যে ১০টি দেশ বাংলাদেশকে ঘৃণা করে

বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক এবং শান্তিপূর্ণ দেশ। বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সাথে সব সময় শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে চলে। তাই বাংলাদেশের সাথে অন্য কোন দেশের অফিশিয়ালি কোন শত্রুতা বা দ্বন্দ্ব নেই। তবে, বাংলাদেশের কিছু প্রতিবেশী দেশ রয়েছে যাদের সাথে বাংলাদেশের দ্বন্দ্ব রয়েছে। এই দ্বন্দ্বগুলি ভূখণ্ড, জল সম্পদ, ধর্মীয় মতাদর্শ বিভিন্ন কারণ রয়েছে। এছাড়াও বিষের আরো কিছু দেশ রয়েছে যাদের সাথে বাংলাদেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক মতবিরোধ রয়েছে। The Earth Banglar সেরা ১০ সিরিজের আজকের পর্বে আমরা আপনাদের জানাবো বাংলাদেশের শত্রু ১০টি দেশ সম্পর্কে।

১০. তাইওয়ান

বাংলাদেশের সাথে তাইওয়ানের আনুষ্ঠানিকভাবে কোন কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই কেননা বাংলাদেশ তাইওয়ানকে সার্বভৌম দেশ হিসাবে স্বীকৃতি দেয় না। কারণ চীনের সাথে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও কৌশলগত সম্পর্ক। চীন তাইওয়ানকে তার অবিচ্ছেদ্য অঞ্চল হিসাবে বিবেচনা করে এবং তাইওয়ানের সাথে কোনও দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ককে সমর্থন করে না। চীন তাইওয়ানের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক থাকা দেশগুলিকে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। বাংলাদেশ স্বাধীনতার পর, তাইওয়ান ঢাকায় একটি দূতাবাস স্থাপন করে। তবে, বাংলাদেশ জাতিসংঘে চীনের সমর্থন দেওয়ায় তাইওয়ান তার দূতাবাস সরিয়ে নেয়।

৯. উত্তর কোরিয়া

বাংলাদেশ ও উত্তর কোরিয়ার মধ্যে সম্পর্ক খুবই শীতল। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় উত্তর কোরিয়া পাকিস্তানকে সমর্থন করেছিল। তাই বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর উত্তর কোরিয়া বাংলাদেশের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করেনি। ১৯৯৯ সালে উত্তর কোরিয়া বাংলাদেশের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে। তবে, দুটি দেশের মধ্যে সম্পর্ক খুবই সীমিত। বাংলাদেশ উত্তর কোরিয়াকে একটি স্বৈরাচারী দেশ হিসেবে বিবেচনা করে এবং উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচি ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের তীব্র নিন্দা করে। ফলে উত্তর কোরিয়া বাংলাদেশকে তার শত্রু দেশ হিসাবে দেখে এবং বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক উন্নত করতে আগ্রহী নয়।

আরো জানুন: বিশ্বের চিরশত্রু ১০টি দেশ

৮. ইরান

বাংলাদেশ ও ইরান উভয়ই মুসলিম-প্রধান দেশ। দেশ দুটির মধ্যে সরাসরি দ্বন্দ্বের কোনও ইতিহাস নেই তবে আন্তর্জাতিক বিশ্বে কূটনৈতিক ও কৌশলগত কিছু মতবিরোধ রয়েছে। বাংলাদেশে সাম্প্রতিক বছরগুলিতে ইরানের সাথে দ্বন্দ্বের প্রসার ঘটেছে। বাংলাদেশ ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে হুমকি হিসেবে দেখে। ইরান দাবি করে যে তার পারমাণবিক কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ, তবে বাংলাদেশ এবং অন্যান্য দেশগুলি আশঙ্কা করে যে ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে পারে। এছাড়াও ইরানকে সারা বিশ্বে বিভিন্ন জঙ্গি গোষ্ঠীকে সমর্থন এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য অভিযুক্ত করা হয়েছে। বাংলাদেশ এই অভিযোগগুলির বিরুদ্ধে কথা বলেছে ফলে বাংলাদেশ ও ইরান কূটনৈতিক সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে।

৭. ভারত

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সম্পর্ক ঐতিহাসিকভাবেই ঘনিষ্ঠ হলেও তাদের মধ্যে কিছু বিষয়ে দীর্ঘদিনের দ্বন্দ্ব রয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্ত বিরোধ, তিস্তার পানি বন্টন এবং বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ভারতের হস্তক্ষেপ অন্যতম। এছাড়াও বাংলাদেশ ভারত সীমান্তে নির্বিচারে বাংলাদেশীদের হত্যা এবং বিভিন্ন বিষয়ে বাংলাদেশের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণের কারণে ধীরে ধীরে দুই দেশের সম্পর্কের অবনতি ঘটছে। এই দ্বন্দ্বগুলির কারণে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সম্পর্ক প্রায়ই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে যা দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

৬. পাকিস্তান

বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের সম্পর্ক ঐতিহাসিকভাবেই জটিল। ১৯৭১ সালে পাকিস্তান থেকে স্বাধীনতা লাভের পর থেকেই দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের উত্তেজনা বিদ্যমান। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নির্যাতন ও গণহত্যাকে এখনো বাংলাদেশের জনগণ মনে রেখেছে। স্বাধীনতার পর থেকে, বাংলাদেশ পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর গণহত্যার জন্য বিচারের দাবি করে আসছে কিন্তু পাকিস্তান এই দাবি অস্বীকার করে আসছে। পাকিস্তান সরকার এই গণহত্যা এখনো অফিসিয়ালি স্বীকার করেনি এবং এর জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেনি যা দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নের অন্যতম শর্ত ছিল। তাই দেশ দুটির মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কও বেশ তিক্ত।

আরো জানুন: বিশ্বের পারমাণবিক শক্তিধর ১০টি দেশ

৫. ফ্রান্স

বাংলাদেশ ও ফ্রান্সের মধ্যে দ্বন্দ্বের সূত্রপাত হয় ২০১৯ সালের অক্টোবর মাসে, যখন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রো ফ্রান্সে ইসলামপন্থী সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দেন। ম্যাক্রোঁর মন্তব্যকে বাংলাদেশের মুসলমানরা ইসলামবিরোধী বলে মনে করেন এবং প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশে বিক্ষোভ শুরু হয়। বিক্ষোভকারীরা ফ্রান্সের পতাকা পোড়ায় এবং ফরাসি পণ্য বয়কট করার ডাক দেয়। বাংলাদেশ ও ফ্রান্সের মধ্যে এই দ্বন্দ্ব দুটি দেশের সম্পর্কের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এই দ্বন্দ্বের কারণে দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে। এটি দুই দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের উপরও প্রভাব ফেলছে।

৪. মায়ানমার

বাংলাদেশ ও মায়ানমারের মধ্যে একটি দীর্ঘদিনের দ্বন্দ্ব রয়েছে। এই দ্বন্দ্বের মূল কারণ হল মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যে বসবাসকারী রোহিঙ্গা মুসলিমদের উপর নির্যাতন। ২০১৭ সালে, মায়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে একটি সামরিক অভিযান চালায়, যার ফলে লক্ষ লক্ষ রোহিঙ্গা তাদের বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। এছাড়াও দুটি দেশের মধ্যে একটি দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে যেখানে প্রায়ই মায়ানমারের সামরিক কর্তারা আন্তর্জাতিক আইন ভঙ্গ করে বাংলাদেশের ভূখণ্ডে প্রবেশ করে এবং যুদ্ধের জন্য উস্কানিমূলক আচরণ করে। ফলে এই বিষয়গুলো বাংলাদেশ ও মায়ানমারের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটায়।

৩. ইসরাইল

বাংলাদেশ ও ইসরাইলের মধ্যে কোনো আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই। এর কারণ হলো, বাংলাদেশ ইসরাইলের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনিদের সমর্থন করে। বাংলাদেশ ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকে সমর্থন করে এবং ইসরাইলের দখলদারিত্বকে অবৈধ বলে মনে করে। এমনকি এই দেশ দুটি একে অপরকে এখনো স্বাধীন দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি। তাই বাংলাদেশের পাসপোর্ট ব্যবহার করে পৃথিবীর সব দেশে ভ্রমণ করা গেলেও ইসরাইলে ভ্রমণ করা নিষিদ্ধ।

আরো জানুন: বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী ১০টি দেশ

২. চীন

বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যকার সম্পর্কটি অত্যন্ত জটিল। বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে অর্থনৈতিক ও কৌশলগত সম্পর্ক রয়েছে তবে তাদের মধ্যে বেশ কিছু ব্যাপার নিয়ে দ্বন্দ্ব রয়েছে। বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে দ্বন্দ্বের প্রধান কারণ হল চীনের বাংলাদেশের অর্থনীতিতে হস্তক্ষেপ। চীন বাংলাদেশকে বিপুল পরিমাণ ঋণ দেয় এবং এই ঋণের বিনিময়ে বাংলাদেশকে চীনের পণ্য ও পরিষেবা আমদানির জন্য বাধ্য করে। এতে বাংলাদেশের অর্থনীতির উপর চীনের নিয়ন্ত্রণ বৃদ্ধি পায়। এছাড়া রোহিঙ্গা সংকটে চীন সরাসরি মিয়ানমারের সরকারকে সমর্থন করে এবং বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়েও হস্তক্ষেপ করার চেষ্টা করে যা বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকিস্বরূপ।

১. আমেরিকা

বাংলাদেশ ও আমেরিকা, দুইটি স্বাধীন রাষ্ট্র, যাদের মধ্যে বহু বছর ধরে কূটনৈতিক সম্পর্ক বিদ্যমান। দুটি দেশের মধ্যে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক এবং সামরিক সহযোগিতা রয়েছে। তবে, দুটি দেশের মধ্যে কিছু বিরোধও রয়েছে। বাংলাদেশ ও আমেরিকা দ্বন্দ্বের একটি প্রধান কারণ হল রোহিঙ্গা সংকট। এছাড়াও বাণিজ্য ঘাটতি, সামরিক সহযোগিতা, মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগও আমেরিকার আগ্রাসনের কারণে দুই দেশের মধ্যে প্রায়ই উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের উপর আমেরিকার নিষেধাজ্ঞা দুই দেশের সম্পর্ক অবনতির অন্যতম একটি কারণ। তবে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান অর্থনৈতিক ও কৌশলগত অংশীদার।

এছাড়াও যদি আপনি নিয়মিত বিশ্বের ছোট ছোট অদ্ভুত, রহস্যময় ও আশ্চর্যজনক বিষয় সম্পর্কে জানতে চান তাহলে আমাদের সামাজিক মাধ্যমগুলোর সাথে যুক্ত থাকুন।

ফেইসবুক পেইজ: The Earth Bangla

ইউটিউব চ্যানেল: The Earth Bangla

ইনস্টাগ্রাম পেজ: The Earth Bangla

ফেইসবুক গ্রুপ: The Earth Bangla Family

Post a Comment

Please do not Enter any spam comment or Link in the comment Box

নবীনতর পূর্বতন