বিশ্বের প্রাচীনতম ১০টি মসজিদ

ইসলাম আবির্ভাবের পর থেকেই সময়ের সাথে সাথে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে গড়ে উঠেছে অসংখ্য মসজিদ এবং ইসলামিক স্থাপত্য। এর মধ্যে কিছু মসজিদ পৃথিবীর বৃহত্তম মসজিদ হিসেবে খ্যাত আবার কিছু মসজিদ পৃথিবীর সুন্দরতম মসজিদ হিসেবে মানুষের মনে জায়গা করে নিয়েছে। তবে পৃথিবীর পুরাতন মসজিদ সম্পর্কে আমাদের অধিকাংশরই অজানা। The Earth Banglar সেরা ১০ সিরিজের আজকের পর্বে আমরা আপনাদের জানাবো বিশ্বের সবচেয়ে পুরনো ১০টি মসজিদ সম্পর্কে।

১০. আল-আকসা মসজিদ

ইসলামের তৃতীয় পবিত্রতম স্থান জেরুজালেমে অবস্থিত আল-আকসা মসজিদ যা মসজিদুল আকসা বা বাইতুল মুকাদ্দাস নামেও পরিচিত। হাদিস অনুযায়ী মুহাম্মদ (সা.) মিরাজের রাতে মসজিদুল হারাম থেকে আল-আকসা মসজিদে এসে ঊর্ধ্বাকাশের দিকে যাত্রা করেন। মুসলিম ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাচীন এই মসজিদটি নবী সুলাইমান (আ.) তৈরি করেছিলেন যা পরবর্তীতে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। মুসলমানরা বিশ্বাস করে, নির্মাণের পর থেকে এটি ঈসা (আ.)সহ অনেক নবী আল্লাহর উপাসনার স্থান হিসেবে ব্যবহার করেছে। পরবর্তীতে ৭০৫ সালে উমাইয়া খলিফা আবদুল মালিকের যুগে মসজিদটি পুনর্নির্মিত ও সম্প্রসারিত করা হয়। 

৯. কাইরুয়ান জামে মসজিদ

কাইরুয়ান জামে মসজিদ তিউনিসিয়ার কাইরুয়ান নগরের বেশ পুরনো ও ঐতিহ্যবাহী একটি মসজিদ। এটি উকবা মসজিদ নামেও পরিচিত৬৭০ সালে নির্মিত এই মসজিদটি মুসলিম বিশ্বের প্রাচীনতম মসজিদ হিসাবে পরিচিত। মসজিদে পাঁচটি গম্বুজ ও নয়টি প্রবেশদ্বার রয়েছে এবং প্রাচীর নির্মাণ করা হয়েছে ইট ও পাথর দিয়ে। প্রাচীনতম এই মসজিদটি বিশ্বের খ্যাতিমান কয়েকটি মসজিদের মধ্যে অন্যতম। তৎকালীন সময়ে এই মসজিদকে ইসলামিক চিন্তাধারা এবং বিজ্ঞান শিক্ষার কেন্দ্র হিসেবে বিবেচনা করা হতো।

আরো জানুন: বিশ্বের সবচেয়ে বড় ১০টি মসজিদ

৮. মসজিদ আল-কুফা

মসজিদ আল-কুফা বিশ্বের পুরাতন মসজিদগুলোর অন্যতম যা মসজিদ আল-আজম নামেও পরিচিত। মূলত এটি ইরাকের নাজাফ প্রদেশের কুফা এলাকায় অবস্থিত হওয়ায় মসজিদ আল-কুফা নামে সর্বাধিক পরিচিত। নয় কক্ষবিশিষ্ট এই মসজিদে চারটি মিনার এবং পাঁচটি গেট রয়েছে। এছাড়াও মসজিদের ভিতরে সোনার অক্ষরে কোরআনের আয়াতের চারুলিপি রয়েছে। পুরো মসজিদে ব্যবহৃত মার্বেল এবং টাইলস গ্রীস থেকে আমদানি করা হয়েছে। ৬৩৯ সালে নির্মিত এই মসজিদটি মূলত শিয়া মুসলমানদের মসজিদ হিসেবে পরিচিত কেননা এই মসজিদে শিয়া সম্প্রদায়ের শীর্ষ ব্যক্তিদের সমাধি রয়েছে।

৭. মসজিদ আল-হারাম

মসজিদ আল-হারাম বা মসজিদে হারাম সৌদি আরবের মক্কা নগরীরতে অবস্থিত একটি মসজিদ যা ইসলাম ধর্মের সবচেয়ে পবিত্র স্থান কাবা শরিফকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে। ইতিহাসে বর্ণিত আছে , আল্লাহ র হুকুমে হযরত ইব্রাহিম (আঃ) কাবা ঘর ও তার সংলগ্ন এই মসজিদ নির্মান করেন। পরবর্তীতে হযরত মুহাম্মাদ (সা.) এর সময়ে ইসলামের আবির্ভাব ঘটে এবং ৬৩৮ সালে এটি মসজিদ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি মুসলমানদের প্রধান ধর্মীয় স্থাপনা এবং পৃথিবীর সবথেকে বড় মসজিদ। ৬৯২ খ্রিস্টাব্দে এই মসজিদের প্রথম বড় আকারের সংস্কার করা হয় এবং নামাজের স্থান বৃদ্ধিসহ নতুন মিনার যুক্ত করা হয়। 

৬. জাওয়াথা মসজিদ

জাওয়থা মসজিদ সৌদি আরবের হাফুফ শহরের প্রায় ১২ কিমি উত্তর-পূর্বে কিলাবিয়াহ গ্রামে অবস্থিত। ৬২৯ সালে এটি বনু আব্দুল কায়েস উপজাতির হাতে নির্মিত হয়েছিল, যারা ইসলামের শুরুর দিকে এবং আগে সেখানে বসবাস করত। এই মসজিদটিকে পূর্ব আরবে নির্মিত প্রথম মসজিদ বলে মনে করা হয়। এখানে ইসলামের দ্বিতীয় জুমার জামাতে নামাজ আদায় করা হয়েছিল এবং প্রথম জুমার জামাত মসজিদে নববীতে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এটি পৃথিবীর প্রাচীনতম মসজিদ যার মূল কাঠামোর অধিকাংশই হারিয়ে গেছে এবং এটি ধসে পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।  তবুও, এই মসজিদের একটি অংশ এখনও প্রার্থনার জন্য ব্যবহৃত হয়।

আরো জানুন: বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর ১০টি মসজিদ

৫. চেরামন জুম্মা মসজিদ

চেরামন জুম্মা মসজিদ হল ভারতের কেরালা প্রদেশের কডুঙগাল্লুর তাল্লুকের মেথেলায় অবস্থিত একটি মসজিদ। স্থানীয় মুসলমানরা এটিকে চেরামন জুমা মসজিদ ও বলে থাকে। চেরামন মসজিদকে বলা হয় ভারতের প্রথম মসজিদ যেটি ৬২৯ সালে মালিক ইবনে দিনার নির্মাণ করেন। এটি শুধু ভারতবর্ষের প্রথম মসজিদই না, আরব বিশ্বের বাইরে নির্মিত পৃথিবীর প্রাচীনতম মসজিদগুলোর একটি। আনুমানিক একাদশ শতাব্দীতে মসজিদটির সংস্কার ও পুনর্নির্মাণ করা হয়। প্রাচীন এই মসজিদের অভ্যন্তরীণ অংশ, মিহরাব ও মিনার এখনো আগের মতো অক্ষত রয়েছে। মসজিদের বহির্ভাগ কংক্রিট দিয়ে তৈরি এবং অজু করার জন্য একটি পুকুর রয়েছে।

৪. হুয়াইশেং মসজিদ

হুয়াইশেং মসজিদ চীনের গুয়াংজু শহরে অবস্থিত একটি মসজিদ। তাং রাজ বংশের রাজত্বকালে ৬২৭ সালে রাসুলুল্লাহ (সা.) এর চাচা সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস এই মসজিদটি নির্মাণ করেন। প্রাচীনকালে নৌকা সমূহের দিকনির্দেশনায় সাহায্য করে বলে মসজিদটি লাইটহাউস বা বাতিঘর মসজিদ নামেও পরিচিত। ১৩০০ বছরেরও বেশি পুরনো এই মসজিদটি বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন মসজিদগুলোর একটি। মসজিদটি ১৩৫০ সালে পুনর্নির্মাণ করা হয় এবং ১৬৯৫ সালে এক অগ্নিকাণ্ডে ধ্বংস হয়ে গেলে এটিকে আবার নির্মাণ করা হয়। মসজিদটি এখন পর্যন্ত অনেকবার সংস্করণ করা হয়েছে তবে প্রতিবার চীনের ঐতিহ্য ও স্থাপত্যশৈলী অক্ষুণ্ন রাখা হয়েছে।

৩. মসজিদ আল কিবলাতাইন

মসজিদ আল কিবলাতাইন সৌদি আরবের মদিনায় অবস্থিত পৃথিবীর প্রাচীন মসজিদগুলোর মধ্যে অন্যতম। মহানবী (সা.) জীবিত থাকা অবস্থায় ৬২৩ সালে এই মসজিদটি নির্মিত হয় এবং এই মসজিদেই নামাজ পড়ার সময় মুহাম্মদ (সা.) এর কাছে কিবলা পরিবর্তনের ওহি আসে। এরপর তার সাথে নামাজে দাঁড়ানো সকল মুসল্লিরা জেরুজালেম থেকে মক্কার দিকে ফিরে যায়। এ ঘটনা থেকে এই মসজিদের নামকরণ মসজিদ আল কিবলাতাইন করা হয়েছে যার অর্থ দুই কিবলার মসজিদ। তাই ঐতিহাসিক দিক থেকে এই মসজিদ ইসলামের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি মসজিদ।

আরো জানুন: বিশ্বের সবচেয়ে বড় ১০টি মুসলিম দেশ

২. মসজিদে নববী 

হযরত মুহাম্মাদ (সা.) এর নিজ হাতে ৬২২ খ্রিস্টাব্দে নির্মিত হয় মসজিদে নববী বা আল-মাসজিদুন-নাবি যার অর্থ নবির মসজিদ। এটিকে ইসলামের দ্বিতীয় পুরাতন মসজিদ হিসেবে গণ্য করা হয় যা সৌদি আরবের মদিনা শহরে অবস্থিত। এটি পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম মসজিদ এবং গুরুত্বের দিক থেকে মসজিদুল হারামের পর মসজিদে নববীর স্থান। হযরত মুহাম্মাদ (সা.) হিজরত করে মদিনায় আসার পর তার বাসগৃহের পাশে এই মসজিদ নির্মিত হয়। এই মসজিদের এক অংশেই রয়েছে রাসুল (সা.) এর রওজা মোবারক। 

১. মসজিদে কুবা

মসজিদে কুবা বা কুবা মসজিদ সৌদি আরবের মদিনা শহরের নিকটবর্তী কুবা গ্রামে অবস্থিত ইসলামের প্রথম মসজিদ যা ৬২২ খ্রিস্টাব্দে নির্মিত হয়। হযরত মুহাম্মাদ (সা.) মদিনায় হিজরতের প্রথম দিন কুবায় অবস্থানকালে এ মসজিদের ভিত্তি স্থাপন করেন। ইতিহাসবিদদের মতে, মহানবী (সা.) যখন এর ভিত্তি স্থাপন করেন তখন কেবলার দিকের প্রথম পাথরটি নিজ হাতে স্থাপন করেন। ফজিলত ও মর্যাদার দিক থেকে মসজিদে কুবার অবস্থান ৪র্থ। মসজিদে হারাম, মসজিদে নববী এবং মসজিদে আকসার পরই মসজিদে কুবার স্থান। 

এছাড়াও যদি আপনি নিয়মিত বিশ্বের ছোট ছোট অদ্ভুত, রহস্যময় ও আশ্চর্যজনক বিষয় সম্পর্কে জানতে চান তাহলে আমাদের সামাজিক মাধ্যমগুলোর সাথে যুক্ত থাকুন।

ফেইসবুক পেইজ: The Earth Bangla

ইউটিউব চ্যানেল: The Earth Bangla

ইনস্টাগ্রাম পেজ: The Earth Bangla

ফেইসবুক গ্রুপ: The Earth Bangla Family

Post a Comment

Please do not Enter any spam comment or Link in the comment Box

নবীনতর পূর্বতন