এশিয়ার সেরা ১০টি দেশ

যখন কোনো সার্বভৌম দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন এর পাশাপাশি সামাজিক উন্নয়ন, জীবনযাত্রার মান এবং প্রযুক্তি গত অবকাঠামোর ব্যাপক উন্নয়ন ঘটে, মূলত সেই দেশ গুলোকে আমরা উন্নত দেশ বলে থাকি। এশিয়া মহাদেশে অনেক উন্নত দেশ থাকলেও উন্নত দেশ বলতে আমরা আমেরিকা বা ইউরোপের দেশগুলোকে বুঝি থাকে। তবে এশিয়া মহাদেশেও এমন অনেক দেশ রয়েছে যেগুলো আমেরিকা ইউরোপের দেশগুলোর চেয়েও বেশি উন্নত। The Earth Banglar সেরা ১০ সিরিজের আজকের পর্বে আমরা আপনাদের জানাবো এশিয়ার সবচেয়ে উন্নত ১০টি দেশ সম্পর্কে।

১০. ব্রুনাই

ব্রুনাই দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার একটি দ্বীপরাষ্ট্র। ০.৮২৯ HDI স্কোর নিয়ে এটি এশিয়ার দশম উন্নত দেশ এবং বিশ্বে ৫১তম অবস্থানে রয়েছে। এই দেশের মানুষের গড় আয়ু প্রায় ৭৪ বছর এবং সাক্ষরতার হার প্রায় ৯৭%। ১৯৮৪ সালে এই দেশটি ব্রিটিশ শাসন থেকে স্বাধীনতা লাভ করে। এই দেশটির অর্থনীতি প্রায় সম্পূর্ণরূপে অপরিশোধিত তেল এবং প্রাকৃতিক গ্যাস রপ্তানির ওপর নির্ভর করে। এটি বিশ্বের সবচেয়ে ধনী দেশগুলোর মধ্যে একটি যেখানে দেশটির নাগরিকদের বিনামূল্যে শিক্ষা ও চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়।

৯. কাতার 

কাতার পশ্চিম এশিয়া তথা মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশ। ০.৮৫৫ HDI স্কোর নিয়ে এটি এশিয়ার সবচেয়ে উন্নত দেশের তালিকায় নবম স্থানে রয়েছে এবং বিশ্বে ৪২তম অবস্থানে রয়েছে। এই দেশের মানুষের গড় আয়ু প্রায় ৭৯ বছর এবং সাক্ষরতার হার প্রায় ৯৩%। ১৯৭১ সালে এই দেশটি ব্রিটিশ শাসন থেকে স্বাধীনতা লাভ করে। সেসময় এই দেশটি মৎস্যশিল্প এবং মুক্তা আহরণের উপর নির্ভরশীল ছিল। তবে বর্তমানে এই দেশটির অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি হল তেল এবং প্রাকৃতিক গ্যাস রপ্তানি।

আরো জানুন: (এশিয়া মহাদেশ) (ইউরোপ মহাদেশ) (আফ্রিকা মহাদেশ)

৮. সাইপ্রাস

সাইপ্রাস ভূমধ্যসাগরে অবস্থিত একটি দ্বীপ রাষ্ট্র। ০.৮৯৬ HDI স্কোর নিয়ে এটি এশিয়ার সবচেয়ে উন্নত দেশের তালিকায় অষ্টম স্থানে রয়েছে এবং বিশ্বে ২৯তম অবস্থানে রয়েছে। ভৌগোলিক দিক থেকে সাইপ্রাস এশিয়া মহাদেশের মধ্যে অবস্থিত হলেও দেশটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্যতম সদস্য। এই দেশের মানুষের গড় আয়ু প্রায় ৮১ বছর এবং সাক্ষরতার হার প্রায় ৯৯%। ১৯৬০ সালে এই দেশটি ব্রিটিশ শাসন থেকে স্বাধীনতা লাভ করে। সাইপ্রাস একসময় একটি কৃষি নির্ভর দেশ ছিল। তবে বিগত ৩০ বছরে দেশটির অর্থনীতি ম্যানুফ্যাকচারিং এবং সার্ভিস সেক্টর নির্ভর হয়ে উঠেছে।

৭. সংযুক্ত আরব আমিরাত

সংযুক্ত আরব আমিরাত মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশ। ০.৯১১ HDI স্কোর নিয়ে এটি এশিয়ার সবচেয়ে উন্নত দেশের তালিকায় সপ্তম স্থানে রয়েছে এবং বিশ্বে ২৬তম অবস্থানে রয়েছে। এই দেশের মানুষের গড় আয়ু প্রায় ৭৮ বছর এবং সাক্ষরতার হার প্রায় ৯৮%। ১৯৭১ সালে এই দেশটি ব্রিটিশ শাসন থেকে স্বাধীনতা লাভ করে। বর্তমানে দেশটির আয়ের মূল উৎস হল তেল এবং প্রাকৃতিক গ্যাস রপ্তানি। পাশাপাশি দেশটির আকর্ষণীয় পর্যটন খাত এর অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। 

৬.  তাইওয়ান 

তাইওয়ান পূর্ব এশিয়ার একটি দেশ। ০.৯১৬ HDI স্কোর নিয়ে এটি এশিয়ার সবচেয়ে উন্নত দেশের মধ্যে ষষ্ঠ এবং বিশ্বে ২৪তম অবস্থানে রয়েছে। দেশটির মানুষের গড় আয়ু প্রায় ৮১ বছর এবং সাক্ষরতার হার প্রায় ৯৬%। এশিয়ার সবচেয়ে উন্নত দেশের তালিকায় থাকলেও তাইওয়ান আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত কোন দেশ নয়, এটিকে মূলত চীনের একটি অংশ হিসেবে গণ্য করা হয়। তাইওয়ানের প্রধান রপ্তানি পণ্য হল ইলেকট্রনিক্স, ধাতু এবং ধাতব পণ্য, প্লাস্টিক, রাবার, রাসায়নিক দ্রব্য এবং বিভিন্ন যন্ত্রপাতি।

আরো জানুন: উচ্চ শিক্ষার জন্য সেরা ১০টি দেশ

৫. ইসরায়েল 

ইসরায়েল পশ্চিম এশিয়ার একটি দেশ। ০.৯১৯ HDI স্কোর নিয়ে এটি এশিয়ার পঞ্চম উন্নত দেশ এবং বিশ্বে ২২তম অবস্থানে রয়েছে। এই দেশের মানুষের গড় আয়ু প্রায় ৮২ বছর এবং সাক্ষরতার হার প্রায় ৯৭%। দেশটির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক খাতগুলি হল প্রযুক্তি, ম্যানুফ্যাকচারিং এবং ডায়মন্ড পলিশিং। এছাড়াও দেশটির একটি শক্তিশালী প্রযুক্তি খাত রয়েছে। ১৯৪৮ সালে ইসরায়েল ব্রিটিশ প্যালেস্টাইন থেকে স্বাধীনতা লাভ করে।

৪. জাপান 

জাপান পূর্ব এশিয়ার একটি দ্বীপ রাষ্ট্র। ০.৯২৫ HDI স্কোর নিয়ে এটি এশিয়ার সবচেয়ে উন্নত দেশের মধ্যে চতুর্থ এবং বিশ্বে ১৯ তম অবস্থানে রয়েছে। এই দেশের মানুষের গড় আয়ু প্রায় ৮৪ বছর এবং সাক্ষরতার হার প্রায় ৯৯%। জাপান এর দক্ষ ও উৎপাদনশীল কর্মশক্তি এবং জৈবপ্রযুক্তি, তথ্য প্রযুক্তি ও রোবোটিক্সের মতো ক্ষেত্রে গবেষণার জন্য পরিচিত। দেশটির প্রধান আয়ের উৎস ম্যানুফ্যাকচারিং, কৃষিকাজ এবং পর্যটন শিল্প। জাপান এশিয়ার সবচেয়ে সুন্দর দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম।

৩. দক্ষিণ কোরিয়া

দক্ষিণ কোরিয়া পূর্ব এশিয়ার একটি দেশ। ০.৯২৫ HDI স্কোর নিয়ে এটি এশিয়ার সবচেয়ে উন্নত দেশের তালিকায় তৃতীয় স্থানে রয়েছে এবং বিশ্বে ১৯তম অবস্থানে রয়েছে। এই দেশের মানুষের গড় আয়ু প্রায় ৮৩ বছর এবং সাক্ষরতার হার প্রায় ৯৮%। ১৯৪৫ সালে এই দেশটি জাপান থেকে স্বাধীনতা লাভ করে। দক্ষিণ কোরিয়া বিশ্বের সবচেয়ে প্রযুক্তিগতভাবে উন্নত দেশগুলোর একটি। দেশটির বৃহত্তম শিল্পগুলো হল ইলেকট্রনিক্স, অটোমোবাইল, টেলিযোগাযোগ, জাহাজ নির্মাণ, রাসায়নিক দ্রব্য এবং স্টিল।

আরো জানুন: বিশ্বের সবচেয়ে বড় ১০টি অর্থনীতির দেশ

২. সিঙ্গাপুর

সিঙ্গাপুর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় অবস্থিত একটি ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্র। ০.৯৩৯ HDI স্কোর নিয়ে সিঙ্গাপুর এশিয়ার দ্বিতীয় সবচেয়ে উন্নত দেশ এবং বিশ্বে ১২তম অবস্থানে রয়েছে। এই দেশের মানুষের গড় আয়ু প্রায় ৮৩ বছর এবং সাক্ষরতার হার প্রায় ৯৭%। ১৯৬৫ সালে ব্রিটেন এবং মালয়েশিয়ার কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভ করে এই দেশটি। স্বাধীনতার পর সিঙ্গাপুরকে বেকারত্ব, বিপুল জনসংখ্যার আবাসন এবং জমির ঘাটতি সহ বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছিল। এরপরেও কঠোর পরিশ্রম এবং উদ্ভাবনী শক্তির মাধ্যমে বর্তমানে সিঙ্গাপুর এশিয়ার সবচেয়ে ধনী দেশ। দেশটির আয়ের মূল উৎস হল ইলেকট্রনিক্স, জৈবপ্রযুক্তি এবং রাসায়নিক দ্রব্য রপ্তানি।

১. হংকং

হংকং হল চীনের একটি বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চল যা অনেকের কাছে দেশ বলেও বিবেচিত। চীনের অন্তর্ভুক্ত হলেও হংকং এর রয়েছে নিজস্ব মুদ্রা ও অর্থনীতি ব্যবস্থা। ০.৯৫২ HDI স্কোর নিয়ে হংকং এশিয়ার সবচেয়ে উন্নত দেশ এবং বিশ্বে এর অবস্থান ৪র্থ। এই দেশের মানুষের গড় আয়ু প্রায় ৮৫ বছর এবং সাক্ষরতার হার প্রায় ৯৫%। পূর্বে এটি একটি ব্রিটিশ শাসিত অঞ্চল ছিল, পরে ১৯৯৭ সালে হংকং চীনের অন্তর্ভুক্ত হয়। হংকং এর অর্থনীতি প্রধানত বিভিন্ন ফাইনান্সিয়াল সেক্টরের উপর নির্ভরশীল।

এছাড়াও যদি আপনি নিয়মিত বিশ্বের ছোট ছোট অদ্ভুত, রহস্যময় ও আশ্চর্যজনক বিষয় সম্পর্কে জানতে চান তাহলে আমাদের সামাজিক মাধ্যমগুলোর সাথে যুক্ত থাকুন।

ফেইসবুক পেইজ: The Earth Bangla

ইউটিউব চ্যানেল: The Earth Bangla

ইনস্টাগ্রাম পেজ: The Earth Bangla

ফেইসবুক গ্রুপ: The Earth Bangla Family

Post a Comment

Please do not Enter any spam comment or Link in the comment Box

নবীনতর পূর্বতন