পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীনতম ১০টি শহর
পৃথিবীর সবচেয়ে পুরাতন শহরের নাম মনে করতে চাইলে সবার আগে চলে আসে গ্রিসের এথেন্সের কথা। কেননা মানব সভ্যতার বিকাশে এথেন্স নগর ছিল সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক, দার্শনিক চর্চার কেন্দ্রবিন্দু। তবে এই পৃথিবীতে এমন অনেক শহর রয়েছে যেগুলো গড়ে উঠেছিল আজ থেকে কয়েক হাজার বছর আগে। তবে সেই প্রাচীন নগরগুলোর বেশির ভাগই এখন মৃত। তবুও কালের পরিক্রমায় আজও কিছু শহর বেঁচে আছে। The Earth Banglar সেরা ১০ সিরিজের আজকের পর্বে আমরা আপনাদের জানাবো বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীনতম ১০টি শহর সম্পর্কে।
১০. এথেন্স, গ্রিস
গ্রীসের রাজধানী এবং বৃহত্তম শহর এথেন্স। গ্রীক জ্ঞানের দেবী এথেনার নামে এই নগরেরে নামকরণ করা হয়। এটি খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে নির্মিত হয়েছিল। পার্থেনন মন্দির প্রাচীন এথেন্সের অন্যতম বিখ্যাত মন্দির। এটি খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে অ্যাক্রোপলিস পর্বতের উপর নির্মিত হয়েছিল। এছাড়াও এথেন্সকে গণতন্ত্রের জন্মস্থান বলা হয়ে থাকে। পঞ্চম শতাব্দীতে এথেন্স তার উন্নতির শিখরে পৌঁছেছিল এবং এই সময়কালটি এথেনিয়ান গণতন্ত্রের স্বর্ণযুগ হিসাবে পরিচিত।
৯. বৈরুত, লেবনন
বৈরুত লেবাননের রাজধানী এবং দেশের বৃহত্তম শহর। এই শহরের সাথে জড়িয়ে আছে কমপক্ষে ৫০০০ বছরের ইতিহাস। সাংস্কৃতিক, প্রশাসনিক ও অর্থনৈতিক দিক থেকেও দেশটির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শহর এটি। এ শহরে প্রথম জনবসতি গড়ে উঠেছিল খ্রিস্টপূর্ব ৩০০০ সালে। প্রায় ১৪০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে ফেরাউনের চিঠিতে উল্লেখ্য পাওয়া যায় এই শহরের নাম। বর্তমানে প্রায় ২২ লক্ষ লোকের বাস ভূমধ্যসাগরের পাড়ে অবস্থিত এই শহরে। বর্তমানে এটি একটি আধুনিক শহর ও পর্যটন আকর্ষণে পরিণত হয়েছে।
আরো জানুন: বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল ১০টি শহর
৮. গাজিয়ানটেপ, তুরস্ক
তুরস্কের দক্ষিণে আনাতোলিয়া অঞ্চলে সিরিয়ার সীমান্তের কাছে অবস্থিত এই শহরটি পৃথিবীর অন্যতম প্রাচীন শহর। এখানে মানুষের বসবাস শুরু হয় খ্রিস্টপূর্ব ৩৬৫০ সাল থেকে। বর্তমানে ২০ লক্ষেরও বেশি অধিবাসীবিশিষ্ট নগরীটি জনসংখ্যার বিচারে তুরস্কের ৬ষ্ঠ বৃহত্তম নগরী। সিরিয়ার আলেপ্পো শহর থেকে মাত্র ৯৭ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই শহরটি ভৌগলিক অবস্থানগত দিক থেকে ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে যুগে যুগে।
৭. জেরুজালেম, ইসরায়েল
ধর্মীয় ইতিহাসের দিক থেকে জেরুজালেম একটি ঐতিহাসিক নগরী। ইহুদি, খ্রিস্টান ও ইসলাম ধর্মের অনুসারীদের কাছে জেরুজালেম একটি পবিত্র নগরী। প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন থেকে অনুমান করা হয়, প্রায় ৩০০০ খ্রিস্টপূর্ব সময় হতে বিকাশ শুরু হয় জেরুজালেম শহরের। জেরুজালেমকে কেন্দ্র করে ফিলিস্তিন ও ইসরায়েল এর মাঝে এখনো যুদ্ধাবস্থা বিরাজমান। জেরুজালেমের রয়েছে অসাধারণ কিছু দর্শনীয় এবং পবিত্র স্থান। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ওয়েস্টার্ন ওয়াল, ডোম অফ রক, আল-আকসা মসজিদ, এবং অলিভ পর্বত।
৬. প্লভদিভ, বুলগেরিয়া
প্লভদিভ বুলগেরিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর যা ইউরোপের প্রাচীনতম শহরগুলির মধ্যে অন্যতম। প্রাচীন এই শহরটি গড়ে উঠেছিল তিনটি পাহাড়ের পাদদেশে। ধারণা করা হয়, ৬০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের দিকে নিওলিথিক যুগে এখানে প্রথম বসতি স্থাপন করা হয়েছিল। প্রথমে এটি ছিল একটি রোমান শহর ছিল। পরবর্তীতে বিভিন্ন সময় গ্রীক, গথ, স্লাভ ও বাইজান্টাইন ও ওসমানীয়দের অধীনে ছিল এই শহর। পরে এটি বুলগেরিয়ার অংশ হয়ে যায়।
আরো জানুন: বিশ্বের সবচেয়ে পুরনো ১০টি ভাষা
৫. শুশ, ইরান
শুশ শহর ইরানের পশ্চিম অংশে খুজেস্তান প্রদেশে অবস্থিত যা সুসা নামেও পরিচিত। এটি পৃথিবীর প্রাচীনতম শহরগুলোর একটি। প্রাচীন শহর সুসা ছিল এলম সভ্যতার আবাসস্থল। প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন সমূহ থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে শুশ শহরের বয়স অন্তত সাড়ে ৬ হাজার বছর। খ্রিস্টপূর্ব ৪২০০ সালে এখানে প্রথম জনবসতি গড়ে ওঠে। হিব্রু বাইবেলেও এই শহরের উল্লেখ্য পাওয়া যায়। বর্তমানে প্রায় এক লক্ষ লোকের বাস এই শহরে। পারস্য সভ্যতার গুরুত্বপূর্ণ এই শহর বর্তমানে ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের অন্তর্ভুক্ত।
৪. দামেস্ক, সিরিয়া
দামেস্ক মধ্যপ্রাচ্যের প্রাচীন শহরগুলির মধ্যে একটি শহর। প্রত্নতাত্ত্বিকরা মনে করেন যে, এই অঞ্চলটিতে ৮০০০ থেকে ১০০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের মধ্যে কোনো এক সময় প্রথম জনবসতি গড়ে উঠেছিল। তাই অনেকেই দাবি করেন দামেস্কই পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীনতম শহর। তবে এখনও সেই দাবির পক্ষে জোরালো প্রমাণ মেলেনি। কিন্তু জনবসতির দিক থেকে এটিই বিশ্বের প্রাচীনতম শহর। বিখ্যাত বীর অ্যালেকজান্ডার দ্য গ্রেট দামেস্ক জয় করেছিলেন। এছাড়াও, রোমান, আরব এবং অটোমানদের শাসনে ছিল এই প্রাচীন নগরী। বিখ্যাত বীর অ্যালেকজান্ডার দ্য গ্রেট সর্বপ্রথম দামেস্ক জয় করেছিলেন। পরবর্তীতে, রোমান, আরব এবং অটোমানদের শাসনে ছিল এই প্রাচীন নগরী।
৩. আলেপ্পো, সিরিয়া
আলেপ্পো সিরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত সিরিয়ার সবচেয়ে বড় ও জনবহুল শহর। এটি সিরিয়ার রাজধানী দামেস্ক থেকে ৩১০ কিলোমিটার দরে অবস্থিত। । এ শহরে মানুষ প্রথম বাস করতে শুরু করে খ্রিস্টপূর্ব ৪৩০০ সালে। খ্রিস্টপূর্ব বিংশ শতাব্দীতে আলেপ্পো নগরের কথা প্রাচীন ফারাওদের পাণ্ডুলিপিতে উল্লেখ রয়েছে। খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ এবং পঞ্চম শতাব্দীর মাঝের একটি সময়কালে এবং তারপর ৬৩৬ খ্রিস্টাব্দে এটি ইসলামিক রাজ্যের অংশ হয়ে ওঠে। তবে চলমান গৃহযুদ্ধে মারাত্নকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে এই ঐতিহাসিক শহরটি। সম্প্রতি আলেপ্পো শহরটিকে ইসলামী সংস্কৃতির রাজধানী উপাধিতে ভূষিত করা হয়েছে।
আরো জানুন: বিশ্বের সবচেয়ে পুরনো ১০টি মসজিদ
২. বাইব্লস, লেবানন
ফিনিশিও সভ্যতার অন্যতম একটি নিদর্শন বাইব্লস শহর যার আরবী নাম জুবাইল। শহরটি লেবাননের শহর হলেও গ্রীকদের দ্বারা নামকরণ করা হয়েছে। এখান থেকেই এসেছে ইংরেজি শব্দ বাইবেল। পৃথিবীর দ্বিতীয় প্রাচীন এই নগরের ইতিহাস প্রায় ৭০০০ বছরের পুরনো এবং খ্রিস্টপূর্ব ৫০০০ সালে এ শহরে জনবসতি গড়ে ওঠে। প্রাচীন মিশরীয় সময়কালে, বাইব্লস একটি প্রধান বাণিজ্য কেন্দ্রে পরিণত হয়েছিল। প্রাচীন দুর্গ, মন্দির এবং অসংখ্য প্রাচীন নিদর্শন এর জন্য শহরটি ১৯৮৪ সালে ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসাবে মনোনীত হয়েছিল।
১. জেরিকো, ফিলিস্তিন
ফিলিস্তিনের অন্তর্ভুক্ত জেরিকো নগরীকে বলা হয় পৃথিবীর প্রাচীনতম জীবিত নগরী। আরবিতে জেরিকোর নাম আরিয়াহ বা সুবাস। জেরিকো শহরের সাথে জড়িয়ে আছে প্রায় ১১০০০ বছরের মানব সভ্যতার ইতিহাস। তবে ধারণা করা হয় যে, খ্রিস্টপূর্ব ৯০০০ সালে প্রথম জনবসতি গড়ে ওঠে এ শহরে। জর্ডান নদীর পশ্চিম পাড়ে অবস্থিত এই শহরটির বর্তমান লোকসংখ্যা প্রায় ৩০ হাজার। চাষাবাদের জন্য উপযুক্ত তাপমাত্রা থাকত বলে সহজেই কৃষিভিত্তিক বসতি গড়ে উঠে এখানে। ইতিহাসে জেরিকো শহরকে কেন্দ্র করে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন নানা সময় সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে। ১৯৬৭ সালা থেকে জেরিকো ইসরায়েল বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে আছে।
এছাড়াও যদি আপনি নিয়মিত বিশ্বের ছোট ছোট অদ্ভুত, রহস্যময় ও আশ্চর্যজনক বিষয় সম্পর্কে জানতে চান তাহলে আমাদের সামাজিক মাধ্যমগুলোর সাথে যুক্ত থাকুন।
ফেইসবুক পেইজ:
ইউটিউব চ্যানেল:
ইনস্টাগ্রাম পেজ: The Earth Bangla
ফেইসবুক গ্রুপ:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Please do not Enter any spam comment or Link in the comment Box