যে মহাদেশ অস্ট্রেলিয়া মহাদেশ নামে পরিচিত
ওশেনিয়া মহাদেশ পৃথিবীর স্থলভাগের সবচেয়ে ক্ষুদ্রতম মহাদেশ যা অস্ট্রেলিয়া মহাদেশ নামেও পরিচিত। এটি পৃথিবীর দক্ষিণ গোলার্ধে অবস্থিত এবং মকরক্রান্তি রেখা এই মহাদেশের প্রায় মধ্যভাগ দিয়ে অতিক্রম করেছে। মূলত প্রশান্ত মহাসাগরের মধ্যভাগ ও দক্ষিণাংশের দ্বীপসমূহ নিয়ে এই মহাদেশ গঠিত। ওশেনিয়া মহাদেশের বৃহত্তম দেশ অস্ট্রেলিয়ার যার নাম অনুসারে এই মহাদেশটিকে অনেকে অস্ট্রেলিয়া মহাদেশ বলে। তবে ওশিয়ানিয়া ও অস্ট্রেলিয়া এক নয়। মূলত ওশেনিয়া অঞ্চলকে চারটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে যার একটি অংশ হলো অস্ট্রেলিয়া। The Earth Bangla এর আজকের পর্বে আমরা আপনাদের জানাবো ওশেনিয়া মহাদেশ সম্পর্কে এমনই অজানা ও অবাক করার মত কিছু তথ্য। তার আগে চলুন দেখে নেয়া যাক এক নজরে ওশেনিয়া মহাদেশ সম্পর্কে।
আরো জানুন: (এশিয়া মহাদেশ) (ইউরোপ মহাদেশ) (আফ্রিকা মহাদেশ)
ওশেনিয়া মহাদেশ পরিচিতি
- আয়তন: ৮৬,০০,০০০ বর্গকিলোমিটার
- জনসংখ্যা: ৪ কোটি
- জনসংখ্যার ঘনত্ব: প্রতি বর্গকিলোমিটারে ৪ জন
- শতকরা আয়তন: পৃথিবীর মোট আয়তনের ৫.৭%
- শতকরা জনসংখ্যা: পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার ০.৫৫%
- মোট দেশ সংখ্যা: ১৪ টি স্বাধীন রাষ্ট্র
- জাতিসংঘ ভুক্ত দেশ: ১০ টি
- ধর্ম: খ্রিষ্টান (৭৪%), নাস্তিক (২৩%), ইসলাম (২%), অন্যান্য (১%)।
- বৃহত্তম শহর: সিডনি, মেলবোর্ন, ব্রিসবেন, অকল্যান্ড, অ্যাডিলেড, ওয়েলিংটন, ক্রাইস্টচার্চ, ক্যানবেরা, পোর্ট মোর্সবি ও নাউরু।
- সবচেয়ে জনবহুল শহর: অকল্যান্ড
- সবচেয়ে বড় দেশ: অস্ট্রেলিয়া
- সবচেয়ে ছোট দেশ: নাউরু
- সবচেয়ে বেশি জনসংখ্যার দেশ: অস্ট্রেলিয়া
- সবচেয়ে কম জনসংখ্যার দেশ: নাউরু
- সবচেয়ে ধনী দেশ: অস্ট্রেলিয়া
- সবচেয়ে গরিব দেশ: কিরিবাস
- সর্বোচ্চ স্থান: পুঞ্চাক জায়া (৪,৮৮৪ মিটার উচু)
- সর্বনিম্ন স্থান: আয়ার হ্রদ (সমুদ্র পৃষ্ঠতল থেকে ১৬ মিটার নিচে)
- ভাষা সংখ্যা: ৪৫০ এর বেশি
- সবচেয়ে জনপ্রিয় ভাষা: ইংরেজি (প্রায় ৩ কোটির বেশি মানুষ)
- সবচেয়ে দামি মুদ্রা: অস্ট্রেলিয়ান ডলার (১ অস্ট্রেলিয়ান ডলার = ৬৫ টাকা)
- সবচেয়ে বড় নদী: মারি নদী (২,৫৮৯ কিলোমিটার)
- সবচেয়ে বড় সাগর: কোরাল সাগর।
- নোবেল পাওয়া মানুষের সংখ্যা: ১৫ জন
- মাথাপিছু জিডিপি: $৪১,১২০ মার্কিন ডলার
- সর্বোচ্চ মাথাপিছু জিডিপির দেশ: অস্ট্রেলিয়া (($৫৬,১৩৫ মার্কিন ডলার)
- ডোমেইন সংকেত: নেই
আরো জানুন: (উত্তর আমেরিকা মহাদেশ) (দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশ) (ওশেনিয়া মহাদেশ)
ওশেনিয়া মহাদেশ সম্পর্কে অজানা তথ্য
এবার তাহলে জেনে নেয়া যাক ওশেনিয়া মহাদেশ সম্পর্কে অজানা ও অবাক করার মত কিছু তথ্য
- স্থলভাগের দিক থেকে ওশেনিয়া পৃথিবীর ক্ষুদ্রতম মহাদেশ হলেও ওশেনিয়া এত বিশাল যে ভূগোলবিদরা এটিকে চারটি প্রধান ছোট ছোট অংশে বিভক্ত করেছে। এগুলো হলো অস্ট্রেলিয়া, মেলানেশিয়া, মাইক্রোনেশিয়া এবং পলিনেশিয়া।
- ওশেনিয়া মহাদেশের বেশিরভাগ অংশই প্রশান্ত মহাসাগরের নীচে। মাত্র ৮ শতাংশ মাটির উপরে যার সবচেয়ে বড় অংশটি হলো অস্ট্রেলিয়া।
- ওশেনিয়া মহাদেশ অত্যন্ত জনবিরল একটি অঞ্চল যেখানে মানুষের চেয়ে ভেড়ার সংখ্যা তিনগুণ এবং অস্ট্রেলিয়ায় মানুষের চেয়ে ক্যাঙ্গারুর সংখ্যা দ্বিগুণ।
- ইউরোপের নাবিকরা ১৬শ শতকে অঞ্চলটি আবিষ্কার করলেও পলিনেশিয়ানরা প্রথম এখানে বসতি স্থাপন করেছিল। তাই এই মহাদেশের অধিকাংশ মানুষের পূর্বপুরুষ ইউরোপিয়ান।
- ডাচ অভিযাত্রী অ্যাবেল তাসমান ১৬৪২ সালে প্রথম নিউজিল্যান্ডে পৌঁছেছিলেন যেখানে সেসময় মাওরি জনগণের বসবাস ছিল।
- ওশেনিয়া মহাদেশে অবস্থিত নাউরু পৃথিবীর একমাত্র দেশ যাদের কোনো সরকারি রাজধানী নেই। তবে এটি পৃথিবীর অন্যতম ছোট দেশের মধ্যে একটি।
- ওশেনিয়া মহাদেশে অবস্থিত গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ হল বিশ্বের বৃহত্তম প্রবাল প্রাচীর ব্যবস্থা যা অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ডের উপকূলে অবস্থিত। ২৩০০ কিলোমিটার জুড়ে বিস্তৃত গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ চীনের গ্রেট ওয়াল থেকেও বড় এবং পৃথিবীর একমাত্র জিনিস যা মহাকাশ থেকে দেখা যায়।
- ওশেনিয়া মহাদেশ পৃথিবীর একমাত্র স্থান যেখানে মনোট্রেমস নামক এক ধরনের স্তন্যপায়ী প্রাণী পাওয়া যায় যারা ডিম দেয়। এখন পর্যন্ত মনোট্রেমের ৫টি প্রজাতি পাওয়া গিয়েছে এবং সবগুলোই অস্ট্রেলিয়া ও পাপুয়া নিউগিনিতে বাস করে।
- ব্রিটিশ উপনিবেশের সময় ওশেনিয়া মহাদেশের দ্বীপগুলোকে ব্রিটেন সরকার তাদের কারাগারের উপনিবেশ হিসাবে ব্যবহার করতো যেখানে তারা ব্রিটিশ সরকারের বিরোধী, অপরাধী এবং বহিষ্কৃতদের শাস্তিস্বরূপ পাঠাত।
- ওশেনিয়া মহাদেশ পৃথিবীর একমাত্র মহাদেশ যেখানে কোন সক্রিয় আগ্নেয়গিরি নেই। পাপুয়া নিউগিনিতে কিছু সুপ্ত আগ্নেয়গিরি দেখা যায়।
- পৃথিবীর ইতিহাসে সর্বপ্রথম মহিলাদের ভোটাধিকার দেওয়া হয় নিউজিল্যান্ডে এবং অস্ট্রেলিয়া হল বিশ্বের দ্বিতীয় দেশ যারা মহিলাদের ভোটাধিকার প্রদান করে। আর কাকতালীয়ভাবে এই দুটি দেশই ওশেনিয়া মহাদেশে অবস্থিত।
- ওশেনিয়া মহাদেশ বিশ্বের বৃহত্তম কয়লা ও নারকেল রপ্তানিকারক মহাদেশ। এই কয়লার অধিকাংশই আসে অস্ট্রেলিয়া থেকে এবং নারিকেল আসে এই মহাদেশের অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দ্বীপ থেকে।
- এটি পৃথিবীর একমাত্র মহাদেশ, যে মহাদেশের সবগুলো দেশিই দ্বীপ রাষ্ট্র কেননা প্রশান্ত মহাসাগরের সকল দ্বীপকে একত্রে ওশেনিয়া মহাদেশ বলে। যদিও অনেক ভূতাত্ত্বিকগন অস্ট্রেলিয়াকে দ্বীপ হিসেবে গণ্য করে না।
- ওশেনিয়া মহাদেশের বৃহত্তম দেশ অস্ট্রেলিয়ায় পৃথিবীর সবচেয়ে বড় কাঁটাতারের বেড়া দেখা যায় যার দৈর্ঘ্য ৫৬১৪ কিলোমিটার। বন্য পশুদের থেকে কৃষকদের ফসল বাঁচাতে এটি তৈরি করা হয়েছিল।
- এই মহাদেশটি পৃথিবীর দক্ষিণ গোলার্ধে হওয়ায় জানুয়ারি মাসে প্রচন্ড গরম অর্থাৎ গ্রীষ্মকাল এবং জুলাই মাসে প্রচন্ড ঠান্ডা অর্থাৎ শীতকাল হয়ে থাকে যা পৃথিবীর অন্য যে কোন মহাদেশের জলবায়ুর সম্পূর্ণ বিপরীত।
- ওশেনিয়া মহাদেশের দেশগুলোকে পৃথিবীর বুকে প্রাণীদের স্বর্গরাজ্য বলা হয় কেননা এই মহাদেশে মোট প্রাণীদের মধ্যে মাত্র ৫ শতাংশ মানুষ বাকি ৯৫ শতাংশ বিভিন্ন জীবজন্তু পশুপাখির বসবাস। এছাড়াও এই মহাদেশে এমন কিছু বিরল প্রজাতির প্রাণীদের দেখা মেলে যা পৃথিবীর অন্য কোথাও দেখা যায় না।
- ওশেনিয়া মহাদেশের জলভাগের নিচে পৃথিবীর আরেকটি মহাদেশ রয়েছে যার নাম জিল্যান্ডিয়া। এই মহাদেশটি সম্পূর্ণ পানির নিচে নিমজ্জিত থাকার কারনে এখনো এটি পৃথিবীর অষ্টম মহাদেশ হিসেবে স্বীকৃতি পায়নি। তবে নিউজিল্যান্ড হচ্ছে জিল্যান্ডিয়া মহাদেশের জেগে থাকা একমাত্র পবর্তের চূড়া যেখানে মানব বসতি গড়ে উঠেছে। বর্তমানে নিউজিল্যান্ড এবং প্রশান্ত মহাসাগরের আরো একটি দ্বীপ রাষ্ট্র নিউ ক্যালিডোনিয়ার মধ্যবর্তী অংশেই জিল্যান্ডিয়ার অবস্থান।
আরো জানুন: (অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশ) (জিল্যান্ডিয়া মহাদেশ)
এই ছিল পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষুদ্রতম মহাদেশ ওশেনিয়া সম্পর্কে জানা অজানা ও অবাক করার মত কিছু তথ্য।
এছাড়াও যদি আপনি নিয়মিত বিশ্বের ছোট ছোট অদ্ভুত, রহস্যময় ও আশ্চর্যজনক বিষয় সম্পর্কে জানতে চান তাহলে আমাদের সামাজিক মাধ্যমগুলোর সাথে যুক্ত থাকুন।
ফেইসবুক পেইজ:
ইউটিউব চ্যানেল:
ইনস্টাগ্রাম পেজ: The Earth Bangla
ফেইসবুক গ্রুপ:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Please do not Enter any spam comment or Link in the comment Box