বিশ্বের সবচেয়ে অনিরাপদ ১০টি দেশ
একটি বিপদজনক দেশ হল এমন একটি দেশ যেখানে মানুষের জন্য বসবাস করা বিপজ্জনক বা ভ্রমণের সময় ব্যক্তির শারীরিক বা আর্থিক ক্ষতির ঝুঁকি বেশি থাকে। এই দেশগুলিতে রাজনৈতিক অস্থিরতা, সহিংসতা এবং অপরাধের হার অনেক বেশি থাকে। এছাড়াও এই দেশগুলিতে বসবাসকারী মানুষরা তাদের জীবনের ঝুঁকিতে থাকে এবং তারা তাদের মৌলিক অধিকারগুলি ভোগ করতে পারে না। The Earth Banglar সেরা ১০ সিরিজের আজকের পর্বে আমরা আপনাদের জানাবো গ্লোবাল পিস ইনডেক্স রিপোর্ট বা GPI স্কোর অনুসারে বিশ্বের সবচেয়ে বিপদজনক ১০টি দেশ সম্পর্কে।
১০. সুদান
সুদান একটি আফ্রিকান দেশ যা রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং সহিংসতার দ্বারা বিপর্যস্ত। ৩.০০ GPI স্কোর নিয়ে সুদান বিশ্বে বিপদজনক দেশের তালিকায় ১০ম স্থানে রয়েছে। সুদান একটি দীর্ঘদিনের গৃহযুদ্ধের মধ্য দিয়ে গেছে, যা ২০০৫ সালে শেষ হয়েছিল। সুদান এখনও রাজনৈতিকভাবে অস্থিতিশীল এবং অপরাধের হার বেশি। অপরাধের উচ্চ হার সুদানের জন্য একটি বড় সমস্যা। ২০২১ সালে, সুদানে প্রতি ১০০,০০০ জনে ১৩০টি খুন রেকর্ড করা হয়েছে, যা বিশ্বের সর্বোচ্চ। ফলে দেশটির রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, সহিংসতা, অপরাধের হার এবং দুর্নীতির কারণে দেশটিকে একটি বিপজ্জনক দেশ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
৯. মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র
মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র একটি স্থলবেষ্টিত দেশ যা মধ্য আফ্রিকায় অবস্থিত। এটি বিশ্বের সবচেয়ে দরিদ্র এবং অস্থিতিশীল দেশগুলির মধ্যে একটি। এটি বিশ্বের ৯ম বিপদজনক দেশ যার GPI স্কোর ৩.০২। ২০১৩ সালে দেশটিতে একটি গৃহযুদ্ধ শুরু হয়েছিল যা এখনও চলমান। দেশটিতে অপরাধের হার অনেক বেশি এবং জঙ্গি গোষ্ঠীগুলিও সক্রিয়। মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রে ভ্রমণ করা বিপজ্জনক কারণ দেশটিতে অপরাধ, সন্ত্রাসবাদ এবং সংঘাতের ঝুঁকি রয়েছে। তাই এটিকে একটি বিপদজনক দেশ হিসাবে বিবেচনা করা হয়।
আরো জানুন: বিশ্বের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত ১০টি দেশ
৮. সোমালিয়া
সোমালিয়া আফ্রিকা মহাদেশের পূর্ব উপকূলে অবস্থিত একটি দেশ। এটি বিশ্বের সবচেয়ে দরিদ্র এবং অস্থিতিশীল দেশগুলির মধ্যে একটি। ৩.১৩ GPI স্কোর নিয়ে সোমালিয়া বিশ্বের ৮ম বিপদজনক দেশ। এছাড়াও দেশটি রাজনৈতিক অস্থিরতা, সন্ত্রাসবাদ এবং দুর্ভিক্ষ দ্বারা জর্জরিত। দেশটি ১৯৯১ সাল থেকে গৃহযুদ্ধে জর্জরিত যার ফলে হাজার হাজার মানুষ মারা গেছে এবং লক্ষ লক্ষ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। সোমালিয়ায় জঙ্গি গোষ্ঠী আল-শাবাবের সক্রিয় উপস্থিতি রয়েছে যারা দেশটিতে নিয়মিত হামলা চালায়। দেশটিতে অপরাধ, সহিংসতা এবং জঙ্গিবাদের ঘটনা খুবই সাধারণ ব্যাপার। তাই এটি বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক দেশগুলির মধ্যে একটি বলে বিবেচিত হয়।
৭. ইরাক
ইরাক একটি তেল সমৃদ্ধ দেশ, কিন্তু এটি দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং সহিংসতার সাথে লড়াই করে আসছে। গ্লোবাল পিস ইনডেক্স রিপোর্ট অনুসারে ইরাক বিশ্বের ৭ম বিপদজনক দেশ যার GPI স্কোর ৩.১৪। ২০০৩ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্ররা ইরাকে আক্রমণ করেছিল, এবং এই আক্রমণটি দেশটিকে গৃহযুদ্ধের দিকে নিয়ে যায়। গৃহযুদ্ধ এখনও চলমান, এবং এটি ইরাকের অর্থনীতি ও অবকাঠামোকে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। রাজনৈতিক অস্থিরতা, অপরাধ এবং জঙ্গিবাদ এখনও ইরাকের একটি বড় সমস্যা। ২০২৩ সালের মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইরাক ভ্রমণ সতর্কতার ভিত্তিতে, Level 4 অর্থাৎ ভ্রমণ না করার পরামর্শ দিয়েছে।
৬. কঙ্গো প্রজাতন্ত্র
কঙ্গো প্রজাতন্ত্র আফ্রিকার দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ। এটি বিশ্বের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশগুলির মধ্যে একটি এবং দেশটি রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, সহিংসতা এবং অপরাধ দ্বারা জর্জরিত। এটি বিশ্বের ৬ষ্ঠ বিপদজনক দেশ যার GPI স্কোর ৩.১৭। দেশটি দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার সাথে লড়াই করছে। ১৯৯৭ সালের গৃহযুদ্ধের পর থেকে দেশটি বেশ কয়েকটি অভ্যুত্থান এবং বিদ্রোহের মধ্য দিয়ে গেছে। এছাড়াও দেশটিতে ম্যালেরিয়া, জলাতঙ্ক এবং অন্যান্য রোগের স্বাস্থ্যগত ঝুঁকিও রয়েছে। ২০২১ সালে কঙ্গো প্রজাতন্ত্রকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের দ্বারা পর্যটন এবং ব্যবসায়িক ভ্রমণের জন্য "অনিরাপদ" দেশ হিসাবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।
আরো জানুন: বিশ্বের পারমাণবিক শক্তিধর ১০টি দেশ
৫. দক্ষিণ সুদান
দক্ষিণ সুদান একটি নতুন দেশ যা ২০১১ সালে স্বাধীনতা লাভ করেছিল। কিন্তু এর পর থেকেই দেশটি গৃহযুদ্ধ এবং সহিংসতার মুখোমুখি হয়েছে। ৩.১৮ GPI স্কোর নিয়ে দক্ষিণ সুদান বিপদজনক দেশের তালিকায় ৫ম স্থানে রয়েছে। এটি বিশ্বের সবচেয়ে কম উন্নয়নশীল দেশগুলির মধ্যে একটি, এবং দেশটিতে সহিংসতা, দুর্ভিক্ষ এবং অর্থনৈতিক অস্থিরতার দ্বারা জর্জরিত। দেশের বেশিরভাগ মানুষ কৃষিজীবী এবং তারা পর্যাপ্ত খাদ্য পায় না। দেশটিতে শিশুমৃত্যুর হারও অনেক বেশি। এছাড়াও দেশটিতে বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল রয়েছে এবং তারা প্রায়শই বিরোধে জড়িয়ে পড়ে। ফলে এই রাজনৈতিক অস্থিরতার ভ্রমণকারীদের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে।
৪. রাশিয়া
রাশিয়া একটি বিশাল দেশ যার একটি দীর্ঘ এবং সমৃদ্ধ ইতিহাস রয়েছে। এটি বিশ্বের চতুর্থ বিপদজনক দেশ যার GPI স্কোর ৩.২৮। রাশিয়া বর্তমানে একটি রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক অস্থিরতার সময়কালের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়া বর্তমানে ইউক্রেনে একটি সামরিক অভিযান পরিচালনা করছে, যা ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি শুরু হয়েছিল। এই অভিযানটি রাশিয়ার অর্থনীতিকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করেছে, এবং রাশিয়াকে একাধিক দেশ দ্বারা অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার সম্মুখীন হতে হয়েছে। ফলে দেশটিতে অপরাধের হার, সহিংসতা ও সাময়িক দ্বন্দ্ব ব্যাপক হার বৃদ্ধি পেয়েছে। রাশিয়ার বর্তমান পরিস্থিতি খুবই অস্থিতিশীল, এবং ভবিষ্যত কী হবে তা বলা কঠিন।
৩. সিরিয়া
সিরিয়া মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশ যা ২০১১ সাল থেকে গৃহযুদ্ধে জর্জরিত। যার ফলে লক্ষ লক্ষ মানুষ নিহত হয়েছে এবং বিপুল সংখ্যক মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। ৩.৩৬ GPI স্কোর নিয়ে সিরিয়া বিশ্বের তৃতীয় বিপদজনক দেশ। গ্লোবাল পিস ইনডেক্স রিপোর্ট অনুসারে সিরিয়া বিশ্বের তৃতীয় বিপদজনক দেশ যার GPI স্কোর ৩.৩৯। গৃহযুদ্ধের কারণে সিরিয়ার অবকাঠামো ও অর্থনীতি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, এবং দেশটিতে অপরাধ এবং সহিংসতাও ব্যাপকভাবে বেড়েছে। এই কারণে সিরিয়ায় ভ্রমণ করা অত্যন্ত বিপজ্জনক। সিরিয়ার অর্থনীতিও যুদ্ধের কারণে ধ্বংস হয়ে গেছে। দেশটি এখন বিশ্বের সবচেয়ে দরিদ্র দেশগুলির মধ্যে একটি। দেশটি এখনও একটি মানবিক সংকটের মধ্যে রয়েছে।
আরো জানুন: বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী ১০টি দেশ
২. ইয়েমেন
ইয়েমেন মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশ, এবং এটি বিশ্বের সবচেয়ে খারাপ মানবিক সংকটের মধ্যে রয়েছে। এটি বিশ্বের দ্বিতীয় বিপদজনক দেশ যার GPI স্কোর ৩.৩৯। ইয়েমেনে ২০১৫ সাল থেকে গৃহযুদ্ধ চলছে এবং এই সহিংসতা এখনও বিদ্যমান। যুদ্ধে লক্ষ লক্ষ মানুষ মারা গেছে এবং কোটি কোটি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। যুদ্ধ এবং অর্থনৈতিক মন্দার কারণে ইয়েমেনের প্রায় ২০ মিলিয়ন মানুষ খাদ্যের অভাবে ভুগছে। ইয়েমেনে ভ্রমণ করা অত্যন্ত বিপজ্জনক কারণ দেশটিতে অপরাধের হার উচ্চ, এবং পর্যটকরা অপহরণ ও অন্যান্য অপরাধের শিকার হতে পারে।
১. আফগানিস্তান
আফগানিস্তান একটি অত্যন্ত বিপজ্জনক দেশ । আফগানিস্তান একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ যেখানে তালেবান এবং অন্যান্য জঙ্গি গোষ্ঠীর উপস্থিতি রয়েছে যারা নিয়মিত হামলা চালায়। ২০২১ সালের আগস্টে তালিবানরা ক্ষমতায় ফিরে আসার পর থেকে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। আফগানিস্তানে নারীদের অধিকারগুলি সীমিত করা হয়েছে এবং তাদের উপর সামাজিক ও ধর্মীয় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এটি বিশ্বের অন্যতম দারিদ্র্যতম দেশ এবং এর জনসংখ্যার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ মানবিক সহায়তার উপর নির্ভরশীল। ৩.৫৫ GPI স্কোর নিয়ে আফগানিস্তানকে বিশ্বের সবচেয়ে বিপদজনক দেশ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তাই আফগানিস্তানে ভ্রমণের সময় নিরাপত্তার জন্য সতর্কতা অবলম্বন করা গুরুত্বপূর্ণ।
এছাড়াও যদি আপনি নিয়মিত বিশ্বের ছোট ছোট অদ্ভুত, রহস্যময় ও আশ্চর্যজনক বিষয় সম্পর্কে জানতে চান তাহলে আমাদের সামাজিক মাধ্যমগুলোর সাথে যুক্ত থাকুন।
ফেইসবুক পেইজ:
ইউটিউব চ্যানেল:
ইনস্টাগ্রাম পেজ: The Earth Bangla
ফেইসবুক গ্রুপ:
what about North Korea ?
উত্তরমুছুনএকটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Please do not Enter any spam comment or Link in the comment Box