বিশ্বের সবচেয়ে বড় ১০টি সেতু

কোন দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার সাথে সেই দেশের মানুষের জীবনমান এবং অর্থনৈতিক একটা গভীর সংযোগ আছে। তাই একটি দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়ন অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। অবকাঠামোগত উন্নয়ন বলতে শুধুমাত্র সড়কপথ উন্নয়ন কে বুঝায় না নদীপথ কেও বুঝায়। সেই প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ তাদের প্রয়োজনের তাগিদে বিভিন্ন উপায়ে নদী পাড়ি দিয়ে আসছে। তবে প্রযুক্তির কল্যাণে মানুষ বড় বড় নদীর বুকে সেতু দিয়ে যোগাযোগ স্থাপন করেছে নদীর দুই প্রান্তের মাঝে। আবার কিছু কিছু সেতু দুই দেশকেও এক করেছে যা মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থাকে আরও উন্নত করেছে। তবে মজার ব্যাপার হচ্ছে বিশ্বের দীর্ঘতম দশটি সেতুর মধ্যে আটটি সেতুই এই এশিয়া মহাদেশে অবস্থিত। চলুন তবে জেনে নেওয়া যাক পৃথিবীর দীর্ঘতম ১০টি সেতু এবং পৃথিবীর দীর্ঘতম সেতুগুলোর মধ্যে আমাদের পদ্মা সেতু কততম ??

১০. ম্যানচ্যাক সোয়াম্প ব্রিজ

বিশ্বের দশম দীর্ঘতম এবং যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় দীর্ঘতম সেতু হলো ম্যানচ্যাক সোয়াম্প ব্রিজ। কংক্রিটের তৈরি ব্রিজটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের লুইসিয়ানা রাজ্যে অবস্থিত। ৩৬.৭ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সেতুটি  ১৯৭৯ সালে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছিল। সেতুটি নির্মাণ করতে প্রতি মাইলে খরচ হয়েছে ৭ মিলিয়ন ডলার কিন্তু এই সেতুটি সম্পূর্ণ টোল ফ্রি অর্থাৎ এই সেতুতে কোন যানবাহন চলাচলের জন্য কোন রকমের টাকা দিতে হয় না।

৯.  লাইন-১, উহান মেট্রো সেতু

চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে অবস্থিত এই সেতুটি। এটি মূলত পুরোপুরি সেতু নয়। এটি একটি মেট্রো সিস্টেম ভায়াডাক্ট যা বিশ্বের দীর্ঘতম মেট্রো সেতু। ৩৭.৭ কিলোমিটার দীর্ঘ ব্রিজটি তৈরি করতে হুন্ডায় ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড কনস্ট্রাকশন কোম্পানি ৩.৬ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করে এবং ২০০৪ সালে এটিকে পুরোপুরি উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়

আরো জানুন: বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘতম ১০টি মেট্রোরেল

৮. লেক পন্টচারট্রেইন কজওয়ে

পৃথিবীর অষ্টম দীর্ঘতম এবং যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে দীর্ঘতম সেতু হল এই লেক পন্টচারট্রেইন কজওয়ে যা আমেরিকার লুজিয়ানায় অবস্থিত। ৩৮.৪ কিলোমিটার দীর্ঘ সেতুটি দুই দফায় নির্মাণ করা হয় যার দক্ষিণ অংশ ১৯৫৬ সালে এবং উত্তর অংশ ১৯৬৯ সালে নির্মাণ করা হয়। এর বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো এইখানে দুটি সেতু সমান্তরাল ভাবে নির্মাণ করা হয়েছে। ৪ লেন বিশিষ্ট ৯ হাজার ৫০০টি পিলার এর ওপর দাঁড়িয়ে থাকা এই সেতুটিতে গাড়ি নিয়ে বের হতে হলে আপনাকে খরচ করতে হবে ৫ মার্কিন ডলার। সেতুটি নির্মাণ এর পর প্রায় ৪৭ বছর পর্যন্ত বিশ্বের দীর্ঘতম সেতু হিসেবে ওয়ার্ল্ড গিনিস বুকে নাম লিখিয়ে ছিলো।

৭. বেইজিং গ্র্যান্ড ব্রিজ

বেইজিং গ্র্যান্ড ব্রিজ রেলসেতুটি মূলত বেইজিং-সাংহাই হাই স্পিড রেলওয়ের অংশ। ৪৮ কিলোমিটার দীর্ঘ এটি সেতুটি চীনের সবচেয়ে বড় দুটি শহরকে সংযুক্ত করেছে যেখানে ঘণ্টায় ৩০০ কিলোমিটার বেগে ট্রেন চলাচল করতে পারে। তাই এই রেলপথটি হাই স্পিড রেল পথ হিসেবেও পরিচিত। সেতুটি দেখতেও চোখে লেগে থাকার মতই। ২০১০ সালে সেতুটির নির্মাণ কাজ শেষ হলেও সেতুটির উপর দিয়ে দ্রুতগামী রেল চলাচলের জন্যে লাইন বসানের কারণে নির্মাণের ১ বছর পর ২০১১ সালে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তা জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়।

৬. ব্যাং না এক্সপ্রেসওয়ে

থাইল্যান্ডের সবচেয়ে বড় এবং একই সাথে পৃথিবীর ষষ্ঠ দীর্ঘতম সেতু ব্যাং না এক্সপ্রেসওয়ে। এই সেতুটি মূলত একটি এক্সপ্রেস হাইওয়ে। ২৭ মিটার প্রশস্থ ৬ লেনের এই সেতুটি ৫৪ কিলোমিটার দীর্ঘ। থাইল্যান্ডে আনুষ্ঠানিক ভাবে এটিকে বুরাফা উইথি এক্সপ্রেসওয়ে নামে ডাকা হয়। সেতুটি কোন বিশাল নদীর উপর স্থাপিত নয় বরং সেতুর একদম ছোট্ট একটা অংশের নিচ দিয়ে ছোট একটি নদী প্রবাহিত হয়েছে। ব্যাং না এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে ১৮ লক্ষ কিউবিক মিটার কনক্রিট লেগেছিল। আমেরিকা ও এশিয়ার যৌথ বিনিয়োগে ২০০০ সালে নির্মিত হয় এই সেতুটি। ২০০৮ সাল পর্যন্ত এই সেতুটি বিশ্বের দীর্ঘতম সেতু ছিলো

আরো জানুন: বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘতম ১০টি নদী

৫. উইনান উইহে গ্র্যান্ড ব্রিজ

চীনের রেল বিভাগের অন্তর্ভুক্ত পৃথিবীর পঞ্চম দীর্ঘতম এই সেতুটি চিনের জাংঝো ও জিয়ান শহর দুটিকে সংযুক্ত করেছে। ৭৯.৮ কিলোমিটার দীর্ঘ এই ব্রিজটি ২০০৮ সালে নির্মাণ কাজ শেষ হলেও তা বিভিন্ন বিষয় পরীক্ষার-নিরীক্ষার পর জনসাধারণের ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করা হয় ২০১০ সালের শেষের দিকে। এই ব্রিজটি তৈরি করতে কমপক্ষে ১০ হাজার শ্রমিকের প্রয়োজন পড়েছিল। ওই সময়ে এটিই ছিল বিশ্বের দীর্ঘতম সেতু তবে পরবর্তীতে সেই স্থান হারিয়ে বর্তমানে পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে।

৪. তিয়ানজিন গ্র্যান্ড ব্রিজ

পৃথিবীর চতুর্থ দীর্ঘতম তিয়ানজিন গ্র্যান্ড সেতুটি বেইজিং এবং সাংহাই এর মধ্যে দ্রুত গতি রেল চলাচলের জন্য একটি রেলপথ বায়োডাক্ট হিসেবে কাজ করে যার অবস্থান চীনের পূর্বে তিয়াঞ্জিন শহরের কাছে। ১১৩.৭ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সেতুটি ২০০৬ সালে নির্মাণ শুরু হয়ে শেষ হয় ২০১০ সালে। ২০১০ সালে নির্মাণ কাজ শেষ হলেও ২০১১ সালে সেতুটি জনসাধারণের ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করা হয় কারণ দীর্ঘ এক বছর ধরে নানা ধরনের পরীক্ষা নিরীক্ষা চলে এই সেতুর সক্ষমতা বিচার করার জন্য। এটি পৃথিবীর সর্বপ্রথম সেতু যা ১০০ কিলোমিটারের মাইলফলক অতিক্রম করে। এটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় রেলসেতুর মধ্যে একটি।

৩.  ক্যান্ডি গ্র্যান্ড ব্রিজ

পৃথিবীর তৃতীয় দীর্ঘতম ক্যান্ডি গ্র্যান্ড সেতুটি অবস্থানও  চীনের বেইজিংয়ে। সেতুটির দৈর্ঘ্য প্রায় ১১৫.৯ কিলোমিটার যা বেইজিং ও সাংহাই শহরকে সংযুক্ত করেছে। বিশেষভাবে তৈরি এই সেতুটি বড় ধরনের ভূমিকম্পে অটলভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে সক্ষম। ৩০৯২ পেয়ার সম্পন্ন এই ব্রিজটির কাজ ২০১০সালে সম্পন্ন হলে ব্রিজটি জনসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হয়।

আরো জানুন: বিশ্বের সবচেয়ে বড় ১০ টি দ্বীপ

২. চাংহুয়া-কোয়াশিউং ব্রিজ

চাংহুয়া-কোয়াশিউং রেলসেতুটি তাইওয়ানের অন্যতম ও পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম সেতু। ১৫৭.৩ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সেতুটি চাংহুয়া-কোয়াশিউং শহর দুটি কে যুক্ত করে তাইওয়ানের যোগাযোগ ব্যবস্থায় এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এই সেতুর সড়কপথের পাশাপাশি তাইওয়ানের দ্রুতগতির রেলপথ সংযুক্ত করা হয়েছে যা দেশটির পশ্চিমাঞ্চলীয় যোগাযোগ ব্যবস্থাকে আরও উন্নত করেছে। সেতুটির ডিজাইন এমনভাবে করা হয়েছে যেন যেকোনো ধরনের ভূমিকম্পের সময় অনায়াসে ট্রেন যাতায়াত করতে পারে। সর্বপ্রথম ২০০৭ সালে জনসাধারণের জন্য সেতুটি খুলে দেওয়া হয় এবং ২০১২ সাল পর্যন্ত প্রায় ২০ কোটি যাত্রী এই সেতুর উপর দিয়ে যাতায়াত করেছে।  

১. ডানইয়াং কুনশান গ্র্যান্ড ব্রিজ

চীনের জিয়াংসু প্রদেশে অবস্থিত এই সেতুটির দৈর্ঘ্য হচ্ছে ১৬৪.৮ কিলোমিটার যা চিনের শাংহাই ও নানজিং শহর দুটিকে সংযুক্ত করেছে। রেলযুক্ত এই সেতুটি নির্মাণ হয়েছে অনেকগুলো লেক, খাল ও নদীর ওপর দিয়ে। সেতুটির নির্মাণ কাজ ২০০৬ সালে শুরু হয়ে ৪ বছর টানা কাজ করার পর ২০১০ সালে সেতুটির নির্মাণ কাজ শেষ হয়। কাজ করেছেন অন্তত পক্ষে ১০ হাজার শ্রমিক আর খরচ হয় ৮.৫ বিলিয়ন ডলার বাংলাদেশি টাকায় যা প্রায় ৭৬ হাজার কোটি টাকারও বেশি। নানান পরীক্ষা নিরিক্ষার পর সেতুটি ২০১১ সালে জনসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হয়। ফলে চিনের উত্তরাঞ্চলের জনগণ বেশ উপকৃত হয়েছে। এখন পর্যন্ত এই সেতুটি বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘ সেতু হিসেবে নিজের নাম ধরে রেখেছে

এখন প্রশ্ন থেকে যায় আমাদের দেশের পদ্মা সেতু পৃথিবীর দীর্ঘতম সেতুগুলোর মধ্যে কততম ?

আমাদের পদ্মা সেতুর দৈর্ঘ্য ৬.১৫ কিলোমিটার, এবং সেই হিসেবে পদ্মা সেতু পৃথিবীর ১২২ তম দীর্ঘতম সেতু হিসেবে পৃথিবীর বুকে জায়গা পেয়েছে। তবে পদ্মা সেতু তার ভিত্তির দৈর্ঘ্য বা গভীরতার হিসেবে পৃথিবীর শীর্ষ এবং বিশ্বের বৃহত্তম নদীর সেতুগুলোর মধ্যে ২৫ তম স্থান দখল করেছে। কিন্তু পদ্মাসেতু বাংলাদেশের সবচেয়ে দীর্ঘ সেতু

এছাড়াও যদি আপনি নিয়মিত বিশ্বের ছোট ছোট অদ্ভুত, রহস্যময় ও আশ্চর্যজনক বিষয় সম্পর্কে জানতে চান তাহলে আমাদের সামাজিক মাধ্যমগুলোর সাথে যুক্ত থাকুন।

ফেইসবুক পেইজ: The Earth Bangla

ইউটিউব চ্যানেল: The Earth Bangla

ইনস্টাগ্রাম পেজ: The Earth Bangla

ফেইসবুক গ্রুপ: The Earth Bangla Family

Post a Comment

Please do not Enter any spam comment or Link in the comment Box

নবীনতর পূর্বতন