বিশ্বের শীর্ষ ধনী ১০টি মুসলিম দেশ

বিশ্বের প্রায় সকল অঞ্চলেই ইসলাম ধর্মের অনুসারীদের দেখতে পাওয়া যায়। এর মধ্যে দক্ষিণ এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য এবং আফ্রিকায় অধিকাংশ মুসলিম দেশগুলোর অবস্থান। এই মুসলিম দেশগুলো তাদের বিশাল মরুভূমি, অফুরন্ত তেলের ভান্ডার, আকাশচুম্বী ভবন এবং পর্যটনের জন্য অধিক পরিচিত। পাশাপাশি দেশগুলো আর্থিকভাবে অত্যন্ত শক্তিশালী এবং সমৃদ্ধ। The Earth Banglar সেরা ১০ সিরিজের আজকের পর্বে আমরা জানব মাথাপিছু আয়ের ভিত্তিতে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ১০টি মুসলিম দেশ সম্পর্কে।

১০. লিবিয়া

লিবিয়া উত্তর আফ্রিকার ভূমধ্যসাগরের দক্ষিণ তীরে অবস্থিত একটি দেশ। দেশটির রাজধানীর নাম ত্রিপোলি এবং জনসংখ্যা প্রায় ৭০ লাখ। মাথাপিছু আয় হিসাবে দেশটি বিশ্বের ১০ম ধনী মুসলিম দেশ। বর্তমানে দেশটির মাথাপিছু আয় ২২ হাজার ৯০০ মার্কিন ডলার। লিবিয়ার অর্থনীতি পেট্রোলিয়াম খাতের উপর নির্ভরশীল। লিবিয়ার প্রায় সমস্ত বৈদেশিক মুদ্রা পেট্রোলিয়াম রপ্তানি করে অর্জন করা হয়।

৯. মালয়েশিয়া

মালয়েশিয়া তেরোটি রাজ্য এবং তিনটি ঐক্যবদ্ধ প্রদেশ নিয়ে গঠিত দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার একটি দেশ। দেশটির রাজধানী শহর কুয়ালালামপুর এবং জনসংখ্যা প্রায় সাড়ে ৩ কোটি। মাথাপিছু আয় হিসাবে দেশটি বিশ্বের ৯ম ধনী মুসলিম দেশ। বর্তমানে দেশটির মাথাপিছু আয় ৩৩ হাজার ১১৩ মার্কিন ডলার। মালয়েশিয়ার অর্থনীতি মূলত মুক্তবাজার অর্থনীতি। চীন, সিঙ্গাপুর ও আমেরিকা দেশটির প্রধান বাণিজ্য সহযোগী দেশ। পাম তেল উৎপাদনে মালয়েশিয়া বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ যা তাদের অর্থনীতিতে একটি বড় ভূমিকা পালন করে।

আরো জানুন: বিশ্বের সবচেয়ে বড় ১০টি মুসলিম দেশ

৮. ওমান

ওমান আরব উপদ্বীপে দক্ষিণ-পূর্ব কোনাতে অবস্থিত একটি মরুভূমির দেশ। মাস্কাট ওমানের রাজধানী এবং জনসংখ্যা প্রায় ৪৫ লাখ। মাথাপিছু আয় হিসাবে দেশটি বিশ্বের ৮ম ধনী মুসলিম দেশ। বর্তমানে দেশটির মাথাপিছু আয় ৩৫ হাজার ২৮৬ মার্কিন ডলার। ওমানের শতকরা ৮০ ভাগেরও বেশি এলাকা মরুভূমি, ১৫% পর্বত এবং মাত্র ৩% উপকূলীয় সমভূমি। বেশির ভাগ লোকালয় সমুদ্র উপকূলে অবস্থিত। তাই ওমানের অর্থনীতি প্রধানত তাদের তেল খাতকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে, পাশাপাশি উপকূলীয় অঞ্চলে মাছ ধরা এবং সমুদ্রপথের ব্যবসায়িক কার্যক্রম ধারা তাদের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করেছে।

৭. তুরস্ক

তুরস্ক একটি ইউরেশিয়ান দেশ যা পশ্চিম এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপে অবস্থিত। দেশটির রাজধানী আঙ্কারা এবং জনসংখ্যা প্রায় সাড়ে ৮ কোটি। মাথাপিছু আয় হিসাবে দেশটি বিশ্বের ৭ম ধনী মুসলিম দেশ। বর্তমানে দেশটির মাথাপিছু আয় ৪১ হাজার ৪১২ মার্কিন ডলার। কৃষি, শিল্প এবং সেবা খাত ছাড়াও তুরস্কের পর্যটন শিল্প দেশটির অর্থনীতিতে বড় ধরনের অবদান রাখে। এছাড়া তুর্কি অর্থনীতির অন্যান্য খাতের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ব্যাংকিং খাত, নির্মাণ খাত, গার্মেন্টস, বিদ্যুৎ, তেল পরিশোধন, খাদ্য, লোহা, স্টিল, অটোমোটিভ ইত্যাদি।

৬. কুয়েত

কুয়েত মধ্যপ্রাচ্যের একটি ছোট তেল সমৃদ্ধ ও রাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র। এই দেশের রাজধানীর নাম কুয়েত সিটি এবং জনসংখ্যা প্রায় ৪৩ লাখ। মাথাপিছু আয় হিসাবে দেশটি বিশ্বের ষষ্ঠ ধনী মুসলিম দেশ। বর্তমানে দেশটির মাথাপিছু আয় ৫১ হাজার ৫২৮ মার্কিন ডলার। পূর্বে কুয়েত পারস্য উপসাগর অঞ্চলের নৌকা নির্মাণের কেন্দ্রস্থল ছিল। বর্তমানে কুয়েতের অর্থনীতি পেট্রোলিয়াম ভিত্তিক এবং ইস্পাত উৎপাদন কুয়েতের দ্বিতীয় বৃহত্তম শিল্প। এছাড়াও কুয়েতি দিনার বিশ্বের সকল মুদ্রাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে মূল্যবান মুদ্রা।

আরো জানুন: জনসংখ্যায় সবচেয়ে বড় ১০টি মুসলিম দেশ

৫. বাহরাইন

বাহরাইন পারস্য উপসাগরের পশ্চিম অংশের ৩৬টি দ্বীপ নিয়ে গঠিত একটি দ্বীপ রাষ্ট্র। দেশটির রাজধানী মানামা এবং জনসংখ্যা প্রায় ১৪ লাখ। মাথাপিছু আয় হিসাবে দেশটি বিশ্বের ৫ম ধনী মুসলিম দেশ। বর্তমানে দেশটির মাথাপিছু আয় ৫৭ হাজার ১৪২ মার্কিন ডলার। বাহরাইনের অর্থনীতি প্রধানত পেট্টোলিয়াম উৎপাদন, প্রক্রিয়াকরণ ও রিফাইনিং এর উপর নির্ভরশীল। শুধুমাত্র ১% ভূমি চাষযোগ্য হওয়ায় তারা নিজেদের প্রয়োজনীয় খাদ্য নিজেরা উৎপাদন করতে পারে না। এক্ষেত্রে দেশটির আমদানির উপর নির্ভর করে।

৪. সৌদি আরব

সৌদি আরব মধ্যপ্রাচ্যের একটি সার্বভৌম আরব রাষ্ট্র যা বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশ । দেশটির রাজধানী রিয়াদ এবং জনসংখ্যা প্রায় সাড়ে ৩ কোটি। মাথাপিছু আয় হিসাবে দেশটি বিশ্বের চতুর্থ ধনী মুসলিম দেশ। বর্তমানে দেশটির মাথাপিছু আয় ৬৭ হাজার মার্কিন ডলার। সৌদি আরবের মূল অর্থনীতি পেট্রোলিয়াম ভিত্তিক। সৌদি আরবে সমগ্র বিশ্বের ভূ-ভাগের ২০% খনিজ তেলের মজুদ রয়েছে। এছাড়াও সৌদি আরব ইসলামের পবিত্রতম স্থানগুলির মধ্যে অন্যতম। তাই প্রতিবছর লাখ লাখ মানুষ হজ করার জন্য এদেশে আসেন যা দেশটির রাজস্ব এর অন্যতম একটি মাধ্যম। 

৩. ব্রুনাই

ব্রুনাই দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার বোর্নিও দ্বীপের উত্তর উপকূলে অবস্থিত একটি দ্বীপ রাষ্ট্র। দেশটির রাজধানী বন্দর সেরি বেগাওয়ান এবং জনসংখ্যা প্রায় সাড়ে ৪ লাখ। মাথাপিছু আয় হিসাবে দেশটি বিশ্বের তৃতীয় ধনী মুসলিম দেশ। বর্তমানে দেশটির মাথাপিছু আয় ৭৪ হাজার ৯৫৫ মার্কিন ডলার। এই দেশের অর্থনীতি প্রায় সম্পূর্ণরূপে অপরিশোধিত তেল এবং প্রাকৃতিক গ্যাস রপ্তানির ওপর নির্ভর করে। দেশটির জনসংখ্যা অনেক কম হওয়ায় এদেশের নাগরিকদের জীবনযাত্রার মান অনেক উন্নত। একটি সমীক্ষা অনুসারে, ব্রুনাইয়ে প্রতি ১০০০ মানুষের মধ্যে ৭২১ জনেরই নিজস্ব গাড়ি রয়েছে।

আরো জানুন: বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী ১০টি মুসলিম দেশ

২. সংযুক্ত আরব আমিরাত

সংযুক্ত আরব আমিরাত মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলে আরব উপদ্বীপের সাতটি স্বাধীন রাষ্ট্রের একটি ফেডারেশন। দেশটির রাজধানী আবুধাবি এবং জনসংখ্যা প্রায় ৯২ লক্ষ যার অধিকাংশ অভিবাসী। মাথাপিছু আয় হিসাবে দেশটি বিশ্বের দ্বিতীয় ধনী মুসলিম দেশ। বর্তমানে দেশটির মাথাপিছু আয় ৭৮ হাজার ২৫৫ মার্কিন ডলার। পূর্বে এই দেশটি মুক্তা শিল্পের ওপর নির্ভরশীল থাকলেও বর্তমানে দেশটির অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি হল তেল এবং প্রাকৃতিক গ্যাস রপ্তানি। এছাড়াও দেশটির সবচেয়ে জনপ্রিয় শহর হচ্ছে দুবাই যা বিশ্বজুড়ে পর্যটকদের আকর্ষণের অন্যতম কারণ।

১. কাতার

কাতার মধ্য প্রাচ্যের আরব দেশ গুলির মধ্যে সবচেয়ে ছোট দেশ যা বিশ্বের সবচেয়ে ধনী মুসলিম দেশ হিসেবে পরিচিতি। কাতারের রাজধানী দোহা এবং জনসংখ্যা প্রায় সাড়ে ২৫ লাখ। বর্তমানে দেশটির মাথাপিছু আয় ১ লক্ষ ১৩ হাজার ৬৭৫ মার্কিন ডলার। মাত্র ৫০ বছর আগেও মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশটি ছিল ছোটখাটো মৎস্যশিল্প এবং মুক্তা আহরণের উপর নির্ভরশীল একটি দেশ, কিন্তু গত দুই দশকে দেশটি তেল রপ্তানির বিশ্বকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। মূলত তেল এবং প্রাকৃতিক গ্যাস রপ্তানি কাতারের বর্তমান অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি।

এছাড়াও যদি আপনি নিয়মিত বিশ্বের ছোট ছোট অদ্ভুত, রহস্যময় ও আশ্চর্যজনক বিষয় সম্পর্কে জানতে চান তাহলে আমাদের সামাজিক মাধ্যমগুলোর সাথে যুক্ত থাকুন।

ফেইসবুক পেইজ: The Earth Bangla

ইউটিউব চ্যানেল: The Earth Bangla

ইনস্টাগ্রাম পেজ: The Earth Bangla

ফেইসবুক গ্রুপ: The Earth Bangla Family

Post a Comment

Please do not Enter any spam comment or Link in the comment Box

নবীনতর পূর্বতন