ্যায় তার অবদান সবচেয়ে বেশি। তিনি ১৬০৯ সালে নিজের বানানো টেলিস্কোপ দিয়ে সর্বপ্রথম মহাকাশের দিকে তাকিয়েছিলেন। বৃহস্পতি গ্রহের সবচেয়ে বড় চারটি প্রাকৃতিক উপগ্রহ সর্বপ্রথম তিনি আবিষ্কার করেছিলেন। তাঁর নামেই এই চারটি বড় উপগ্রহকে বলা হয় Galilean moons বা Galilean satellites.
আরো জানুন: প্রাণীদের সম্পর্কে অজানা ও অদ্ভুত ১০টি তথ্য
তথ্য ১০
ইউরি গ্যাগারিন ছিলেন একজন সোভিয়েত বৈমানিক এবং নভোচারী। তিনি ছিলেন পৃথিবীর সর্বপ্রথম মহাকাশ ভ্রমণ করা ব্যক্তি। ১৯৬১ সালের ১২ই এপ্রিল ভস্টক ১ নভোযানে করে তিনি পৃথিবীর কক্ষপথ প্রদক্ষিণ করেছিলেন। এই ভ্রমণের জন্য তাঁকে বহু পুরস্কার ও সম্মাননা দেওয়া হয়েছিল। তাঁর একটি বিখ্যাত উক্তি হল, "মহাকাশযানে পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করার সময় আমি দেখেছি আমাদের গ্রহ কত সুন্দর। এসো আমরা এই সৌন্দর্য রক্ষা করি এবং বৃদ্ধি করি, এটিকে ধ্বংস না করি"।
তো এই ছিল The Earth Bangla এর Amazing Facts Series এর অষ্টম Episode। আজকের কোন তথ্যটি আপনাকে সবচেয়ে বেশি অবাক করেছে তা আমাদের কমেন্টে জানাতে ভুলবেন না। খুব শিগ্রই আমারা এই সিরিজের নতুন পর্ব নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হবো। পৃথিবীর এরকম অদ্ভুত ও অজানা তথ্য জানতে আমাদের সাথেই থাকুন।
এছাড়াও যদি আপনি নিয়মিত বিশ্বের ছোট ছোট অদ্ভুত, রহস্যময় ও আশ্চর্যজনক বিষয় সম্পর্কে জানতে চান তাহলে আমাদের সামাজিক মাধ্যমগুলোর সাথে যুক্ত থাকুন।
ফেইসবুক পেইজ:
ইউটিউব চ্যানেল:
ইনস্টাগ্রাম পেজ: The Earth Bangla
ফেইসবুক গ্রুপ:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Please do not Enter any spam comment or Link in the comment Box