বিশ্বের সবচেয়ে ঠান্ডা ১০টি দেশ

পৃথিবীর সবচেয়ে শীতলতম দেশের তাপমাত্রা একটি ডীপ ফ্রিজের তাপমাত্রার চেয়েও প্রায় ৩ গুণ কম। কেননা একটি ডিপ ফ্রিজের সাধারণ তাপমাত্রা -১৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস যেখানে পৃথিবীর এমনও অনেক দেশ রয়েছে যাদের তাপমাত্রা কমতে কমতে -৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াসেরও নিচে চলে যায়। এই দেশগুলোর তাপমাত্রা বছরের বেশিরভাগ সময়েই হিমাঙ্কের নীচে থাকে। বৃষ্টির মতো ঝরে পড়ে বরফ এবং মাসের পর মাস সূর্যের দেখা পাওয়া যায় না। এইসব জায়গায় তাপমাত্রা এত বেশী কম যে সেখানে বিনা কাজে গাড়ির ইঞ্জিন চালু রাখা হয় যেন ঠাণ্ডায় গাড়ির ব্যাটারি অকেজো না হয়ে যায় এবং সেখানে বসবাসরত মানুষেরা তাদের বাসার রুমগুলোকে ডিপ ফ্রিজ হিসেবে ব্যবহার করে। The Earth Bangla এর সেরা ১০ সিরিজের আজকের পর্বে আমরা জানাবো এমনি বিশ্বের সবচেয়ে শীতলতম ১০টি দেশ সম্পর্কে।

১. রাশিয়া 

রাশিয়া বিশ্বের সবচেয়ে শীতলতম দেশ। এটি এশিয়া ও ইউরোপ মহাদেশে বিস্তৃত একটি বৃহৎ দেশ যা আয়তনের বিচারে বিশ্বের বৃহত্তম দেশ। এদেশে সারাবছর হিমশীতল এবং শৈত্যপূর্ণ আবহাওয়া থাকে যেখানে গরমকালেও তাপমাত্রা -৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকে এবং শীতকালে তাপমাত্রা কমে দাঁড়ায় -২৭ ডিগ্রিতে। রাশিয়ার অধিকাংশ অঞ্চলই বছরের ৮ মাস বরফাচ্ছন্ন এবং ১০ মাস শৈত্য প্রবাহ থাকে। এখানে বছরে  মাত্র দুই মাসের জন্য সূর্যের আলো দেখতে পাওয়া যায়। এছাড়াও রাশিয়ার সাইবেরিয়ায় সারাদিনই শৈত্য প্রবাহ ও প্রচণ্ড ঠান্ডা পড়তে থাকে। ফলে এ দেশের অধিকাংশ মানুষ নিজেদের শরীর গরম রাখতে অ্যালকোহল সেবন করে। দেশটি পৃথিবীর মোট স্থলভাগের ১২% হলেও এমন ঠান্ডা আর প্রতিকূল পরিবেশের কারণে জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গকিলোমিটারে মাত্র ৮.৪ জন। বর্তমানে এ দেশটির বাৎসরিক গড় তাপমাত্রা -৫.৩৫ডিগ্রী সেলসিয়াস এবং এখন পর্যন্ত রাশিয়াতে রেকর্ড করার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা হল -৭১.২ ডিগ্রী সেলসিয়াস

২. কানাডা

কানাডা পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম ও শীতলতম দেশ যা উত্তর আমেরিকা মহাদেশের প্রায় ৪১% নিয়ে গঠিত। সারা বছরই এই দেশে তীর্যকভাবে আলো দেয় সূর্য এবং বছরে ৮ মাস বরফাচ্ছন্ন থাকে। কানাডার জলবায়ু গ্রীষ্মকালে হালকা ঠান্ডা এবং শীতকালে প্রচন্ড ঠান্ডা, বরফাচ্ছন্ন ও শুষ্ক তুষারপাত দ্বারা আবৃত থাকে। তাই বিশ্বের অন্যতম শীতপ্রধান দেশ হিসেবে খ্যাত কানাডা। এমন প্রতিকূল জলবায়ুর জন্য কানাডা দ্বিতীয় বৃহত্তম দ্বীপ দেশ হয়েও জনসংখ্যা মাত্র সাড়ে তিন কোটি এবং প্রতি বর্গকিলোমিটারে মাত্র ৪ জন বাস করে। এদেশের তাপমাত্রা সাধারণত -১৫ থেকে -৩৯ ডিগ্রির ভেতরেই থাকে। বর্তমানে এ দেশটির বাৎসরিক গড় তাপমাত্রা -৫.১০ডিগ্রী সেলসিয়াস এবং এখন পর্যন্ত কানাডাতে রেকর্ড করা সর্বনিম্ন তাপমাত্রা হল -৬৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস

আরো জানুন: বিশ্বের সবচেয়ে উষ্ণতম ১০টি দেশ

৩. গ্রিনল্যান্ড

পৃথিবীর সব থেকে বড় দ্বীপ হল গ্রিনল্যান্ড। উত্তর আটলান্টিক ও আর্কটিক মহাসাগরের মাঝে অবস্থিত এই দ্বীপ দেশটি ডেনমার্ক কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত। সূর্যের আলো এই দ্বীপে প্রায় আসে না বললেই চলে। ভৌগলিক অবস্থানের কারণে এখানে সর্বোচ্চ তিন ঘণ্টার মতো সূর্যের দেখা পাওয়া যায়। তাই গ্রিনল্যান্ডে শীতকাল বা শৈত্যপ্রবাহকাল খুব দীর্ঘ সময় হয়ে থাকে। শীতের হাত থেকে বাঁচতে এখানকার মানুষ খুব প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হয় না। সারা বছর বরফে ঢাকা থাকলেও গ্রীষ্মে বরফ কেটে গেলে দেশটির রূপ পাল্টে যায় এবং তখন ২৪ ঘণ্টাই দিন থাকে। এমন প্রতিকূল পরিবেশ হওয়ায় বিশাল আয়তনের এই দ্বীপে মাত্র ৫৭,১০০ জন লোক বসবাস করে। বর্তমানে এ দেশটির বাৎসরিক গড় তাপমাত্রা -৩.৭০ডিগ্রী সেলসিয়াস এবং এখানে রেকর্ড করা সর্বনিম্ন তাপমাত্রা হল -৬৯.৬ ডিগ্রী সেলসিয়াস

৪. মঙ্গোলিয়া

পৃথিবীর শীতলতম দেশের মধ্যে মঙ্গোলিয়া অন্যতম। এটি মধ্য এশিয়া এবং পূর্ব এশিয়ার একটি স্থলবেষ্টিত দেশ, যা চীন ও রাশিয়ার মধ্যে অবস্থিত। আয়তনের দিক থেকে দেশটি বিশ্বের ১৮ তম বৃহত্তম দেশ, তবে এর জনসংখ্যা মাত্র ৩০ লক্ষ। দেশটির মোট জনসংখ্যার ৩৮ শতাংশ লোক বাস করে এর রাজধানী উলান বাটোরে। গ্রীষ্মকালে এই দেশের তাপমাত্রা ০ ডিগ্রি সেলসিয়াসেরও নিচে থাকে এবং শীতকালে কখনও কখনও -২০ ডিগ্রি সেলসিয়াসেও চলে যায়। প্রচণ্ড ঠান্ডার কারণে এখানে বরফ পড়ে। বর্তমানে এ দেশটির বাৎসরিক গড় তাপমাত্রা -০.৭ ডিগ্রী সেলসিয়াস এবং এখানে রেকর্ড করা সর্বনিম্ন তাপমাত্রা হল -৫৪.৭ ডিগ্রী সেলসিয়াস

৫. নরওয়ে

নরওয়ে উত্তর ইউরোপের স্ক্যান্ডিনেভিয়ার পশ্চিম অংশে অবস্থিত একটি শীতল দেশ। দেশটি বছরের আট মাস বরফের নিচে ঢাকা থাকে। বছরের দুই মাস সূর্য ওঠে না আর এই সময়টাকে তাই ডার্ক পিরিয়ড বলা হয়। আবার বছরের দুই মাস এখানে সূর্য অস্ত যায় না আর এই সময়টাকে তাই মিডনাইট সান পিরিয়ড বলা হয়। ইউরোপের স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশগুলির মধ্যে খুব বেশি পার্থক্য নেই, যেখানে সুইডেন, ফিনল্যান্ড এবং আইসল্যান্ড বিশ্বের সবচেয়ে শীতলতম ১০টি দেশের তালিকায় নাম রয়েছে। তবে নরওয়েকে ইউরোপের সবচেয়ে শীতলতম দেশ হিসাবে বিবেচনা করা হয়। বর্তমানে এ দেশটির বাৎসরিক গড় তাপমাত্রা ১.৫০ ডিগ্রী সেলসিয়াস এবং এখানে রেকর্ড করা সর্বনিম্ন তাপমাত্রা হল -৫১.৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস

আরো জানুন: বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল ১০টি দেশ

৬. কিরগিজস্তান

কিরগিজস্তান মধ্য এশিয়ার পূর্বভাগের একটি স্থলবেষ্টিত দেশ। দেশটির উত্তরে কাজাখস্তান, পূর্ব-দক্ষিণে চীন এবং পশ্চিমে উজবেকিস্তান। আয়তনে ছোট এই দেশটির জলবায়ু অত্যন্ত বৈচিত্র্যময় যেখানে গ্রীষ্মকালে হালকা গরম এবং শীতকালে খুবই ঠান্ডা। এ অঞ্চলের মানুষ সবচেয়ে বেশি যে সমস্যাটির মুখোমুখি হয় তা হচ্ছে তুষারপাত কারন এদেশে প্রচুর তুষারপাত হয়। গরমকালেও এখানকার অধিকাংশ জায়গা বরফাচ্ছন্ন থাকে। তবে গরমকালে এই তাপমাত্রা খুব একটা না কমলেও শীতকালের তুলনায় অনেকটাই স্বস্তিতেই থাকেন এখানকার মানুষজন। বর্তমানে এ দেশটির বাৎসরিক গড় তাপমাত্রা ১.৫৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস এবং এখানে রেকর্ড করা সর্বনিম্ন তাপমাত্রা হল -৫৩.৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস

৭. আইসল্যান্ড

আইসল্যান্ড নাম শুনলেই এদেশের আবহাওয়া সম্পর্কে একটা ধারণা পাওয়া যায়। এটি ইউরোপের দ্বিতীয় বৃহত্তম দ্বীপ যা গ্রিনল্যান্ডের পূর্বে ও উত্তর মেরুরেখার ঠিক দক্ষিণে মধ্য আটলান্টিক পর্বতমালার উপর অবস্থিত একটি দেশ। এই দেশের দুই মেরুতে দু ধরনের আবহাওয়া অনুভূত হয় যেখানে দেশটির দক্ষিণ দিকের তুলনায় উত্তর দিকে বেশি ঠান্ডা পড়ে। কখনও কখনও এই তাপমাত্রা -৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে যায়। তবে শীতলতম দেশের পাশাপাশি আইসল্যান্ড বিশ্বের সবচেয়ে শান্তিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষস্থানে রয়েছে। বর্তমানে এ দেশটির বাৎসরিক গড় তাপমাত্রা ১.৭০ ডিগ্রী সেলসিয়াস এবং এখানে রেকর্ড করা সর্বনিম্ন তাপমাত্রা হল -৩৯.৭ ডিগ্রী সেলসিয়াস

৮. ফিনল্যান্ড

ফিনল্যান্ড ইউরোপের সবচেয়ে উত্তরে অবস্থিত একটি স্ক্যান্ডিনেভীয় দেশ। দেশটির উত্তরে নরওয়ে, পূর্বে রাশিয়া ও দক্ষিণে ফিনল্যান্ড উপসাগর। দেশটি বছরের ৪ মাসই তুষারে ঢাকা থাকে তাই দেশটি বিশ্বব্যাপী শীতপ্রধান দেশ হিসেবে পরিচিতি। প্রচন্ড তুষার ঝড় এবং প্রবল ঠাণ্ডা বাতাস এদেশের মানুষকে তাদের ঘরে বন্দী করে রাখে। শীতকালে এই দেশের তাপমাত্রা ০ ডিগ্রি থেকে -৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত হয়ে থাকে। গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রা কিছুটা বাড়লেও খুব সহনীয় মাত্রায় নয়। ফিনল্যান্ডের উত্তরাঞ্চলে শীতকালে ৫১ দিন পর্যন্ত সূর্যোদয় দেখা যায় না এবং গ্রীষ্মকালে প্রায় ৭৩ দিন সূর্য অস্ত যায় না। শীতলতম দেশ ছাড়াও ফিনল্যান্ডকে বিশ্বের সবচেয়ে সুখী দেশও বলা হয়ে থাকে। বর্তমানে দেশটির বাৎসরিক গড় তাপমাত্রা ১.৭৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস এবং এখানে রেকর্ড করা সর্বনিম্ন তাপমাত্রা হল -৫১.৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস

আরো জানুন: বিশ্বের সবচেয়ে ছোট ১০টি দেশ

৯. সুইডেন

সুইডেন  ইউরোপ মহাদেশের একটি দেশ এবং স্ক্যান্ডিনেভীয় দেশগুলোর মধ্যে বৃহত্তম। দেশটির উত্তর-পূর্বদিকে ফিনল্যান্ড, পশ্চিমে নরওয়ে ও দক্ষিণ-পশ্চিমে ডেনমার্ক অবস্থিত। সুইডেনে গ্রীষ্মকালে মাঝারি ঠান্ডা এবং শীতকাল তীব্র ঠান্ডা অনুভূত হয়। এখানে ফেব্রুয়ারির দিকে প্রচন্ড শীত পড়ে। এছাড়া সুইডেনের উত্তরাঞ্চলে অক্টোবরের দিকে ও দক্ষিণাঞ্চলে ডিসেম্বরে বরফ পড়তে দেখা যায়। শীতকালে প্রায়ই দেশটির তাপমাত্রা -৫.৫° ডিগ্রী সেলসিয়াসে নেমে আসে। তবে গ্রীষ্মকালে এখানে দিনের ২৪ ঘন্টার মধ্যে ১৯ ঘন্টা সূর্যের আলো থাকে। বর্তমানে দেশটির বাৎসরিক গড় তাপমাত্রা ২.১০ ডিগ্রী সেলসিয়াস এবং এখানে রেকর্ড করা সর্বনিম্ন তাপমাত্রা হল -৫২.৬ ডিগ্রী সেলসিয়াস। 

১০. এস্তোনিয়া

এস্তোনিয়া উত্তর ইউরোপে অবস্থিত খুব ছোট একটি দেশ যার জনসংখ্যা মাত্র ১৫ লাখের কাছাকাছি। এটি ফিনল্যান্ড এবং বাল্টিক সি-এর মাঝখানে অবস্থিত একটি শীতপ্রধান দেশ। বছরের ১২ মাসই এখানে তীব্র শীত থাকে। শীতকালে এখানে তাপমাত্রা -৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে -৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকে। শীতের তীব্রতা এতটাই বেশি থাকে যে, এখানে বসবাসকারী মানুষেরা নিজেদের দৈনন্দিন জীবনের কাজ পর্যন্ত করতে পারেন না। যে কোনো সময়ই যে কোনো জায়গায় তুষারপাত হতে পারে এবং এর জন্য শীতকালের অপেক্ষা করতে হয় না। এই দেশে বর্ষাকাল প্রায় নেই বললেই চলে এবং খুবই কম বৃষ্টিপাত হয় এই দেশে। বর্তমানে দেশটির বাৎসরিক গড় তাপমাত্রা ৩.১০ ডিগ্রী সেলসিয়াস এবং এখানে রেকর্ড করা সর্বনিম্ন তাপমাত্রা হল -৪৩.৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস

আরো জানুন: আয়তনে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ১০টি দেশ

তো এই ছিল বিশ্বের সবচেয়ে ঠান্ডা ও শীতলতম ১০টি দেশের তালিকা। আজকের মতো আর কোন কোন বিষয়ের উপর এরকম তালিকা দেখতে চান তা আমাদের অবশ্যই কমেন্ট করে জানান। আজকের বিষয়টি (সেরা ১০) ভালো লেগে থাকলে শেয়ার করুন আপনার বন্ধুদের সাথে। পৃথিবীর এরকম (জানা-অজানা) অদ্ভুত সব অজানা তথ্য জানতে আমাদের সাথেই থাকুন।

এছাড়াও যদি আপনি নিয়মিত বিশ্বের ছোট ছোট অদ্ভুত, রহস্যময় ও আশ্চর্যজনক বিষয় সম্পর্কে জানতে চান তাহলে আমাদের সামাজিক মাধ্যমগুলোর সাথে যুক্ত থাকুন।

ফেইসবুক পেইজ: The Earth Bangla

ইউটিউব চ্যানেল: The Earth Bangla

ইনস্টাগ্রাম পেজ: The Earth Bangla

ফেইসবুক গ্রুপ: The Earth Bangla Family

Post a Comment

Please do not Enter any spam comment or Link in the comment Box

নবীনতর পূর্বতন