ক্রিপ্টোকারেন্সি পৃথিবীর ভবিষ্যৎ মুদ্রা
ক্রিপ্টোকারেন্সির নাম না শুনলেও বিটকয়েনের নাম শোনেনি এমন মানুষ হয়তো খুঁজে পাওয়া যাবে না। বিটকয়েন একধরনের ক্রিপ্টোকারেন্সি। ক্রিপ্টোকারেন্সি এক ধরণের ভার্চ্যুয়াল কারেন্সি বা সাংকেতিক মুদ্রা যার কোনো বাস্তব রূপ নেই। এর অস্তিত শুধু ইন্টারনেট জগতেই আছে। জাপানি নাগরিক সাতোশি নাকামোতো নামের একজন অজ্ঞাত ব্যক্তি ২০০৮ সালের শেষে এই ক্রিপ্টোকারেন্সির উদ্ভাবন করেন বলে ধারণা করা হয়। এটি সাধারণত একটি ব্লকচেইন প্রযুক্তির অংশ। ব্লকচেইন হল এক ধরণের পাবলিক লেজার যা সমস্ত লেনদেন একটি নির্দিষ্ট নোডের ইনপুট এবং আউটপুটগুলির ঠিকানা তালিকাভুক্ত করে রাখে। ক্রিপ্টোকারেন্সি প্রক্রিয়ার সম্পূর্ণ কার্যক্রম ক্রিপ্টগ্রাফি নামক একটি সুরক্ষিত প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন করা হয়। ভার্চুয়াল কারেন্সির নিরাপত্তার জন্য এই ক্রিপ্টোগ্রাফি ব্যবহার করার কারণেই এর নাম ক্রিপ্টোকারেন্সি।
ভার্চুয়াল কারেন্সি হিসেবে সর্বপ্রথম ব্যবহৃত ক্রিপ্টোকারন্সি হলো বিটকয়েন যেটার প্রচলন শুরু হয় ২০০৯ সালে। ২০১৭ সালের দিকে এই মুদ্রার দাম ১০ হাজার ডলার ছাড়িয়ে যাওয়ার পর জনপ্রিয় হয়ে উঠতে শুরু করে। বর্তমানে সারা বিশ্বে প্রায় হাজারেরও উপরে এরকম ভার্চুয়াল কারেন্সি রয়েছে যার মধ্যে অন্যতম হলো বিটকয়েন, ইথেরিয়াম, বিএনবি (BNB), লাইটকয়েন, ডোজকয়েন ইত্যাদি।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে অর্থনীতিতে মুদ্রার অনেক বিবর্তন ঘটেছে। স্বর্ণ, রৌপ্য বা ধাতব মুদ্রা থেকে সেটা কাগুজে মুদ্রায় পরিণত হয়েছে। তারপর এল ক্রেডিট কার্ড, ডেবিট কার্ড, এগুলোকে ডিজিটাল কারেন্সি বলা যেতে পারে যা আমাদের লেনদেন আরও সহজ করে দিয়েছে। কিন্তু সবচেয়ে অভাবনীয় পরিবর্তন এনেছে ক্রিপ্টোকারন্সি। অর্থনীতিবিদদের মতে ডলার ও ইউরোর পাশাপাশি ক্রিপ্টোকারেন্সি লেনদেনে অপার সম্ভাবনা যোগ করবে এবং আমাদের পৃথিবীর অর্থনৈতিক ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন ঘটবে।
প্রথমত, আমাদের দৈনন্দিন জীবনে টাকা লেনদেনের ক্ষেত্রে একজন তৃতীয় পক্ষের ভূমিকা থাকে। যেমনঃ ব্যাংকিং, কুরিয়ার সার্ভিস ও পোষ্ট অফিস ইত্যাদি। এসব সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানকে নির্দিষ্ট পরিমাণ সার্ভিস চার্জ দিতে হয় কিন্তু ক্রিপ্টোকারেন্সিতে তৃতীয় পক্ষের কোন প্রয়োজন নেই বিধায় এর কোন বাড়তি চার্জও নেই। ইন্টারনেট ব্যবহার করে দুইজন ব্যবহারকারীর মধ্যে নিজেদের পরিচয় প্রকাশ না করেও এটা সরাসরি আদান-প্রদান করা হয়। ক্রিপ্টোকারেন্সি চালু হলে তৃতীয় পক্ষের প্রয়োজন না হওয়ায় লেনদেনে ব্যাংকের কোনো প্রয়োজন পড়বে না। তখন ব্যাংক নামক অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানটি একেবারে নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে পারে।
আরো জানুন: ব্ল্যাক হোল সম্পর্কে অজানা তথ্য
দ্বিতীয়ত, ক্রিপ্টোকারেন্সির লেনদেন জাল করা যাবে না কারণ এই লেনদেনের তথ্য ব্লকচেইন নেটওয়ার্কের মাধ্যমে সুরক্ষিত থাকে, কিন্তু এই মুদ্রার লেনদেন তদারকির জন্য কোন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মতো কর্তৃপক্ষ থাকে না। তাই একবার ট্রান্সফার হয়ে গেলে ওটাকে কোনোভাবে ফিরিয়ে আনা বা পরিবর্তন করা যায় না। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে হাজার হাজার মেশিনে এটা লিপিবদ্ধ হয়ে যায়। ফলে এই লেনদেন অপরিবর্তনীয় হয়ে যায়।
তৃতীয়ত, ক্রিপ্টোকারেন্সিতে কোনো মুদ্রাস্ফীতি থাকবে না কেননা এই মুদ্রার সংখ্যা পূর্বনির্ধারিত, তাই টাকার মতো তা আরও ছাপানো যাবে না। যেমন বিটকয়েনের সর্বোচ্চ সংখ্যায় ২১ মিলিয়নে নির্ধারিত করা আছে।
পঞ্চমত, পৃথিবীর যেকোনো জায়গা থেকে পণ্য কেনা যাবে কোনো ঝামেলা ছাড়াই। এখানে কোনো মুদ্রা বিনিময় হারের ব্যাপার নেই। বিটকয়েনকে অনেকেই ভবিষ্যতের মুদ্রা বলে মনে করেন। অনেক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বর্তমানে বিটকয়েনকে মুদ্রা হিসেবে নিচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে যে, অদূরভবিষ্যতে অনলাইন কেনাকাটায় ক্রেডিট কার্ডের বদলে বিটকয়েন বা অন্য কোনো সাংকেতিক মুদ্রা ব্যবহৃত হবে।
আরো জানুন: বিজ্ঞানের অবাক করা ১০টি নতুন আবিষ্কার
পরিশেষে বলা যায় যে, আপনি যদি ইন্টারনেটকে একটি দেশ হিসেবে বিবেচনা করেন সেই দেশের কারেন্সি হবে বিটকয়েন বা ক্রিপ্টো। মনে করা হচ্ছে, অদূর ভবিষ্যতে পৃথিবীজুড়ে সবাই ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবহার করবে। তাই বিটকয়েনকে অনেকেই ভবিষ্যতের মুদ্রা বলে মনে করেন আবার অনেকেই ডিজিটাল গোল্ড হিসেবে আখ্যায়িত করেন। তবে বিটকয়েনের সংখ্যা সীমিত। তাই অদূর ভবিষ্যতে একেকটির বিটকয়েনের দাম হবে আকাশচুম্বী যা হয়তো সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাহিরে হবে। কারণ, পৃথিবীর সব সম্পদ ওই সীমিত বিটকয়েন দিয়েই কিনতে হবে আমাদের।
এছাড়াও যদি আপনি নিয়মিত বিশ্বের ছোট ছোট অদ্ভুত, রহস্যময় ও আশ্চর্যজনক বিষয় সম্পর্কে জানতে চান তাহলে আমাদের সামাজিক মাধ্যমগুলোর সাথে যুক্ত থাকুন।
ফেইসবুক পেইজ:
ইউটিউব চ্যানেল:
ইনস্টাগ্রাম পেজ: The Earth Bangla
ফেইসবুক গ্রুপ:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Please do not Enter any spam comment or Link in the comment Box