এশিয়ার ক্ষুদ্রতম ১০টি দেশ

আয়তনে এশিয়া মহাদেশ পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মহাদেশ হলেও এই মহাদেশেই পৃথিবীর অন্যতম কিছু ছোট দেশ রয়েছে যাদের ভৌগোলিক অবস্থান এবং আয়তন এশিয়ার ক্ষুদ্রতম দেশ হিসেবে পরিচিতি দিয়েছে। এই দেশগুলোর অধিকাংশই এশিয়ার বিভিন্ন দ্বীপ ও উপদ্বীপ দ্বারা গঠিত। The Earth Banglar সেরা ১০ সিরিজের আজকের পর্বে আমরা আপনাদের জানাবো এশিয়ার সবচেয়ে ছোট ১০টি দেশ সম্পর্কে।

১০. কুয়েত

কুয়েত পারস্য উপসাগরের একেবারে উত্তর-পশ্চিম কোণে অবস্থিত একটি ছোট ও তেল সমৃদ্ধ রাজতান্ত্রিক দেশ। তেলের মজুদ ও রপ্তানি তাদের অর্থনীতির প্রধান চালিকা শক্তি। এটি এশিয়ার ১০ম ক্ষুদ্রতম দেশ, যার আয়তন প্রায় ১৭,৮১৮ বর্গকিলোমিটার। কুয়েতের রাজধানী এবং বৃহত্তম শহর হল কুয়েত সিটি। কুয়েতে বর্তমানে প্রায় ৪.২  মিলিয়ন লোক বাস করে যার মধ্যে ২.৯ মিলিয়ন বিদেশী। তবে কুয়েতের নয়টি দ্বীপের মধ্যে ওয়ারবাহ এবং বুবিয়ান দ্বীপে এখনও কোনো জনবসতি গড়ে ওঠেনি। এছাড়াও সৌদি আরবের সাথে কুয়েতের সীমান্ত প্রায় ১৫৫ মাইল বিস্তৃত যা নির্ধারিত হয়েছিল ১৯২২ সালের আল-উগাইর চুক্তির মাধ্যমে।

৯. পূর্ব তিমুর

পূর্ব তিমুর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং ওশেনিয়ার মধ্যবর্তী এলাকায় অবস্থিত একটি দেশ যা তিমুর-লেস্তে নামেও পরিচিত। এটি ইন্দোনেশিয়া দ্বারা বেষ্টিত এবং তিমুর দ্বীপের পূর্ব অর্ধাংশ জুড়ে বিস্তৃত। প্রায় ১৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা বিশিষ্ট পূর্ব তিমুর এশিয়ার নবম ক্ষুদ্রতম দেশ। দেশটির রাজধানী এবং বৃহত্তম শহর হল দিলি। পূর্বে এখানে পর্তুগিজ উপনিবেশ ছিল, যা ১৯৭৫ সালে স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিল। পরবর্তীতে, ইন্দোনেশিয়া এই দ্বীপটি দখল করে এবং ১৯৭৬ সালে এটিকে তাদের একটি প্রদেশ হিসাবে সংযুক্ত করে। তবে দীর্ঘস্থায়ী গৃহযুদ্ধ এবং আন্তর্জাতিক চাপের কারণে, ইন্দোনেশিয়া ২০০২ সালে পূর্ব তিমুর থেকে তাদের সৈন্য প্রত্যাহার করে এবং দেশটিকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে স্বীকৃতি পায়।

আরো জানুন: এশিয়া মহাদেশ

৮. কাতার

কাতার হল একটি তেল-সমৃদ্ধ দেশ যা মধ্যপ্রাচ্যের পারস্য উপসাগরের উত্তর-পূর্বে অবস্থিত। আরব উপদ্বীপের মত কাতারও একটি উত্তপ্ত ও শুষ্ক মরু এলাকা। এটি এশিয়ার ৮ম ক্ষুদ্রতম দেশ, যার আয়তন প্রায়  ১১,৫৮৬ বর্গকিলোমিটার। কাতারের রাজধানী এবং বৃহত্তম শহর হল দোহা। দেশটির বেশির ভাগ লোক রাজধানী দোহা শহরে বাস করে। বর্তমানে কাতারের মোট জনসংখ্যা ২৭ লক্ষ যার মাত্র ১৪ শতাংশ কাতারের বাসিন্দা। আর বাকি ৮৬ শতাংশ লোকই বাংলাদেশ, ভারত,পাকিস্তান, মিশর, নেপাল এবং শ্রীলঙ্কা থেকে আসা অভিবাসী শ্রমিক। আয়তনে ও জনসংখ্যার ছোট হলেও মাথাপিছু আয়ের হিসেবে কাতার বিশ্বের সবচেয়ে ধনী দেশগুলির একটি। দেশটিতে খনিজ তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসের বিশাল মজুদ রয়েছে যা রপ্তানি করে মূলত কাতার একটি উচ্চ আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে।

৭. লেবানন

লেবানন হল একটি মধ্যপ্রাচ্যের দেশ যা ভূমধ্যসাগরের পূর্ব তীরে অবস্থিত। এর উত্তর পূর্বে সিরিয়া এবং দক্ষিণে ইসরায়েলের সাথে সীমানাযুক্ত। লেবাননের আয়তন প্রায় ১০,৪৫২ বর্গ কিলোমিটার যা এশিয়ার সপ্তম ক্ষুদ্রতম দেশ। লেবাননের রাজধানী এবং বৃহত্তম শহর হল বৈরুত যা দেশটির অর্থনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। লেবাননের জনসংখ্যা প্রায় ৬ মিলিয়ন, যার মধ্যে প্রায় অর্ধেক রাজধানী বৈরুতে বাস করে। দেশের বেশিরভাগ মানুষ আরব, তবে তুর্কি, গ্রীক এবং আর্মেনীয়রাও উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় বাস করে। ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল, পূর্ব এশিয়া এবং ভারতের মধ্যে একটি বাণিজ্য রুট হিসাবে দেশটির ভূমিকার কারণে, লেবানন "মধ্য প্রাচ্যের মুক্তা" খেতাব অর্জন করেছে।

৬. সাইপ্রাস

সাইপ্রাস হল  পূর্ব ভূমধ্যসাগরে অবস্থিত একটি দ্বীপ রাষ্ট্র। এটি ভৌগোলিকভাবে  এশিয়া মহাদেশের অন্তর্গত হলেও দেশটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্যতম সদস্য। এটি আয়তনে ৯২৫৪ বর্গকিলোমিটার যা এশিয়ার ষষ্ঠ ক্ষুদ্রতম দেশ এবং দেশটির জনসংখ্যা প্রায় ১.২ মিলিয়ন। সাইপ্রাস এর রাজধানী নিকোসিয়া। এই শহরটি দুই ভাগে বিভক্ত যেখানে উত্তর অংশটি তুর্কি প্রজাতন্ত্র উত্তর সাইপ্রাস (TRNC) দ্বারা নিয়ন্ত্রিত এবং দক্ষিণ অংশটি সাইপ্রাস প্রজাতন্ত্র দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। পূর্বে দ্বীপটি গ্রীক এবং রোমানদের দ্বারা শাসিত হয়েছিল, এবং এটি ক্রুসেড এবং অটোমান সাম্রাজ্যের অধীনে ছিল। সাইপ্রাস ১৯৬০ সালে স্বাধীনতা লাভ করে, কিন্তু ১৯৭৪ সালে তুরস্কের আক্রমণের পর দ্বীপটি বিভক্ত হয়ে যায়।

আরো জানুন: এশিয়ার সবচেয়ে উন্নত ১০টি দেশ

৫. ফিলিস্তিন

ফিলিস্তিন মধ্যপ্রাচ্যের একটি অঞ্চল, যা ভূমধ্যসাগরের পূর্ব উপকূলে এবং জর্ডান নদীর পশ্চিমে অবস্থিত। এটি একটি ঐতিহাসিক এবং ধর্মীয়ভাবে গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল, যেটি ইহুদি, খ্রিস্টধর্ম এবং ইসলামের জন্য অত্যন্ত পবিত্র। প্রায় ৫ মিলিয়ন জনসংখ্যার দেশ ফিলিস্তিনের আয়তন ৬,০২০ বর্গ কিলোমিটার যা এশিয়ার সবচেয়ে ছোট দেশগুলোর মধ্যে পঞ্চম। ১৯৬৭ সাল থেকে, ফিলিস্তিনের দাবি করা বেশিরভাগ এলাকা দখল করে চলেছে ইসরায়েল। যার ফলে ফিলিস্তিনিদের অঞ্চল ধীরে ধীরে ছোট হয়ে যাচ্ছে। দেশটির রাজধানী জেরুজালেম যদিও বর্তমানে শহরটি ইসরাইলের দখলে রয়েছে। এছাড়াও ফিলিস্তিন রাষ্ট্রটি জাতিসংঘের প্রায় ১৪৬ টি সদস্য রাষ্ট্র দ্বারা স্বীকৃত।

৪. ব্রুনাই

ব্রুনাই দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একটি ছোট্ট দেশ যার আয়তন ৫,৭৬৫ বর্গ কিলোমিটার। এটি একটি রাজতান্ত্রিক ইসলামী দেশ যা বোর্নিও দ্বীপের উত্তর উপকূলে অবস্থিত। এছাড়া, বোর্নিও দ্বীপের একমাত্র স্বাধীন দেশ হিসেবে স্বীকৃত দেশ এই ব্রুনাই। আয়তনের হিসেবে ব্রুনাই এশিয়ার চতুর্থ ক্ষুদ্রতম দেশ। ব্রুনাইয়ের রাজধানী হল বন্দর সেরি বেগাওয়ান। এটি একটি তেল-সমৃদ্ধ দেশ এবং এর জনসংখ্যা প্রায় সাড়ে ৪ লাখ। দেশটির জনসংখ্যা অনেক কম হওয়ায় এদেশের নাগরিকদের জীবনযাত্রার মান অনেক উন্নত। বিশাল প্রাকৃতিক গ্যাস এবং পেট্রোলিয়াম মজুদ থাকার কারণে ব্রুনাইকে বিশ্বের অন্যতম ধনী রাষ্ট্র হিসাবে গণ্য করা হয়।

৩. বাহরাইন

পারস্য উপসাগরে এশিয়ার আরেকটি ক্ষুদ্রতম দ্বীপরাষ্ট্র বাহরাইনযা পারস্য উপসাগরের পশ্চিম অংশের ৩৬টি দ্বীপ নিয়ে গঠিত। বাহরাইন দ্বীপটি, সিত্রা, মুহাররাক দ্বীপ এবং হাওয়ার দ্বীপপুঞ্জ দ্বীপগুলির মধ্যে সবচেয়ে বড়। ৭৮৬ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে থাকা দেশটিতে এশিয়ার তৃতীয় ক্ষুদ্রতম দেশ। দেশটির রাজধানী মানামা এবং জনসংখ্যা প্রায় ১৫ লাখ। বাহরাইনের মোট এলাকার প্রায় ৯২% মরুভূমি, এবং এর বাসিন্দাদের ক্রমাগত ধুলো ঝড় মোকাবেলা করে টিকে থাকতে হয়। শুধুমাত্র ১% ভূমি চাষযোগ্য হওয়ায় দেশটির আমদানির উপর নির্ভর করে। এছাড়াও  বাহরাইনের অর্থনীতি প্রধানত পেট্টোলিয়াম উৎপাদন, প্রক্রিয়াকরণ ও রিফাইনিং এর উপর নির্ভরশীল।

আরো জানুন: এশিয়ার সবচেয়ে ধনী ১০টি দেশ

২. সিঙ্গাপুর

সিঙ্গাপুর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মালয়েশিয়া এবং ইন্দোনেশিয়ার মধ্যে অবস্থিত একটি দ্বীপরাষ্ট্র। সিঙ্গাপুর প্রণালী ইন্দোনেশিয়া থেকে দেশটিকে আলাদা করেছে এবং জোহর প্রণালী এটিকে মালয়েশিয়া থেকে বিভক্ত করেছে। এশিয়া মহাদেশের দ্বিতীয় ক্ষুদ্রতম এই দেশটির আয়তন মাত্র ৭৩৩ বর্গকিলোমিটার যেখানে দেশটির মোট জনসংখ্যা প্রায় ৫৬ লক্ষ ৩৭ হাজার। তবে সমুদ্রতল থেকে ভূমি পুনরুদ্ধার করার ফলে অন্যান্য দেশ সিঙ্গাপুরকে তার ভূখণ্ডের আয়তন বাড়ানোর সুযোগ করে দিয়েছে। ছোট দেশ হলেও এখানে তামিল, মালয় ম্যান্ডারিন ও ইংরেজি ভাষাভাষী মানুষ রয়েছে। আয়তনের তুলনায় এত বিপুল জনসংখ্যা থাকা সত্ত্বেও দেশটি বিশ্বের অন্যতম ধনী একটি দেশ। সিঙ্গাপুর একটি আধুনিক এবং উন্নত দেশ, যা তার অর্থনীতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা এবং পর্যটন শিল্পের জন্য বিশ্বব্যাপী পরিচিত।

১. মালদ্বীপ

মালদ্বীপ এশিয়া মহাদেশের সবচেয়ে ছোট এবং বিশ্বের নবম ক্ষুদ্রতম দেশ যা ভারত মহাসাগরের উত্তর-পূর্ব অংশে অবস্থিত। দেশটির আয়তন মাত্র ২৯৮ বর্গকিলোমিটার। ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ১০০০ এরও বেশি দ্বীপ নিয়ে এই দেশটি গঠিত। দেশটির রাজধানী এবং বৃহত্তম শহর হল মালে। আয়তনে ছোট হলেও এ দেশে প্রায় সাড়ে ৪ লাখের বেশি মানুষ বসবাস করে। তাই আয়তন এবং জনসংখ্যার দিক থেকে মালদ্বীপ এশিয়া মহাদেশের সবচেয়ে ক্ষুদ্রতম দেশ। মালদ্বীপ তার সুন্দর সমুদ্র সৈকত, নীল জল এবং সাদা বালির জন্য বিখ্যাত। তবে অপরূপ সৌন্দর্যের এই দেশটি বিশ্বের সবচেয়ে নিচু দেশ যার সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে গড় উচ্চতা মাত্র ১.৫ মিটার। তাই আশঙ্কা করা হচ্ছে যে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারনে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পেলে আগামি ৩০ বছরের মধ্যে দেশটি পুরোপুরি সমুদ্রতলে হারিয়ে যেতে পারে।


এছাড়াও যদি আপনি নিয়মিত বিশ্বের ছোট ছোট অদ্ভুত, রহস্যময় ও আশ্চর্যজনক বিষয় সম্পর্কে জানতে চান তাহলে আমাদের সামাজিক মাধ্যমগুলোর সাথে যুক্ত থাকুন।

ফেইসবুক পেইজ: The Earth Bangla

ইউটিউব চ্যানেল: The Earth Bangla

ইনস্টাগ্রাম পেজ: The Earth Bangla

ফেইসবুক গ্রুপ: The Earth Bangla Family


Post a Comment

Please do not Enter any spam comment or Link in the comment Box

নবীনতর পূর্বতন