যে ১০টি দেশ বাংলাদেশকে ভালোবাসে

বাংলাদেশ একটি স্বাধীন, সার্বভৌম ও বন্ধুত্বপূর্ণ দেশ যারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখে। বাংলাদেশ বিশ্বের অনেক দেশের সাথে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক সম্পর্ক রক্ষা করে। এই দেশগুলি বাংলাদেশের অর্থনীতি, বাণিজ্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে সহায়তা করে থাকে। তাই বাংলাদেশের সহযোগী এই দেশগুলোকে বন্ধু দেশ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এছাড়াও বাংলাদেশ জাতিসংঘ, কমনওয়েলথ, ওআইসি এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার সদস্য। The Earth Banglar সেরা ১০ সিরিজের আজকের পর্বে আমরা আপনাদের জানাবো বর্তমানে বাংলাদেশের বন্ধু ১০টি দেশ সম্পর্কে।

১০. শ্রীলংকা

বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা দুটি বন্ধুত্বপূর্ণ দেশ। এই দুই দেশই ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের অধীনে ছিল এবং ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় থেকেই দেশ দুটি ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখেছে। তবে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে ১৯৭৪ সালে। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা উভয়ই অর্থনৈতিক উন্নয়ন লাভ করেছে। এই উন্নয়ন দুটি দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগকে আরও বৃদ্ধি করেছে। বর্তমানে শ্রীলঙ্কা বাংলাদেশের বৃহত্তম রপ্তানি গন্তব্য এবং বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কার বৃহত্তম আমদানি উৎস। এছাড়াও বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক শ্রীলঙ্কা ভ্রমণ করে থাকে।

৯. ভুটান

বাংলাদেশ ও ভুটানের মধ্যে সম্পর্ক অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ও বন্ধুত্বপূর্ণ। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ভুটান, বাংলাদেশের স্বাধীনতার পূর্বেই অর্থাৎ ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর সর্বপ্রথম বাংলাদেশকে স্বাধীন দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। তবে বাংলাদেশ ও ভুটানের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। তখন থেকেই দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও সামরিক সহযোগিতা বিদ্যমান। এছাড়াও বাংলাদেশ ভুটানের বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার। ভুটান একটি স্থল বেষ্টিত দেশ হওয়ায় তাদের কোন সমুদ্রপথ নেই, ফলে বাণিজ্যের জন্য প্রায়ই তারা বাংলাদেশের সমুদ্র পথ ব্যবহার করে থাকে।

আরো জানুন: বিশ্বের চিরশত্রু ১০টি দেশ

৮. নেপাল

বাংলাদেশ ও নেপালের মধ্যে সম্পর্ক অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর নেপাল প্রথম দেশগুলির মধ্যে একটি ছিল যারা বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছিল। বাংলাদেশ ও নেপাল ১৯৭২ সালেই কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে। এরপর থেকেই এই দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক অবিচ্ছিন্নভাবে উন্নতি লাভ করেছে। বাংলাদেশ ও নেপালের মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্কও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নেপাল বাংলাদেশের বৃহত্তম রপ্তানি বাজার এবং বাংলাদেশ নেপালের বৃহত্তম আমদানি বাজার। দুটি দেশ একে অপরের সাথে বিভিন্ন পণ্য ও সেবা বিনিময় করে। এছাড়াও প্রতিবছর অসংখ্য বাংলাদেশী পর্যটক নেপালে ঘুরতে যায় আবার অনেক নেপালি শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশে আসে পড়াশোনা করার উদ্দেশ্যে।

৭. ইন্দোনেশিয়া

বাংলাদেশ ও ইন্দোনেশিয়া দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দুটি বৃহৎ মুসলিম-প্রধান দেশ। উভয় দেশই মুসলিম-প্রধান দেশ এবং দেশ দুটির সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় মিলের উপর ভিত্তি করে এই সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। বাংলাদেশ ও ইন্দোনেশিয়ার মধ্যে সম্পর্ক ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরই শুরু হয় তবে এই দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৭৩ সালে।  বাংলাদেশ ও ইন্দোনেশিয়ার মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্কও ঘনিষ্ঠ। বাংলাদেশ ইন্দোনেশিয়ার থেকে কয়লা, তেল ও গ্যাস আমদানি করে এবং বাংলাদেশে ইন্দোনেশিয়ার পোশাক, জুতা ও ইলেকট্রনিক্স পন্য রপ্তানি করে।

৬. দক্ষিণ কোরিয়া

বাংলাদেশ ও দক্ষিণ কোরিয়ার সম্পর্ক বন্ধুত্বপূর্ণ এবং সহযোগিতামূলক। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭৩ সালে দক্ষিণ কোরিয়া বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয় এবং ১৯৭৪ সালে দুটি দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়। দক্ষিণ কোরিয়া বাংলাদেশের সাথে অর্থনৈতিক, সামরিক ও সাংস্কৃতিক সহযোগিতা করে। এছাড়াও বাংলাদেশের সাথে দক্ষিণ কোরিয়ার দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য রয়েছে এবং বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়নে সহায়তা করে। তাই দক্ষিণ কোরিয়া বাংলাদেশকে একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে মনে করে এবং দুটি দেশের মধ্যে সম্পর্ক আরও জোরদার করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করছে।

আরো জানুন: বাংলাদেশের শত্রু ১০টি দেশ

৫. যুক্তরাজ্য

বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে দীর্ঘদিনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। বাংলাদেশ ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা লাভের পর থেকেই যুক্তরাজ্য বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠ মিত্র। যুক্তরাজ্য বাংলাদেশকে স্বাধীনতা যুদ্ধে সমর্থন করেছিল এবং স্বাধীনতার পর থেকেই বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে সহায়তা করেছে। তবে বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। যুক্তরাজ্য বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় দ্বিপাক্ষিক উন্নয়ন সহযোগী। যুক্তরাজ্য বাংলাদেশের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিবহন ও অবকাঠামো উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য অর্থায়ন করেছে। এছাড়াও বাংলাদেশ যুক্তরাজ্যের অন্যতম বড় রপ্তানি বাজার এবং যুক্তরাজ্যে প্রায় ১০ লাখ বাংলাদেশী অভিবাসী বসবাস করে।

৪. সৌদি আরব

বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের সম্পর্ক ঐতিহাসিক ও কৌশলগত। এই সম্পর্কটি ধর্ম, সংস্কৃতি এবং অর্থনীতির উপর ভিত্তি করে। সৌদি আরব বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় বাংলাদেশের পক্ষে সমর্থন করেছিল এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে স্বীকৃতি দিয়েছিল। বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক ১৯৭৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। সৌদি আরব বাংলাদেশের বৃহত্তম বিদেশি বিনিয়োগকারী এবং শ্রমবাজার। বর্তমানে সৌদি আরবে প্রায় ২৫ লাখ বাংলাদেশি শ্রমিক কাজ করে। এই শ্রমিকরা বাংলাদেশ ও সৌদি আরব উভয় দেশেরই অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।

৩. জাপান

বাংলাদেশ ও জাপানের সম্পর্ক ঐতিহাসিকভাবে ঘনিষ্ঠ। জাপান বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধকে সমর্থন করেছিল এবং স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশের শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, পরিবহন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, কৃষি, শিল্প ও অবকাঠামো উন্নয়ন সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা করেছে। বর্তমানে জাপান বাংলাদেশের বৃহত্তম বিদেশী বিনিয়োগকারী এবং দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার দেশ। জাপান বাংলাদেশে বিপুল পরিমাণ অর্থায়ন করেছে, যা বাংলাদেশের অর্থনীতিকে গড়ে তুলতে এবং জনজীবনকে উন্নয়ন করতে সহায়তা করেছে। এছাড়াও জাপান বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

আরো জানুন: বাংলাদেশের সবচেয়ে সুন্দর ১০টি স্থান

২. চীন

বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে সম্পর্ক বন্ধুত্বপূর্ণ ও সহযোগিতামূলক। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় চীন বাংলাদেশ বিরোধী দেশ থাকলেও ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে। বর্তমানে চীন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার এবং বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বিনিয়োগকারী দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম। চীনের বিনিয়োগের ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। চীন বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়নেও সহায়তা করেছে। এছাড়া বাংলাদেশের সামরিক শক্তি বৃদ্ধিতে চীন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে এবং বাংলাদেশের সামরিক অস্ত্রের সিংহভাগই চীন থেকে আমদানি করা হয়।

১. ভারত

বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্ক ঐতিহাসিকভাবেই ঘনিষ্ঠ।দুটি দেশের মধ্যে ভাষা, ধর্ম, সংস্কৃতি ও অর্থনীতির সমন্বয় রয়েছে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারত বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়েছিল এবং যুদ্ধে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে ভারতের অবদান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। তাই স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক অবিচ্ছিন্নভাবে বজায় রয়েছে এবং বাংলাদেশের অর্থনীতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে ব্যাপক সহায়তা প্রদান করেছে। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে এই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কটি প্রমাণ করে যে দুটি দেশ, ধর্ম, ভাষা বা জাতিগত পার্থক্য সত্ত্বেও, বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে পারে।

এছাড়াও যদি আপনি নিয়মিত বিশ্বের ছোট ছোট অদ্ভুত, রহস্যময় ও আশ্চর্যজনক বিষয় সম্পর্কে জানতে চান তাহলে আমাদের সামাজিক মাধ্যমগুলোর সাথে যুক্ত থাকুন।

ফেইসবুক পেইজ: The Earth Bangla

ইউটিউব চ্যানেল: The Earth Bangla

ইনস্টাগ্রাম পেজ: The Earth Bangla

ফেইসবুক গ্রুপ: The Earth Bangla Family

Post a Comment

Please do not Enter any spam comment or Link in the comment Box

নবীনতর পূর্বতন