বিশ্বের সেরা ১০টি মোবাইল কোম্পানি
বর্তমানে মোবাইল ফোন এখন আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং একবিংশ শতাব্দির মানুষের জীবন যাত্রাকে পাল্টে দেওয়ার মত একটি আবিষ্কার হলো স্মার্টফোন। প্রতিনিয়তই স্মার্টফোনগুলোতে যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন ফিচার যা মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রাকে করছে সহজ থেকে সহজতর। আমাদের চাহিদার কথা মাথায় রেখে বর্তমান বিশ্বে ছোট বড় অসংখ্য মোবাইল কোম্পানি বিভিন্ন ধরনের স্মার্টফোন নির্মাণ করে আসছে। The Earth Banglar সেরা ১০ সিরিজের আজকের পর্বে আমরা আপনাদের জানাবো বিশ্বের সেরা ১০টি স্মার্টফোন কোম্পানি সম্পর্কে।
১০. নোকিয়া
নোকিয়া মোবাইল কোম্পানির নাম শুনেনি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। নকিয়ার প্রতিষ্ঠাতা হলেন ফেড্রিখ আইস্টাইম ও লইও মেকলিন। ২০০০ সালের দিকে মোবাইল বলতেই আমরা নকিয়াকে বুঝতাম। সেসময় নকিয়ার ১১০০, ১২০০ মডেলের ফোনগুলো জনপ্রিয়তার তুঙ্গে ছিল। ২০১১ সাল পর্যন্ত নোকিয়া বিশ্বের সর্ববৃহৎ মোবাইল ফোন উৎপাদনকারী কোম্পানি ছিল। তবে বাজারে টাচস্ক্রিন প্রযুক্তির আবির্ভাবের ফলে নোকিয়া ধীরে ধীরে পিছিয়ে যায়। তবুও নোকিয়া সেরা স্মার্টফোন কোম্পানির তালিকায় দশম স্থানে রয়েছে। বর্তমানে ১২০ টি দেশে নোকিয়াতে ১লাখ ৩০ হাজারেরও বেশি লোক কর্মরত আছে।
৯. এলজি
এলজি ১৯৪৭ সালে প্রতিষ্ঠিত একটি কোরিয়ান ইলেকট্রনিক্স কোম্পানি যার সদর দপ্তর হল সিউল। এটি দক্ষিণ কোরিয়ার চতুর্থ বৃহত্তম কর্পোরেশন। বহু বছর ধরে এলজিকে মানুষ রেফ্রিজারেটর এবং এয়ার কন্ডিশনার প্রস্তুতকারক কোম্পানি হিসেবে চিনলেও গত কয়েক বছরে স্মার্টফোন ব্র্যান্ড হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। এসব ফোনগুলোতে অত্যাধুনিক ক্যামেরা ফিচার, অটো ফোকাস ও নয়েস রিডাকশন এর মত আরও অনেক প্রযুক্তি যুক্ত করা আছে। বর্তমানে স্মার্টফোন বাজারের প্রায় ২.২ শতাংশ দখল করে রয়েছে এলজি।
আরো জানুন: বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ১০টি ব্যাংক
৮. মটোরোলা
ফোনের জগতে প্রথম দিকের কোম্পানিগুলোর মধ্যে মটোরোলা অন্যতম। শুরুর দিকে শুধু বাটন ফোন নিয়ে কাজ করলেও ২০১১ সালে মোটরলাকে কিনে নেয় চীনের কোম্পানি লেনোভো। মোটরোলাকে অধিগ্রহণ করেই একে বিশ্বের অন্যতম মোবাইল ও স্মার্টফোন নির্মাতা হিসেবে গড়ে তুলে চায়নার এই টেক জায়ান্ট। বাংলাদেশে তেমন একটা পরিচিত ব্রান্ড না হলেও মটোরোলা ওয়াল্ড ওয়াইড অনেকটা জনপ্রিয়। প্রতিষ্ঠানটির রয়েছে, মোবাইল, স্মার্টফোন, ট্যাবলেট, স্মার্টওয়াচ ইত্যাদি। বর্তমানে স্মার্টফোন বাজারের প্রায় ৩ শতাংশ দখল করে রয়েছে মটোরোলা।
৭. রিয়েলমি
রিয়েলমি হলো চীনা স্মার্টফোন নির্মাতা কোম্পানি বিবিকে ইলেক্ট্রনিকস এর একটি ব্র্যান্ড যার প্রধান কার্যালয় বেইজিংয়ে অবস্থিত। ভিভো এবং অপ্পো ব্র্যান্ডের মালিকও চীনের এই বিবিকে ইলেকট্রনিক্স কোম্পানি। রিয়েলমি ব্র্যান্ডটি ২০১৮ সালে অপ্পোর সাব-ব্র্যান্ড হিসেবে বাজারে এসেছিলো, যা এখন স্বাধীন একটি ব্র্যান্ড। বর্তমানে রিয়েলমি ভারতের শীর্ষ স্মার্টফোন কোম্পানি। রিয়েলমি স্মার্টফোন ছাড়াও টিভি, ইয়ারফোন, ওয়্যারলেস ইয়ারফোন, স্মার্টওয়াচ ইত্যাদি উৎপাদন করে। বর্তমানে স্মার্টফোন বাজারের প্রায় ৩ শতাংশ দখল করে রয়েছে এই ব্রান্ডটি।
৬. ভিভো
ভিভো মোবাইল হচ্ছে একটি চীনের বহুজাতিক প্রযুক্তি সংস্থা যারা স্মার্টফোন, সফটওয়ার ও স্মার্টফোনের বিভিন্ন যন্ত্রপাতি উৎপাদন করে থাকে। এটি ২০০৯ সালে বিবিকে ইলেক্ট্রনিকসের সাব-ব্রান্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছিল। এই ব্র্যান্ডটি বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত বর্ধমান স্মার্টফোন কোম্পানি। বর্তমানে স্মার্টফোন বাজারের প্রায় ৭.৫ শতাংশ দখল করে রয়েছে ভিভো।
আরো জানুন: বিজ্ঞানের অবাক করা ১০টি নতুন আবিষ্কার
৫. অপ্পো
চায়নাভিত্তিক মোবাইল ফোন ব্র্যান্ড অপ্পোর মালিকও বিবিকে ইলেকট্রনিক্স। ২০১১ সালে প্রতিষ্ঠিত এই ব্র্যান্ডটি গ্রাহকদের চাহিদা ও সুবিধার কথা বিবেচনা করে বাজারে স্বল্পমূল্যে উন্নত ক্যামেরার ফোনগুলো নিয়ে এসে স্মার্টফোনের বাজারে জায়গা দখল করে নিয়েছে। স্বল্পন্নোত দেশগুলোতে ও বিশেষ করে স্বল্প আয়ের মানুষদের কাছে এ ব্রান্ডটি দারুন জনপ্রিয়।এছাড়া বলিউড তারকাদের দিয়ে মার্কেটিং করিয়েও অপ্পো ভারতে শক্ত অবস্থান তৈরি করেছে। বর্তমানে স্মার্টফোন বাজারের প্রায় ৮.১ শতাংশ দখল করে রয়েছে অপ্পো।
৪. শাওমি
শাওমি মোবাইল ফোনকে বলা হয় “অ্যাপল অব চায়না” বা চীনের অ্যাপল। এটি বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুততম গ্রো করা একটি স্মার্টফোন ব্র্যান্ড। ২০১০ সালে চীনের লেই জুন এর হাত ধরে শাওমি ব্র্যান্ডের আত্ন্যপ্রকাশ পায়। ২০১১ সালে তারা তাদের প্রথম স্মার্টফোন বাজারজাত করেন। এছাড়াও কোম্পানিটি ল্যাপটপ, স্মার্টফোন এবং মোবাইল অ্যাপও তৈরি করে থাকে। বর্তমানে সারা বিশ্বব্যপী শাওমি মোবাইল ফোন পাওয়া যায় এর মধ্যে ভারত, ব্রাজিল, সিঙ্গাপুর, তুরস্ক এবং এশিয়ার বিভিন্ন দেশে এর শক্তিশালী উপস্থিতি রয়েছে। বর্তমানে স্মার্টফোন বাজারের প্রায় ১৪ শতাংশ দখল করে রয়েছে শাওমি।
৩. হুয়াওয়ে
উদ্ভাবনের দিক থেকে বর্তমানে হুয়াওয়ে বিশ্বের অন্যতম সেরা একটি স্মার্টফোন কোম্পানি। ১৯৮৭ সালে প্রতিষ্ঠিত চায়নার এই কোম্পানিটির বিশ্বের ১৭০টি দেশে ব্যবসা রয়েছে। হুয়াওয়ের অসাধারন উদ্ভাবনী ক্ষমতা একে খুব দ্রুত বিশ্বের শীর্ষ স্মার্টফোন নির্মাতা কোম্পানিগুলোর একটিতে পরিণত করেছে। উদ্ভাবন ও গবেষণা ক্ষেত্রে ২০১৬ সালে কোম্পানিটি তার আয়ের ১৬ শতাংশ ব্যয় করে। বিশ্বের প্রথম স্মার্টফোন কোম্পানি হিসেবে ২০১৮ সালে হুয়াওয়ে লেইকা ট্রিপল ক্যামেরা যুক্ত ফোন পি ২০ ও পি ২০ প্রো বাজারে নিয়ে আসে। বর্তমানে স্মার্টফোন বাজারের প্রায় ১৫ শতাংশ দখল করে রয়েছে হুয়াওয়ে।
আরো জানুন: বিশ্বের প্রথম যত আবিষ্কার
২. অ্যাপল
অ্যাপল ইনকর্পোরেটেড হচ্ছে আমেরিকার বিখ্যাত বহুজাতিক প্রযুক্তি কোম্পানি৷ ১৯৭৬ সালে স্টিভ জবস এবং রোনাল্ড ওয়েন এর হাত ধরে জন্ম হয় অ্যাপল ব্র্যান্ডের। অসাধারণ নকশা, ফিচার এবং নিরাপত্তাজনিত কারণে অ্যাপেল স্মার্টফোন কোম্পানিটি বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ জনপ্রিয় একটি স্মার্টফোন ব্র্যান্ড। অ্যাপল এর প্রথম স্মার্টফোন নিয়ে আসে ২০০৭ সালে যার নাম দেওয়া হয় আইফোন। এছাড়াও ম্যাক, আইপড, অ্যাপল ওয়াচ, স্মার্টওয়াচ, অ্যাপল টিভি আরো অনেক ধরণের পণ্য তৈরি করে থাকে৷ বর্তমানে স্মার্টফোন বাজারের প্রায় ১৮ শতাংশ দখল করে রয়েছে অ্যাপল।
১. স্যামসাং
সার্বিক দিক বিবেচনা করলে যে মোবাইল ব্র্যান্ডটি প্রথম স্হানে আসে তা হলো দক্ষিণ কোরিয়ান ইলেকট্রনিক্স কোম্পানি স্যামসাং। বর্তমানে স্যামসাং বিশ্বজুড়ে স্মার্টফোন ইন্ডাস্ট্রিতে নেতৃত্ব দিচ্ছে এবং দ্রুতই তা আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে। সকলের চাহিদার কথা বিবেচনা করে বিশ্বের শীর্ষ এ কোম্পানিটি উচ্চমূল্য থেকে স্বল্পমূল্যের স্মার্টফোন তৈরি করছে। বিশ্ববাজারে এদের প্রভাব এতটাই যে, বলা হয়ে থাকে বিশ্বের প্রায় ৭০% ফোনই কোনো না কোনোভাবে এই স্যামসাংয়ের আওতাভুক্ত। ১৯৩৮ সালে মাত্র ৪০ জন কর্মী নিয়ে বিশ্বের সেরা এ প্রতিষ্ঠানটি তাদের যাত্রা শুরু করে। ২০০৯ সাল থেকে স্মার্টফোন নিয়ে কাজ করে খুবই স্বল্প সময়ের ব্যবধানে বিশ্বের সেরা মোবাইল ব্র্যান্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে স্যামসাং। বর্তমানে স্মার্টফোন বাজারের প্রায় ২০ শতাংশ দখল করে রয়েছে স্যামসাং।
এছাড়াও যদি আপনি নিয়মিত বিশ্বের ছোট ছোট অদ্ভুত, রহস্যময় ও আশ্চর্যজনক বিষয় সম্পর্কে জানতে চান তাহলে আমাদের সামাজিক মাধ্যমগুলোর সাথে যুক্ত থাকুন।
ফেইসবুক পেইজ:
ইউটিউব চ্যানেল:
ইনস্টাগ্রাম পেজ: The Earth Bangla
ফেইসবুক গ্রুপ:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Please do not Enter any spam comment or Link in the comment Box