বিশ্বের বৃহত্তম ১০ টি মসজিদ
মুসলমান ধর্মালম্বীদের কাছে মসজিদ শুধুমাত্র একটি প্রার্থণালয়ই নয়। বরং মসজিদকে বলা হয় আল্লাহর ঘর। সাধারণত মসজিদ মুসলমানদের দলবদ্ধভাবে নামাজ পড়ার জন্য নির্মিত হয়ে থাকে এবং হাজার বছরেরও বেশি সময় ধরে মসজিদ মুসলমানদের ধর্মীয় উপাসনালয় হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। তবে আকার, আয়তন ও মানুষ ধারণ ক্ষমতার উপর ভিত্তি করে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের মসজিদ বিশ্বজুড়ে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছে। The Earth Banglar সেরা ১০ সিরিজের আজকের পর্বে আমরা আপনাদের জানাবো বিশ্বের সবচেয়ে বড় ১০টি মসজিদ সম্পর্কে।
১০. বায়তুল মোকাররম মসজিদ
বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় অবস্থিত বাংলাদেশের জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম মসজিদ বিশ্বের দশম বৃহৎ মসজিদ। মসজিদের শহর ঢাকার প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত এই মসজিদটির নির্মাণ কাজ ১৯৫৯ সাল থেকে শুরু হয়ে ১৯৬৮ সালে শেষ হয়। তৎকালীন পাকিস্তানের বিশিষ্ট শিল্পপতি লতিফ বাওয়ানি ও তার ভাতিজা ইয়াহিয়া বাওয়ানির উদ্যোগে এই মসজিদ নির্মাণের পদক্ষেপ গৃহীত হয়। অনেকটা মুঘল স্থাপত্যের ওপর ভিত্তি করে নির্মিত এই মসজিদটির অবস্থান মাত্র ২৬৯৪ বর্গমিটার জমির ওপরে। বর্তমানে এই মসজিদে একসঙ্গে ৪০ হাজার লোক নামাজ পড়তে পারে।
৯. ফয়সাল মসজিদ
১৯৮৬ সালে নির্মিত ফয়সাল মসজিদটি পাকিস্তানের ইসলামাবাদে অবস্থিত যা পৃথিবীর নবম বৃহত্তর মসজিদ। আয়তনে এটি দক্ষিণ এশিয়া ও পাকিস্তানের বৃহত্তম মসজিদ। ১৯৮৬ থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত মসজিদটি পৃথিবীর বৃহত্তম মসজিদ ছিলো। মসজিদটির আয়তন ৪৩,২৯৫ বর্গমিটার এবং লোক ধারন ক্ষমতা ৭৪,০০০ জন। মসজিদটির নকশা করেন বিখ্যাত তুর্কি স্থপতি ভেদাত দালোকে। মসজিদটি দেখতে অনেকটা মরুভূমির বেদুঈনদের তাঁবুর মতো। মসজিদটির চারটি গম্বুজ রয়েছে এবং প্রত্যেকটির উচ্চতা ৯০ মিটার। সারা পৃথিবীতে এটি ইসলামাবাদের প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
আরো জানুন: বিশ্বের সবচেয়ে বড় ১০টি ধর্ম
৮. দিল্লী জামে মসজিদ
ভারতের রাজধানী দিল্লির প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত দিল্লি জামে মসজিদ বর্তমানে বিশ্বের অষ্টম বৃহত্তর মসজিদ। ১৬৪৪ সাল থেকে ১৬৫৬ সালের মাঝামাঝি সময়ে মুঘল সম্রাট শাহ জাহান এটি নির্মাণ করেন বলে মসজিদটির নাম রাখা হয় মসজিদ-ই-জাহান নুমা। তবে দিল্লি জামে মসজিদ নামেই এটি বহুল পরিচিত। প্রায় ২২ হাজার বর্গমিটার জায়গায় অবস্থিত এই মসজিদটির ৩টি গম্বুজ এবং দুইটি মিনার রয়েছে। মিনার দুইটির উচ্চতা ৪১ মিটার। মসজিদটিতে এক সাথে ৮৫ হাজার জন নামাজ আদায় করতে পারেন।
৭. মসজিদুল হাসান আল শানী
মসজিদুল হাসান-আল শানী মরক্কোর কাসাব্লাঙ্কায় অবস্থিত একটি মসজিদ যা মরোক্কোর সর্ববৃহৎ মসজিদ। মসজিদটি স্থানীয়দের কাছে ক্যাসাবালাঙ্কা হাজ বা দ্বিতীয় হাসান মসজিদ নামে পরিচিত। এটি আফ্রিকার দ্বিতীয় বৃহত্তম মসজিদ এবং বিশ্বের ৭ম বৃহত্তম মসজিদ। মরক্কোর সবথেকে বড় শহর ক্যাসাবালাঙ্কায় আটলান্টিক মহাসাগরের তিরে অবস্থিত মসজিদটি। ১৯৯৩ সালে সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় মসজিদটি। মসজিদটির আয়তন ৯০,০০০ বর্গমিটার যেখানে একসাথে ১,০৫,০০০ জন নামাজ আদায় করতে পারেন। এছাড়াও বিশ্বের দ্বিতীয় উচ্চতম মিনারটি এই মসজিদে রয়েছে যার উচ্চতা ২১০ মিটার।
৬. বাদশাহী মসজিদ
বাদশাহী মসজিদ পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের রাজধানী লাহোরে একটি মুঘল যুগের মসজিদ। মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেব ১৬৭১ সালে এই মসজিদটির নির্মাণ কাজ শুরু করেন এবং ১৬৭৩ সালে নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়। এটি পাকিস্তান ও দক্ষিণ এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম মসজিদ এবং পৃথিবীর ষষ্ঠ বৃহত্তম মসজিদ। সামনের বিশাল চত্বরসহ মসজিদটির আয়তন প্রায় ৩০ হাজার বর্গমিটার এবং লোক ধারন ক্ষমতা ১ লাখ ১০ হাজার জন। ঐতিহাসিক এই মসজিদটির নামাজ কক্ষ সাতটি ভাগে ভাগ করা এবং সিঁড়ির ২২টি ধাপ পেরিয়ে মূল ফটকে পৌঁছাতে হয়।
আরো জানুন: বিশ্বের সবচেয়ে বড় ১০টি মুসলিম দেশ
৫. ইস্তিকলাল মসজিদ
ইস্তিকলাল মসজিদটি ইন্দেনেশিয়ার জাকার্তায় অবস্থিত যা দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার সবচেয়ে বড় মসজিদ । এটি ইন্দোনেশিয়ার জাতীয় মসজিদ। ইন্দোনেশিয়ার স্বাধীনতার স্মৃতিস্বরুপ মসজিদটি নির্মিত করা হয়েছিল বলে এর নাম ইস্তিকলাল মসজিদ রাখা হয় । মসজিদটি সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় ১৯৭৮ সালে । ৯৫ হাজার বর্গমিটার জায়গা নিয়ে অবস্থিত পৃথিবীর ৫ম বৃহৎ এই মসজিদটিতে প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার মুসল্লি একত্রে নামাজ আদায় করতে পারে।
৪. তাজ উল মসজিদ
তাজ-উল-মসজিদ ভারতের মধ্যপ্রদেশের ভোপালে অবস্থিত একটি মসজিদ। এটি ভারতের সর্ব বৃহত্তম এবং বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তর মসজিদ । মোঘল সম্রাট বাহদুর শাহ জাফর এর শাসনামলে নবাব শাহ জাহান কর্তৃক ১৯০১ সালে এই মসজিদটি নির্মান করা হয়। মসজিদটিতে তিনটি গম্বুজ ও দুটি সুউচ্চ মিনার রয়েছে। মসজিদের ভিতরে ও বাহিরে মিলে মোট আয়তন ৪ লাখ বর্গমিটার বা ৯৮ একর এবং এই মসজিদে একসাথে ১ লাখ ৭৫ হাজার জন মানুষ নামাজ আদায় করতে পারে ।
৩. মসজিদে নববী
হজরত মোহাম্মাদ (সা.) এর নিজ হাতে ৬২২ খ্রিস্টাব্দে নির্মিত হয় মসজিদে নববী বা আল মাসজিদুন নাবি যার অর্থ নবির মসজিদ। সৌদি আরবের মদিনা শহরে এই মসজিদটি অবস্থিত। গুরুত্বের দিক থেকে মসজিদুল হারামের পর মসজিদে নববীর স্থান। হজরত মোহাম্মাদ (সা.) হিজরত করে মদিনায় আসার পর এই মসজিদ নির্মিত হয়। এটি পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম মসজিদ। মসজিদটি নির্মান করতে ৭ মাস সময় লেগেছিল। মসজিদটির আয়তন ৪ লাখ বর্গমিটার এবং ধারন ক্ষমতা প্রায় সাড়ে ৬ লাখ। তবে হজ্জের সময় এই সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে ১০ লাখ হয়। মসজিদটির ১০টি মিনারের মধ্যে সবচেয়ে উঁচু মিনারটির উচ্চতা ১০৫ মিটার। এই মসজিদের এক অংশেই রয়েছে রাসুল (সা.) এর রওজা মোবারক।
আরো জানুন: আয়তনে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ১০টি দেশ
২. হারামে ইমাম রেজা
শিয়া সম্প্রদায়ের ১২ ইমামের অষ্টম ইমাম, ইমাম রেজা এই মসজিদটি নির্মাণ করেন বলে ‘হারামে ইমাম রেজা’ মসজিদটি ‘ইমাম রেজা মসজিদ’ নামেই সর্বাধিক পরিচিত। ইরানের খোরসান প্রদেশের রাজধানী মসনদে অবস্থিত পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম এই মসজিদটি। প্রায় ১০ লাখ বর্গমিটার জমির ওপরে অবস্থিত এই মসজিদটিতে প্রায় ৭ লাখ মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারে। ৮১৮ খ্রিস্টাব্দে নির্মিত এই মসজিদটির আটটি মিনার রয়েছে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ মিনারের উচ্চতা ৪১ মিটার। এছাড়াও ইমাম আলী রেজা সহ আট ইমামের সমাধি রয়েছে এখানে। ইরানের পর্যটন কেন্দ্রগুলোর মধ্যে ইমাম রেজার মাজার ভবনটি অন্যতম
১. মসজিদ আল-হারাম
মসজিদে হারাম হল সৌদি আরবের মক্কায় অবস্থিত একটি মসজিদ যা মুসলমানদের প্রধান ধর্মীয় স্থাপনা এবং পৃথিবীর সবথেকে বড় মসজিদ। ইসলাম ধর্মের সবচেয়ে পবিত্র স্থান কাবা শরিফ কে ঘিরে সৌদি আরবের মক্কা নগরীরতে এর অবস্থান। প্রায় ৪ লাখ বর্গমিটার জমির উপর অবস্থিত এই মসজিদটিতে সাধারণত প্রায় ৯ লাখ মুসলিম একসঙ্গে নামাজ পড়তে পারে। তবে হজের সময় এর পরিমাণ বেড়ে কখনো কখনো ৪০ লাখে পৌঁছায়। এখানে সর্বমোট ৯টি মিনার রয়েছে। ইতিহাসে জানা যায়, আল্লাহ র হুকুমে হযরত ইব্রাহিম (আঃ) কাবা ঘর ও তার সংলগ্ন এই মসজিদ নির্মান করেন। পরবর্তীতে হজরত মোহাম্মাদ (সা.) এর সময়ে ইসলামের আবির্ভাব হয় এবং ৬৩৮ সালে এর সংস্কার কাজ শেষ হয়। কাবা ঘরের দিকে নির্দেশনা করেই পৃথিবীর যেকোন প্রান্ত থেকে নামাজ আদায় করা হয়।
এছাড়াও যদি আপনি নিয়মিত বিশ্বের ছোট ছোট অদ্ভুত, রহস্যময় ও আশ্চর্যজনক বিষয় সম্পর্কে জানতে চান তাহলে আমাদের সামাজিক মাধ্যমগুলোর সাথে যুক্ত থাকুন।
ফেইসবুক পেইজ:
ইউটিউব চ্যানেল:
ইনস্টাগ্রাম পেজ: The Earth Bangla
ফেইসবুক গ্রুপ:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Please do not Enter any spam comment or Link in the comment Box