সামরিক শক্তিতে এশিয়ার শীর্ষ ১০টি দেশ
এশিয়া মহাদেশ আধুনিক যুগে একটি উল্লেখযোগ্য বৈশ্বিক শক্তি হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে। এর অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক প্রভাব বিশ্বজুড়ে অনুভূত হয়েছে। সামাজিক ও অর্থনৈতিক সক্ষমতার পাশাপাশি, সামরিক শক্তিকে একটি দেশের শক্তিমত্তা বিচার করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সূচক হিসেবে ধরা হয়। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, এশিয়ার দেশগুলোতে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হয়েছে এবং কিছু এশিয়ান দেশ সামরিক শক্তিতে বৈশ্বিক মঞ্চে শক্তিশালী দেশ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। The Earth Banglar সেরা ১০ সিরিজের আজকের পর্বে আমরা আপনাদের জানাবো Global Power Index অনুসারে সামরিক শক্তিতে এশিয়ার সবচেয়ে শক্তিশালী ১০টি দেশ সম্পর্কে।
১০. ইসরায়েল
ইসরায়েল বিশ্বের একটি ছোট্ট দেশ, তবে এটি একটি শক্তিশালী সামরিক বাহিনী এবং সমৃদ্ধ অর্থনীতির অধিকারী। ইসরায়েলকে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী সামরিক শক্তিগুলির মধ্যে একটি হিসাবে বিবেচনা করা হয়, এবং এটি মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম প্রভাবশালী দেশ। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে অগ্রসর হওয়ায় সামরিক শক্তির বিচারেও ইসরায়েল বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী রাষ্ট্র হতে পেরেছে। ইসরাইল হচ্ছে পৃথিবীর একমাত্র দেশ যারা যুদ্ধের সময় মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেম ব্যবহার করেছে। ইসরায়েল জ্ঞান-বিজ্ঞান ও গবেষণার জন্য বিশ্বে পরিচিত হয়ে থাকলেও Global Power Index অনুযায়ী ০.২৭৫৭ স্কোর নিয়ে ইসরায়েল এশিয়ার ১০ম শক্তিশালী দেশ হিসেবে অবস্থান করছে। বর্তমানে ইসরাইলের সামরিক বাজেট প্রায় ২৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
৯. ইরান
ইরান একটি মধ্যপ্রাচ্যের দেশ যা তার সামরিক শক্তি, অর্থনৈতিক প্রভাব এবং ভূ-রাজনৈতিক অবস্থান সহ বেশ কয়েকটি কারণে একটি শক্তিশালী দেশ হিসাবে বিবেচিত হয়। দীর্ঘ তিন দশক ইরানের ওপর পশ্চিমা অবরোধ এবং ইরাক যুদ্ধ হওয়ার পরেও সামরিক সক্ষমতার দিক থেকে ০.২৭১২ স্কোর নিয়ে ইরান এশিয়ার ৯ম শক্তিশালী দেশ। ইরানের প্রতিরক্ষা বিভাগে বর্তমানে মোট সদস্য সংখ্যা প্রায় ১০ লাখ। সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনী নিয়ে ইরানের প্রতিরক্ষা বাহিনী গঠিত। তবে ইরানে দুই ধরনের সেনাবাহিনী রয়েছে। প্রথাগত সেনাবাহিনী ও বৈপ্লবিক সুরক্ষা বাহিনী। বর্তমানে ইরানের সামরিক বাজেট প্রায় ২৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ইরানের ১৯ বছর বয়সী সকল নাগরিকদের দীর্ঘ ১৮ মাসের সেনা প্রশিক্ষণ নেয়া বাধ্যতামূলক।
আরো জানুন: বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী ১০টি দেশ
৮. ইন্দোনেশিয়া
ইন্দোনেশিয়া দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একটি শক্তিশালী সামরিক শক্তি। প্রাকৃতিক সম্পদের প্রাচুর্য, দক্ষ জনশক্তিসহ নানা কারনে ইন্দোনেশিয়া অর্থনীতিতে অনেকটা এগিয়ে আর এরই প্রভাব পড়েছে তাদের সামরিক শক্তিকে। Global Power Index অনুযায়ী ০.২২২১ স্কোর নিয়ে ইন্দোনেশিয়া এশিয়ার ৮ম শক্তিশালী এবং বিশ্বের ১৩ তম শক্তিশালী দেশ। প্রতিরক্ষা বিভাগে প্রায় ১০ লাখ ৮০ হাজার সদস্য সংখ্যা নিয়ে ইন্দোনেশিয়ার বিশ্বের বৃহত্তম সামরিক শক্তিগুলোর একটি। দেশটি বৈদেশিক অস্ত্র ক্রয়ের পাশাপাশি নিজস্ব প্রযুক্তিতে নিজেদের দেশেও অস্ত্র উৎপাদন করে থাকে। বর্তমানে ইন্দোনেশিয়ার সামরিক বাজেট প্রায় ৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
৭. তুরস্ক
তুরস্ক একটি শক্তিশালী সামরিক শক্তি, এবং তুরস্কের সেনাবাহিনী বিশ্বের বৃহত্তম সেনাবাহিনীগুলির মধ্যে একটি। এটি এশিয়া এবং ইউরোপের সংযোগস্থলে অবস্থিত একটি আন্তঃমহাদেশীয় দেশ। সামরিক সক্ষমতার দিক থেকে ০.২০১৬ স্কোর নিয়ে তুরস্ক এশিয়ার ৭ম শক্তিশালী এবং বিশ্বের ১১ তম শক্তিশালী দেশ। বর্তমানে তুরস্কের প্রতিরক্ষা বিভাগে মোট সদস্য সংখ্যা প্রায় ৮ লাখ। NATO এবং G-২০ এর সদস্য হওয়ার কারণে, তুরস্কের বৈশ্বিক ক্ষমতায় একটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে। তুরস্কের সামরিক বাজেট প্রায় ১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। দেশটি তার সামরিক বাহিনীকে নিয়মিতভাবে আধুনিকীকরণ করছে, এবং নতুন অস্ত্র ও প্রযুক্তি কেনার জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করছে।
৬. জাপান
এশিয়া মহাদেশের সবচেয়ে শক্তিশালী দেশের তালিকায় ৬ষ্ঠ স্থানে রয়েছে জাপান। দেশটির GPI স্কোর ০.১৭১১ যা বিশ্বের ৮ম শক্তিশালী দেশ। অর্থনৈতিক, সামরিক এবং রাজনৈতিক শক্তির কারণে বৈশ্বিক পরিমন্ডলে দেশটির ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে জাপানের সামরিক বাজেট প্রায় ৫১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং দেশটির প্রতিরক্ষা বিভাগে বর্তমানে সক্রিয় সদস্য সংখ্যা প্রায় ২ লক্ষ ৪৭ হাজার জন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পরাজিত হওয়ার পর থেকে জাপানি সেনাবাহিনীকে সীমিত করা হয়েছে। এখন শুধু আত্মরক্ষা ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় জাপানের সেনারা কাজ করে। তার পরেও জাপান বর্তমানে তার সামরিক বাহিনীকে আধুনিকায়ন এবং শক্তিশালী করার জন্য বিনিয়োগ করছে।
আরো জানুন: বিশ্বের চিরশত্রু ১০টি দেশ
৫. পাকিস্তান
পাকিস্তান মুসলিম বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী এবং একমাত্র পারমাণবিক অস্ত্রসমৃদ্ধ দেশ। দেশটির GPI স্কোর ০.১৬৯৪ যা এশিয়ার ৫ম এবং বিশ্বের ৭ম শক্তিশালী দেশ। সেনা, নৌ, বিমান, মেরিন, আধাসামরিক এবং এসপিডি বাহিনীর সমন্বয়ে পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনী গঠিত। তাছাড়া পাকিস্তানের রয়েছে শক্তিশালী সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা ‘আইএসআই’। বর্তমানে পাকিস্তানের সামরিক বাজেট প্রায় ১২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং দেশটির প্রতিরক্ষা বিভাগে বর্তমানে সক্রিয় সদস্য সংখ্যা প্রায় ৭ লক্ষ ৫৪ হাজার জন। পাকিস্তান তার সামরিক বাহিনীকে আধুনিকায়ন এবং সজ্জিত করতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীন, রাশিয়া এবং অন্যান্য দেশ থেকে আধুনিক অস্ত্র এবং সরঞ্জাম আমদানি করে থাকে।
৪. দক্ষিণ কোরিয়া
বর্তমান সময়ে দক্ষিণ কোরিয়া বিশ্বের অন্যতম সামরিক শক্তিশালী একটি দেশ। এর একটি বড় এবং সুসজ্জিত সামরিক বাহিনী রয়েছে যা মূলত উত্তর কোরিয়ার থেকে নিজেদের দেশকে রক্ষার জন্য তৈরি করা হয়েছে। ০. ১৫০৫ GPI স্কোর নিয়ে সামরিক শক্তির দিক থেকে দক্ষিন কোরিয়া এশিয়ার চতুর্থ এবং বিশ্বের ষষ্ঠ তম শক্তিশালী দেশ। বর্তমানে দক্ষিন কোরিয়ার সামরিক বাজেট প্রায় ৪২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং দেশটির প্রতিরক্ষা বিভাগে সক্রিয় সদস্য সংখ্যা প্রায় ৫ লক্ষ ৫৫ হাজার জন। দক্ষিণ কোরিয়ার সেনাবাহিনী বিশ্বের বৃহত্তম সেনাবাহিনীগুলির মধ্যে একটি। তাই বিশাল অর্থনীতির পাশাপাশি, সামগ্রিকভাবে দক্ষিণ কোরিয়া একটি শক্তিশালী সামরিক শক্তি যা উত্তর কোরিয়ার হুমকি মোকাবেলা এবং আঞ্চলিক শান্তি রক্ষায় কাজ করে থাকে।
৩. ভারত
সামরিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক শক্তির বিবেচনায় ভারত এশিয়ার তৃতীয় শক্তিশালী দেশ। দেশটির GPI স্কোর ০.১০২৫ যা বিশ্বের চতুর্থ শক্তিশালী সামরিক শক্তি। ভারতের বিশাল সৈন্যসংখ্যা, বিস্তৃত অস্ত্রভাণ্ডার এবং অর্থনৈতিক ক্ষমতা দেশটিকে একটি উল্লেখযোগ্য সামরিক শক্তি করে তোলে। ভারতের সামরিক শক্তির মূল ভিত্তি হল তার বিশাল সৈন্যসংখ্যা, যা বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম। দেশটির প্রতিরক্ষা বিভাগে বর্তমানে সক্রিয় সদস্য সংখ্যা প্রায় ১৪ লক্ষ ৪৪ হাজার জন। যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের পর সবচেয়ে বেশি সক্রিয় সেনা সদস্য রয়েছে ভারতের। জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনীতে প্রায় এক লাখ ভারতীয় সেনাসদস্য কাজ করছে। বর্তমানে ভারতের সামরিক বাজেট প্রায় ৭৩.৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ভারত তার সামরিক বাহিনীকে আরও আধুনিক এবং কার্যকর করার জন্য প্রতিনিয়ত বিনিয়োগ বৃদ্ধি করছে।
আরো জানুন: বিশ্বের পারমাণবিক শক্তিধর ১০টি দেশ
২. চীন
বর্তমানে চীন বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী এবং এশিয়ার দ্বিতীয় সামরিক শক্তিশালী দেশ। গত কয়েক দশকে চীনের সামরিক শক্তি খুব দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশটির GPI স্কোর ০.০৭২২ যা চীনকে বিশ্বের তৃতীয় শক্তিশালী সামরিক শক্তি হিসাবে স্থান দিয়েছে। অর্থাৎ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়ার পরেই চীনের অবস্থান। বর্তমানে চীনের সামরিক বাজেট প্রায় ২৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার যা বিশ্বের মোট সামরিক ব্যয়ের প্রায় ১৩%। দেশটির প্রতিরক্ষা বিভাগে বর্তমানে সক্রিয় সদস্য সংখ্যা প্রায় ২২ লক্ষ ৯৩ হাজার জন। এছাড়া চীনের রয়েছে স্বীকৃত পারমাণবিক বোমা ও সর্বাধুনিক মিসাইল ব্যবস্থা। তাই চীনের সামরিক শক্তি বৃদ্ধি আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা পরিস্থিতিতে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য পশ্চিমা দেশগুলিও চীনের সামরিক শক্তি বৃদ্ধির কারণে উদ্বিগ্ন এবং তারা চীনের সামরিক আগ্রাসনকে প্রতিহত করার জন্য পদক্ষেপ নিচ্ছে।
১. রাশিয়া
রাশিয়া এশিয়ার সবচেয়ে সামরিক শক্তিশালী দেশ। ইউরোপ এবং এশিয়ার মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোগস্থলে অবস্থিত এই দেশটি বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তি। দেশটিতে একটি বিশাল এবং আধুনিক সামরিক বাহিনী রয়েছে যা স্থল, সমুদ্র এবং আকাশে বিস্তৃত। বর্তমানে দেশটির প্রতিরক্ষা বিভাগে বর্তমানে সক্রিয় সদস্য সংখ্যা প্রায় ১২ লক্ষ ৫৪ হাজার জন। দেশটির GPI স্কোর ০.০৭১৪ যা বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম শক্তিশালী সামরিক শক্তি। এছাড়াও রাশিয়া বিশ্বের বৃহত্তম পারমাণবিক অস্ত্রশক্তির অধিকারী যাদের কাছে প্রায় ৬,২৫৭ পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে। তাই রাশিয়ার সামরিক শক্তি তার আঞ্চলিক আধিপত্য বজায় রাখা এবং বিশ্বব্যাপী তার প্রভাব প্রসারিত করার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার। রাশিয়ার সামরিক বাজেট প্রায় ৮২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। সব মিলিয়ে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী এশিয়ার শীর্ষস্থানে অবস্থান করছে।
এছাড়াও যদি আপনি নিয়মিত বিশ্বের ছোট ছোট অদ্ভুত, রহস্যময় ও আশ্চর্যজনক বিষয় সম্পর্কে জানতে চান তাহলে আমাদের সামাজিক মাধ্যমগুলোর সাথে যুক্ত থাকুন।
ফেইসবুক পেইজ:
ইউটিউব চ্যানেল:
ইনস্টাগ্রাম পেজ: The Earth Bangla
ফেইসবুক গ্রুপ:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Please do not Enter any spam comment or Link in the comment Box