বিশ্বের বৃহত্তম ১০টি জাহাজ

বিশ্বের অধিকাংশ মানুষের ভ্রমণের জন্য প্রিয় বাহন হচ্ছে জাহাজ। বিশাল সাগরের বুক জুড়ে সমুদ্র বিলাস করাটা অনেকেরই স্বপ্নের ভ্রমণ হতে পারে। তাই পর্যটকদের এই সেবাটি নিরাপত্তার সহিত প্রদান করার জন্য জাহাজ নির্মাণ সংস্থাগুলোও তৈরি করছে বিলাসবহুল সব জাহাজ। এগুলো বিশালতার দিক থেকে প্রতিনিয়ত একে অপরকে ছাড়িয়ে যাওয়ার প্রতিযোগিতায় নেমে পড়েছে। আমরা অনেকেই টাইটানিককে বিশ্বের সবচেয়ে বড় জাহাজ হিসেবে জেনে থাকলেও গত কয়েক বছরে টাইটানিকের চেয়েও অনেক বড় এবং বিলাসবহুল জাহাজ নির্মাণ হয়েছে। The Earth Banglar সেরা ১০ সিরিজের আজকের পর্বে আমরা আপনাদের জানাবো বিশ্বের সবচেয়ে বড় ১০টি জাহাজ সম্পর্কে।

১০. MS আইওনা

MS আইওনা হল যুক্তরাজ্যভিত্তিক ক্রুজ কোম্পানি P&O দ্বারা পরিচালিত একটি ক্রুজ জাহাজ। জাহাজটি ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে তার প্রথম যাত্রা শুরু করে এবং তখন এটি P&O এর সবচেয়ে বড় ক্রুজ জাহাজ ছিল। বর্তমানে এটি বিশ্বের ১০ম বৃহত্তম জাহাজ। এর দৈর্ঘ্য ১,১৩০ ফুট এবং ওজন প্রায় ১ লাখ ৮৪ হাজার গ্রস টনেজ। এটি একসাথে ৫,২০০ যাত্রী এবং ১,৭৬২ জন ক্রু ধারণ করতে পারে। MS আইওনা এর নির্মাণে ১.৫ বিলিয়ন ডলার খরচ হয়েছিল। আইওনা বেশ কয়েকটি ক্রিসমাস ক্রুজে অংশগ্রহণ করে, যা সাধারণত নভেম্বর থেকে জানুয়ারী পর্যন্ত চলে। এই ক্রুজগুলি বিভিন্ন গন্তব্যে যায়, যার মধ্যে রয়েছে ক্যারিবিয়ান, ইউরোপ এবং উত্তর আমেরিকা।

৯. কোস্টা তোসকানা

কোস্টা তোসকানা হল একটি ইতালিয়ান মালিকানাধীন ক্রুজ জাহাজ যা কোস্টা ক্রুজ লাইন কোম্পানি দ্বারা পরিচালিত হয়। এটি কোস্টা স্মারালদার পরে কোস্টা ক্রুয়েজের দ্বিতীয় বৃহত্তম জাহাজ। এর দৈর্ঘ্য ১,১০৬ ফুট এবং ওজন প্রায় ১ লাখ ৮৫ হাজার গ্রস টনেজ যা বর্তমানে বিশ্বের ৯ম বৃহত্তম জাহাজ। ২০২১ সালে প্রথম বাণিজ্যিক ভাবে সেবা প্রদান শুরু করে জাহাজটি। জাহাজটিতে সর্বোচ্চ ৫,২২৪ জন যাত্রী এবং ১,৬৭৮ জন ক্রু ধারণ করতে পারে। এর নির্মাণ খরচ ছিল প্রায় ৯৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। জাহাজটি ভূমধ্যসাগর, উত্তর ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা এবং ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জে ভ্রমণ করে।

আরো জানুন: বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘতম ১০টি টানেল

৮. কোস্টা স্মারালদা

কোস্টা স্মারালদা হল কোস্টা ক্রুজ লাইনের সবচেয়ে বড় এবং বিশ্বের ৮ম বৃহত্তম জাহাজ। ২০১৯ সালে প্রথম বাণিজ্যিক সেবা প্রদান শুরু করে জাহাজটি। এর দৈর্ঘ্য ১,১০৬ ফুট এবং ওজন প্রায় ১ লাখ ৮৫ হাজার গ্রস টনেজ। জাহাজটিতে সর্বোচ্চ ৬,৫৫৪ জন যাত্রী এবং ১,৬৪৬ জন ক্রু ধারণ করতে পারে। এর নির্মাণ খরচ ছিল প্রায় ৯৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এটি গ্রীষ্মকালীন মৌসুমে ভূমধ্যসাগর এবং শীতকালীন মৌসুমে ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে ভ্রমণ করে। জাহাজটি ইউরোপ, উত্তর আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য এবং উত্তর আমেরিকা সহ বিশ্বের বিভিন্ন গন্তব্যে ভ্রমণ করে।

৭. MS আরভিয়া

MS আরভিয়া হল একটি ব্রিটিশ মালিকানাধীন ক্রুজ জাহাজ যা P&O ক্রুজস কোম্পানি দ্বারা পরিচালিত হয়। এটি জার্মানির পাপেনবার্গের মেয়ার ভের্ফট দ্বারা নির্মিত হয়েছিল এবং এটি যুক্তরাজ্যের ক্রুজ বাজারে নির্মিত সবচেয়ে বড় এবং উন্নত জাহাজ। জাহাজটি ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে তার প্রথম যাত্রা শুরু করে। এর দৈর্ঘ্য ১,১৩০ ফুট এবং ওজন প্রায় ১ লাখ ৮৬ হাজার গ্রস টনেজটন যা বর্তমানে বিশ্বের সপ্তম বৃহত্তম জাহাজ। জাহাজটিতে সর্বোচ্চ ৫,২০০ জন যাত্রী এবং ১,৮০০ জন ক্রু ধারণ করতে পারে। এর নির্মাণ খরচ ছিল প্রায় ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এটি যুক্তরাজ্য, ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা এবং ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জের গন্তব্যগুলিতে ভ্রমণ করে।

৬. MSC ওয়ার্ল্ড ইউরোপা

MSC ওয়ার্ল্ড ইউরোপা হল MSC ক্রুজের কোম্পানি দ্বারা নির্মিত একটি বিশ্ব মানের ক্রুজ জাহাজ। এটি ২০২২ সালের শেষে চালু হয়েছিল এবং এটি MSC ক্রুজ কোম্পানির সবচেয়ে বড় এবং অত্যাধুনিক জাহাজ। এর দৈর্ঘ্য ১,০৯৩ ফুট এবং ওজন প্রায় ২ লাখ ১৫ হাজার গ্রস টনেজ। বর্তমানে এটি বিশ্বের ষষ্ঠ বৃহত্তম জাহাজ। জাহাজটিতে সর্বোচ্চ ৬,৭৬২ জন যাত্রী এবং ২,১৩৮ জন ক্রু ধারণ করতে পারে। এর নির্মাণ খরচ ছিল প্রায় ১.২৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। MSC ওয়ার্ল্ড ইউরোপা একটি আধুনিক এবং পরিবেশবান্ধব জাহাজ। এটি তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (LNG) দ্বারা চালিত, যা দূষণ কমায়। MSC ওয়ার্ল্ড ইউরোপাকে ২০২২ ফিফা বিশ্বকাপের সময় দোহাতে একটি হোটেল শিপ হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছিল। বর্তমানে এটি ভূমধ্যসাগর, ক্যারিবীয়, উত্তর আটলান্টিক এবং উত্তর ইউরোপের গন্তব্যগুলিতে ভ্রমণ করে।

আরো জানুন: বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘতম ১০টি সেতু

৫. অ্যাল্যুর অব দ্য সিজ

অ্যাল্যুর অব দ্য সিজ হল রয়েল ক্যারিবিয়ানের ওয়েসিস ক্লাসের একটি ক্রুজ শিপ। এটি ২০১০ সালে বাণিজ্যিক সেবা শুরু করে এবং সে সময় বিশ্বের বৃহত্তম ক্রুজ শিপ ছিল। ২০১৬ সালে হারমোনি অব দ্য সিজের কাছে অবস্থানটি হারায় এটি এবং বর্তমানে এই জাহাজটি বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম জাহাজ। এর দৈর্ঘ্য ১,১৮৭ ফুট এবং ওজন প্রায় ২ লাখ ২৫ হাজার গ্রস টনেজ। এটি একসাথে ৬,৭৮০ যাত্রী এবং ২,২০০ ক্রু ধারণ করতে পারে। অ্যাল্যুর অব দ্য সিজের নির্মাণ খরচ ছিল প্রায় ১.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বর্তমানে এই ক্রুজ ইউরোপ, আমেরিকা এবং ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে ভ্রমণ করে।

৪. ওয়েসিস অব দ্য সিস

ওয়েসিস অব দ্য সিস হল রয়্যাল ক্যারিবিয়ান ইন্টারন্যাশনালের মালিকানাধীন একটি ক্রুজ জাহাজ। এটি বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম এবং বিলাসবহুল ক্রুজ জাহাজ। জাহাজটি ২২ তলা বিশিষ্ট  এবং ১৬টি ডেক রয়েছে। এর দৈর্ঘ্য ১,১৮১ ফুট এবং ওজন প্রায় ২ লাখ ২৬ হাজার গ্রস টনেজ। এটি একসাথে ৬,৭০০ যাত্রী এবং ২,১৮১ ক্রু ধারণ করতে পারে। ওয়েসিস অব দ্য সিস এর নির্মাণে ১.৫ বিলিয়ন ডলার খরচ হয়েছিল এবং জাহাজটি ২০০৯ সালের ডিসেম্বরে চালু হয়েছিল। এটি বর্তমানে ক্যারিবিয়ান, মেক্সিকো উপসাগর, ইউরোপ এবং মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে ভ্রমণ করে। এতে  থিম পার্ক, সিনেমা হল, ওয়াটার পার্ক, একটি ওয়াটার স্লাইড রেস, থিয়েটার, ক্যাসিনো, স্পা এবং ফিটনেস সেন্টার রয়েছে। এছাড়াও, জাহাজটিতে বিভিন্ন ধরণের রেস্তোরাঁ এবং বার রয়েছে, যা বিশ্বের বিভিন্ন ধরণের খাবার পরিবেশন করে।

৩. হারমোনি অফ দ্য সিজ

হারমোনি অফ দ্য সিজ হল বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম ক্রুজ জাহাজ, যা ২০১৬ সালের মে মাসে প্রথম যাত্রা শুরু করে। এটি রয়্যাল ক্যারিবিয়ান ইন্টারন্যাশনালের দ্বারা পরিচালিত একটি জাহাজ। এটি বিশ্বের সবচেয়ে ভারী ক্রুজ শিপ। এর দৈর্ঘ্য ১,১৮৭ ফুট এবং ওজন প্রায় ২ লাখ ২৭ হাজার গ্রস টনেজ। এটিতে ২,৭০০টি কেবিন রয়েছে, যাতে ৬,৬৮৭ জন যাত্রী এবং ২,৩০০ জন ক্রু থাকতে পারে। ১৮ ডেকের এই জাহাজে ২২টি রেস্তোরাঁ, ১৯টি বার ক্লাব, থিয়েটার, আইস স্কেটিং রিঙ্ক, ক্যাসিনো, শপিং মল, ওয়াটার পার্ক,  শিশুদের খেলার মাঠ এবং একটি কৃত্রিম পাহাড় সহ আরো অনেক কিছু রয়েছে। এর নির্মাণ ব্যয় ছিল প্রায় ১.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। জাহাজটি বর্তমানে ক্যারিবিয়ান, মেক্সিকো উপসাগর এবং ইউরোপের সমুদ্রগুলিতে ভ্রমণ করে।

আরো জানুন: বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘতম ১০টি মেট্রোরেল

২. সিম্ফনি অফ দ্য সিজ

সিম্ফনি অফ দ্য সিজ হল রয়্যাল ক্যারিবিয়ান ক্রুজেস লিমিটেডের মালিকানাধীন এবং পরিচালিত একটি ক্রুজ জাহাজ। এটি সর্বপ্রথম ২০১৮ সালের মার্চ মাসে চালু হয়েছিল এবং এটি বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ক্রুজ জাহাজ। জাহাজটি ঘণ্টায় ২৫ কিলোমিটার বেগে ছুটতে পারে। জাহাজটি ১১৮৪ ফুট লম্বা এবং ওজন প্রায় ২ লাখ ২৮ হাজার গ্রস টনেজ। জাহাজটিতে মোট ২ হাজার ৭৫৯টি কেবিন রয়েছে। এতে সর্বোচ্চ ৬,৬৮০ জন যাত্রী এবং ২,২০০ জন ক্রু ধারণ করতে পারে। জাহাজটির নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০১৫ সালে ফ্রান্সে। নির্মাণ ব্যয় ছিল প্রায় ১.৩৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। জাহাজটিতে অনেকগুলি রেস্তোরাঁ, খেলার জায়গা, কমেডি ক্ল‍াব, বুটিক শপ, স্পা ও ফিটনেস সেন্টার, ইয়োথ জোন, সুইমিংপুল, স্পের্টস জোন, সেন্ট্রাল পার্ক সহ অসংখ্য সব বিলাসবহুল সুযোগ সুবিধা রয়েছে।

১. ওয়ান্ডার অব দ্য সিজ

বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ও বিলাসবহুল জাহাজের নাম “ওয়ান্ডার অব দ্য সিজ” যার বাংলায় অর্থ করলে দাঁড়ায় 'সাগরের বিস্ময়'। এটিও রয়্যাল ক্যারিবিয়ান ইন্টারন্যাশনালের মালিকানাধীন একটি বিলাসবহুল ক্রুজ জাহাজ যা ২০২২ সালের মার্চ মাসে চালু হয়েছিল। এর দৈর্ঘ্য ১,১৮৮ ফুট এবং ওজন প্রায় ২ লাখ ৩৬ হাজার গ্রস টনেজ। ২২ তলা বিশিষ্ট বিলাসবহুল এই জাহাজটিতে রয়েছে ১৬টি ডেক এবং ২,৭০০ টি বিলাসবহুল রুম। জাহাজটি একসাথে জাহাজটিতে ৬,৯৮৮ জন যাত্রী এবং ২,৩০০ জন ক্রু ধারণ করতে পারে। ওয়ান্ডার অব দ্য সিজ ক্যারিবিয়ান, মেক্সিকো, ইউরোপ এবং মধ্যপ্রাচ্য সহ বিশ্বের বিভিন্ন গন্তব্যে ভ্রমণ করে। ওয়ান্ডার অব দ্য সিজেতে বেশ কয়েকটি বিলাসবহুল সুযোগ-সুবিধা রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে রেস্তোরাঁ, সুইমিং পুল, ওয়াটার পার্ক,থিম পার্ক, আইস স্কেটিং রিঙ্ক, সিনেমা হল, থিয়েটার, কনসার্ট হল, খেলার মাঠ ইত্যাদি। ওয়ান্ডার অব দ্য সিজের নির্মাণ খরচ ছিল ১.৩৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

এছাড়াও যদি আপনি নিয়মিত বিশ্বের ছোট ছোট অদ্ভুত, রহস্যময় ও আশ্চর্যজনক বিষয় সম্পর্কে জানতে চান তাহলে আমাদের সামাজিক মাধ্যমগুলোর সাথে যুক্ত থাকুন।

ফেইসবুক পেইজ: The Earth Bangla

ইউটিউব চ্যানেল: The Earth Bangla

ইনস্টাগ্রাম পেজ: The Earth Bangla

ফেইসবুক গ্রুপ: The Earth Bangla Family

Post a Comment

Please do not Enter any spam comment or Link in the comment Box

নবীনতর পূর্বতন