বাংলাদেশের সেরা ১০টি দর্শনীয় স্থান

অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি এই বাংলাদেশে রয়েছে সমুদ্র সৈকত, প্রবাল দ্বীপ, পাহার, নদী, বন, পার্ক সহ ঐতিহাসিক বহু স্থাপনা ও নিদর্শন। বাংলাদেশে এমন সব সুন্দর স্থান আছে যা শুধু দেশের মধ্যেই সেরা নয় বরং বিশ্বমানের পর্যটন স্থান হিসেবে স্বীকৃত। আর এইসব জায়গা দেখার জন্য প্রতিবছর প্রচুর দেশি বিদেশি পর্যটকের ভিড় জমে। The Earth Banglar সেরা ১০ সিরিজের আজকের পর্বে আমরা আপনাদের জানাবো বাংলাদেশের সবচেয়ে সুন্দর ১০টি স্থান সম্পর্কে।

১০. টাঙ্গুয়ার হাওড়

টাঙ্গুয়ার হাওর বাংলাদেশের সিলেটের সুনামগঞ্জ জেলায় অবস্থিত একটি হাওর। স্থানীয় লোকজনের কাছে হাওড়টি নয়কুড়ি কান্দার ছয়কুড়ি বিল নামেও পরিচিত। প্রায় ১০০ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত এ হাওর বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মিঠা পানির জলাভূমি। টাঙ্গুয়ার হাওর ভিন্ন ভিন্ন ঋতুতে ভিন্ন ভিন্ন রূপ ধারণ করে। বর্ষাকাল টাঙ্গুয়ার হাওর ভ্রমণ এর সবচেয়ে উপযুক্ত সময়। তবে পাখি দেখতে হলে অবশ্যই শীতকালে যেতে হবে। প্রতিবছর নভেম্বর মাসের শুরুতেই সুদূর সাইবেরিয়া, অস্ট্রেলিয়া, চীন, মঙ্গোলিয়া, নেপালসহ বিভিন্ন শীতপ্রধান দেশ থেকে ছুটে আসে অতিথি পাখি। অথৈপানি, জলাবন, নীল আকাশ, পাহাড় ও চোখ জুড়ানো সবুজ এই হাওরকে অপরূপ সাজে সাজিয়েছে প্রকৃতি।

৯. জাফলং

জাফলং বাংলাদেশের সিলেট বিভাগের গোয়াইনহাট উপজেলায় অবস্থিত যা পর্যটকদের জন্য একটি বিখ্যাত জায়গা। ভারতের মেঘালয় সীমান্তে খাসিয়া জৈন্তা পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত জাফলং ঢাকা থেকে ২৯৫ কিলোমিটার আর সিলেট শহর থেকে ৬০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। জাফলং দর্শনীয় স্থান পিয়াইন নদীর স্বচ্ছ পানির ধারা, ঝুলন্ত ব্রিজ, উঁচু পাহাড়ে সাদা মেঘের খেলা জাফলংকে আরও আকর্ষণীয় ও সুন্দর করে তুলছে। এছাড়াও আরো দেখার মত রয়েছে, সংগ্রামপুঞ্জি ঝর্ণা, জৈন্তাপুর, তামাবিল, লালাখাল ইত্যাদি।

আরো জানুন: বাংলাদেশের ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট

৮. শ্রীমঙ্গল

শ্রীমঙ্গল বাংলাদেশের সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজার জেলার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত একটি উপজেলা। শ্রীমঙ্গলকে প্রায়ই বাংলাদেশের ‘চায়ের রাজধানী’ বলা হয়, এবং এটি তার চায়ের জন্য সবচেয়ে বিখ্যাত। তাছাড়াও রাবার, লেবু ও আনারস চাষ হয় শ্রীমঙ্গলে। শ্রীমঙ্গলের দর্শনীয় স্থান, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, হাম হাম জলপ্রপাত, মাধবপুর লেক, বাইক্কা বিল জলাভূমি অভয়ারণ্য, ইকো পার্ক ইত্যাদি যা পর্যটকদের যুগ যুগ ধরে আকৃষ্ট করে রেখেছে।

৭. নিলাচল

নীলাচল বাংলাদেশের বান্দরবান জেলা অন্যতম দর্শনীয় স্থান যাকে বাংলাদেশের দার্জিলিং বলা হয়। বান্দরবান শহর থেকে প্রায় ছয় কিলোমিটার দূরে টাইগারপাড়ার পাহাড়চূড়ায় গড়ে তোলা হয়েছে আকর্ষণীয় এই পর্যটন কেন্দ্র। ২০০৬ সালের পহেলা জানুয়ারি এই প্রকল্প উদ্বোধন করা হয়। এ প্রকল্পে রয়েছে শুভ্রনীলা,ঝুলন্ত নীলা, নীহারিকা এবং ‘ভ্যালেন্টাইন পয়েন্ট’ নামে পর্যটকদের জন্য আকর্ষনীয় বিশ্রামাগার। কমপ্লেক্সের মাঝে বাচ্চাদের খেলাধুলার ব্যবস্থা এবং বসার ব্যবস্থা রয়েছে। পাহাড়ের ঢালে ঢালে সাজানো হয়েছে এ জায়গাগুলো। নীলাচল থেকে সমগ্র বান্দরবান শহর একনজরে দেখা যায়। নীলাচলে বাড়তি আকর্ষণ হল এখানকার নীল রং এর রিসোর্ট যার নাম নীলাচল স্কেপ রিসোর্ট। মেঘমুক্ত আকাশে কক্সবাজারের সমুদ্রসৈকতের অপুর্ব দৃশ্য নীলাচল থেকে পর্যটকেরা উপভোগ করতে পারেন।

৬. নিঝুম দ্বীপ

নিঝুম দ্বীপ বাংলাদেশের নোয়াখালী জেলার হাতিয়া উপজেলার অন্তর্গত ছোট্ট একটি দ্বীপ। এ দ্বীপের মাটি চিকচিকে বালুকাময়, তাই জেলেরা নিজ থেকে নামকরণ করে বালুর চর। ১৯৪০ এর দশকে এই দ্বীপটি বঙ্গবসাগর হতে জেগে ওঠা শুরু করে। ২০০১ সালে বাংলাদেশ সরকার পুরো দ্বীপটিকে জাতীয় উদ্যান হিসেবে ঘোষণা করে। বর্তমানে নিঝুমদ্বীপ নাম হলেও স্থানীয় লোকেরা এখনো এই দ্বীপকে বাইল্যার ডেইল বা বাল্লারচর বলেই সম্বোধন করে। বাংলাদেশের বনবিভাগ ৭০-এর দশকে পরীক্ষামূলকভাবে চার জোড়া হরিণ ছাড়ে। এখন নিঝুম দ্বীপ হরিণের অভয়ারণ্য। ম্যানগ্রোভ বনের মধ্যে সুন্দরবনের পরে নিঝুম দ্বীপকে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন বলে অনেকে দাবি করেন

আরো জানুন: বাংলাদেশ সম্পর্কে অজানা ও অবাক করা ১০ টি তথ্য

৫. কুয়াকাটা

কুয়াকাটা বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের পটুয়াখালী জেলার একটি শহর ও পর্যটনকেন্দ্র। এখানে রয়েছে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত যা পর্যটকদের কাছে সাগরকন্যা হিসেবে পরিচিত। ১৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সৈকত বিশিষ্ট কুয়াকাটা বাংলাদেশের অন্যতম নৈসর্গিক সমুদ্র সৈকত। এটি বাংলাদেশের একমাত্র সৈকত যেখান থেকে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত দুটোই দেখা যায়। ধারণা করা হয় ১৮ শতকে মুঘল শাসকদের দ্বারা বার্মা থেকে বিতাড়িত হয়ে আরাকানরা এই অঞ্চলে এসে বসবাস শুরু করে। তখন এখানে সুপেয় জলের অভাব পূরণ করতে তারা প্রচুর কুয়ো বা কুপ খনন করেছিলেন, সেই থেকেই এই অঞ্চলের নাম হয়ে যায় কুয়াকাটা।

৪. সাজেক ভ্যালি

সাজেক ভ্যালি রাঙ্গামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার অন্তর্গত সাজেক ইউনিয়নের একটি বিখ্যাত পর্যটন স্থল। এটি রাঙ্গামাটি জেলার সর্বউত্তরে মিজোরাম সিমান্তে অবস্থিত। ভূ-পৃষ্ঠ থেকে ১৮০০ ফুট উচ্চতার সাজেক ভ্যালি যেন এক প্রাকৃতিক ভূ-স্বর্গ। এখানে প্রকৃতি সকাল বিকাল রঙ বদলায়। ২৪ ঘণ্টায় প্রকৃতির তিনটা রূপই দেখা পাবেন এখানে। কখনো খুবই গরম, একটু পরেই হটাৎ বৃষ্টি এবং তার কিছু পরেই হয়তো চারদিক ঢেকে যায় মেঘের চাদরে! চারপাশে সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো বিস্তীর্ণ পাহাড় সারি, আর তুলোর মতো মেঘ, এরই মধ্যে মাথা উঁচু করে দাড়িয়ে রয়েছে নৈস্বর্গিক সাজেক ভ্যালি। এছাড়াও রাঙামাটির অনেকটা অংশই দেখে যায় সাজেক ভ্যালি থেকে তাই এই ভ্যালিকে রাঙামাটির ছাদ বলা হয়।

৩. সুন্দরবন

প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও জীব বৈচিত্র্যের লীলাভূমি সুন্দরবন হল পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট যা বঙ্গোপসাগরের উপকূলবর্তী অঞ্চল খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট জেলা জুড়ে বিস্তৃত। তবে সুন্দরবনের মোট বনাঞ্চলের ৬০% রয়েছে বাংলাদেশে আর বাকি ৪০% রয়েছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে। সুন্দরবনে রয়েছে পৃথিবীর অন্যতম বাঘের একটি প্রজাতি যার নাম রয়েল বেঙ্গল টাইগার। এছাড়াও সুন্দরবনে নানান ধরণের পাখি, চিত্রা হরিণ, কুমির, সাপসহ আরো অসংখ্য প্রজাতির প্রাণী দেখতে পাওয়া যায়। ১৯৯৭ সালে ইউনেস্কো সুন্দরবনকে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। সুন্দরবনের অপরূপ সৌন্দর্য সকল পর্যটকদের মুগ্ধতার অন্যতম কারণ।

আরো জানুন: বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল ১০টি শহর

২. কক্সবাজার

কক্সবাজার বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত একটি শহর এবং পর্যটন কেন্দ্র। কক্সবাজারে রয়েছে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত পৃথিবীর সবচেয়ে বড় প্রাকৃতিক সমুদ্রসৈকত যা এখানকার পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ। নীল জলরাশি, সারি সারি ঝাউবন, বালুময় সমুদ্রসৈকত, পানি ও বাতাসের শব্দে সবসময় মুখরিত থাকে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত। এছাড়াও মহেশখালী, কুতুবদিয়া, সোনাদিয়া, শাহপরী ও সেন্টমার্টিন কক্সবাজারকে আরো দৃষ্টিনন্দন ও আকর্ষণীয় করে তুলেছে। কক্সবাজার তার নৈসর্গিক সৌন্দর্য্যের জন্য প্রতিবছর লাখ-লাখ পর্যটনের আনাগোনা থাকে। এমনকি বিদেশ হতেও অসংখ্য পর্যটক ভ্রমন করতে আসে কক্সবাজারে।

১. সেন্টমার্টিন

বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন যা বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিনে এবং কক্সবাজার জেলা থেকে প্রায় ১২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত একটি ক্ষুদ্র দ্বীপ। প্রচুর নারিকেল পাওয়া যায় বলে স্থানীয়ভাবে সেন্টমার্টিন দ্বীপকে নারিকেল জিঞ্জিরাও বলা হয়ে থাকে। অপূর্ব সৌন্দর্য্যমন্ডিত প্রাকৃতিক এই দ্বীপটির মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশ মানুষকে তার সৌন্দর্য্য দ্বারা বিমোহিত করে। বাংলাদেশের সমুদ্রপ্রেমীদের কাছে এটি ব্যাপক পরিচিত একটি নাম। বিখ্যাত লেখক, কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের দারুচিনি দ্বীপ নামের পূর্ণদৈর্ঘ্য ছায়াছবি দ্বারা এই দ্বীপটির পরিচিতি আরো বেড়ে যায়। এখানের নারিকেল বাগান, সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত সব থেকে বড় আকর্ষণ পর্যটকদের কাছে।

এছাড়াও যদি আপনি নিয়মিত বিশ্বের ছোট ছোট অদ্ভুত, রহস্যময় ও আশ্চর্যজনক বিষয় সম্পর্কে জানতে চান তাহলে আমাদের সামাজিক মাধ্যমগুলোর সাথে যুক্ত থাকুন।

ফেইসবুক পেইজ: The Earth Bangla

ইউটিউব চ্যানেল: The Earth Bangla

ইনস্টাগ্রাম পেজ: The Earth Bangla

ফেইসবুক গ্রুপ: The Earth Bangla Family

Post a Comment

Please do not Enter any spam comment or Link in the comment Box

নবীনতর পূর্বতন