এশিয়ার সবচেয়ে দরিদ্রতম ১০ টি দেশ
গরীব দেশগুলোর কথা বলা হলে সবার প্রথমে আমাদের মাথায় আফ্রিকা মহাদেশের কথা আসলেও এশিয়া মহাদেশেও গরীব দেশের সংখ্যা একেবারেই কম নয়। ভারত, চীন, জাপান কিংবা দক্ষিণ কোরিয়ার মতো দেশগুলির বিশাল জনসংখ্যা ও অর্থনীতি থাকা সত্ত্বেও, এই মহাদেশে বেশ কিছু দরিদ্র দেশ রয়েছে যারা রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিকসহ নানাবিধ কারনে দারিদ্রতায় জর্জরিত। মূলত কোন দেশ কতোটা গরীব তা নির্ধারণ করা হয় কোন দেশের মাথাপিছু জিডিপি কতো তার ভিত্তিতে। The Earth Banglar সেরা ১০ সিরিজের আজকের পর্বে আমরা আপনাদের জানাবো এশিয়ার সবচেয়ে গরীব ১০টি দেশ সম্পর্কে।
১০. উজবেকিস্তান
উজবেকিস্তান মধ্য এশিয়ার একটি স্থলবেষ্টিত দেশ যা এশিয়ার দশম দরিদ্রতম দেশ। দেশটি এক সময় সোভিয়েত ইউনিয়নের একটি অংশ ছিল। ছোট্ট জনসংখ্যার এই দেশটিতে দুর্নীতি, আয় বৈষম্য এবং সম্পদের সুষম বন্টনের অভাবে অধিকাংশ মানুষ দারিদ্র সীমার নিচে বাস করে। দেশটির অর্থনীতিবিদরা দুর্নীতিকে এই দেশের দারিদ্র্যের অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত করছেন। ২০২২ সালে উজবেকিস্তানের মাথাপিছু জিডিপি ছিল ২২৫৫ মার্কিন ডলার, যা ২০২১ থেকে ১৩.১৩% বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২৩ সালে অবস্থার আরও উন্নতি হবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে। উজবেকিস্তানকে সোনা, তামা, ইউরেনিয়াম, পেট্রোলিয়াম গ্যাস, তুলা এবং আঙ্গুরের মতো পণ্য উৎপাদনের উদীয়মান তারকা বলা হয় যা এই দেশের অর্থনীতির মূল ভিত্তি।
৯. কম্বোডিয়া
কম্বোডিয়া দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ইন্দোচীন উপদ্বীপের দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত একটি দেশ যার যার দাফতরিক নাম কাম্পুচিয়া রাজ্য। মানব সম্পদের অভাব ও ব্যাপক আয়ের বৈষম্যের জন্য কম্বোডিয়া এই তালিকায় নবম স্থানে রয়েছে। সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সাফল্য সত্ত্বেও, দেশটি এখনও দারিদ্র্যের সাথে লড়াই করে চলেছে। দারিদ্র দূরীকরণের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মানে সরকার এখনও দৃষ্টান্তমূলক কিছুই করতে পারেনি। তবে, ২০২২ সালে কম্বোডিয়ার মাথাপিছু জিডিপি ছিল ১৭৮৭ মার্কিন ডলার, যা ২০২১ থেকে ৯.৯৩% বৃদ্ধি পেয়েছে। কম্বোডীয় অর্থনীতি মূলত কৃষি নির্ভর। এছাড়াও এখানে প্রচুর মাছ পাওয়া যায় যা এদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
আরো জানুন: এশিয়ার সবচেয়ে উন্নত ১০টি দেশ
৮. উত্তর কোরিয়া
যদিও উত্তর কোরিয়ার সংক্রান্ত খুব কম তথ্যই সংবাদ মাধ্যমের কাছে আসে, তবুও নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, দেশটি এশিয়ার সবচেয়ে দরিদ্র দেশের তালিকায় আছে । ১৩,৯৩ মার্কিন ডলার মাথাপিছু আয় নিয়ে দেশটি দারিদ্রতার বিচারে এশিয়ার অষ্টম স্থানে রয়েছে। যদিও এই অর্থনৈতিক সূচক সম্পর্কিত তথ্যগুলো আদৌ কতটুকু সঠিক তা নিয়েও কিন্তু সংশয় রয়েছে। তবে দেশটির জনগণের জীবনযাত্রার মান বিবেচনা করলে ধারণা করা যায় এই দেশের অধিকাংশ মানুষই দারিদ্র্য সীমার নিচে বাস করে। মূলত উত্তর কোরিয়ার দারিদ্র্যের জন্য কর্তৃত্ববাদী শাসন ও স্বৈরতান্ত্রিক সরকারকে দায়ী করা হয়। দারিদ্রের পাশাপাশি দেশটির আইন শৃঙ্খলার অবস্থা গোটা বিশ্বের কাছেই উদ্বেগের কারণ।
৭. পাকিস্তান
একসময় পাকিস্তানকে এশিয়ার উদীয়মান অর্থনীতি হিসেবে ধারণা করা হলেও বর্তমানে পাকিস্তান এশিয়ার অন্যতম একটি দরিদ্র দেশ। প্রাকৃতিক সম্পদের প্রাচুর্য থাকা সত্ত্বেও, পাকিস্তানের প্রায় ৪০% দারিদ্র সীমার নিচে বসবাস করছে। মৌলবাদ ও ধর্মনিরপেক্ষতার দ্বন্দ্ব, সরকারি দুর্নীতি, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের অভাবকে এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী করা হয়। শিক্ষার জন্য মোট জিডিপির মাত্র ২.৬% বরাদ্দ করা এই দেশটি তাদের জাতীয় বাজেটের সিংহভাগ ব্যয় করে প্রতিরক্ষা খাতে। ফলস্বরূপ, পাকিস্তানের জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেকই নিরক্ষর। “Pakistan Economic Outlook” এর একটি রিপোর্ট অনুসারে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশটির অর্থনীতি পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে। প্রাকৃতিক দূর্যোগ ও রাজনৈতিক অস্থিরতায় দেশটি বাণিজ্যিক ভারসাম্য প্রায় হারিয়ে ফেলেছে। বর্তমানে মাত্র ১২৮০ মার্কিন ডলার মাথাপিছু জিডিপি নিয়ে দেশটি এশিয়ার সপ্তম দরিদ্র দেশ হিসেবে অবস্থান করছে।
৬. মায়ানমার
মায়ানমার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একমাত্র অগণতান্ত্রিক দেশ যেখানে দীর্ঘদিন ধরে সাময়িক শাসন বিরাজ করছে। দেশটির দারিদ্রতার হার প্রায় ২৬% এবং এটি এশিয়ার গরীব দেশগুলোর তালিকায় ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে। মূলত সাময়িক শাসন, গৃহযুদ্ধ, বিদেশী বিনিয়োগের অভাব, বাণিজ্য ভারসাম্যহীনতা, অবকাঠামোর অভাব এবং দেশের প্রাকৃতিক সম্পদকে কাজে লাগানোর মতো কারিগরি জ্ঞানের অভাব এই দেশের দারিদ্রতার প্রধান কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম। দেশটির বর্তমান মাথাপিছু জিডিপি প্রায় ১২৬০ মার্কিন ডলার যা তাদের আর্থিক দূরাবস্থারই ইঙ্গিত দেয়।
আরো জানুন: এশিয়ার সবচেয়ে ধনী ১০টি দেশ
৫. নেপাল
৪. কিরগিজস্তান
কিরগিজস্তান মধ্য এশিয়ার পূর্বভাগের একটি স্থলবেষ্টিত রাষ্ট্র যা ১১৬০ মার্কিন ডলার মাথাপিছু জিডিপি নিয়ে এশিয়ার চতুর্থ দরিদ্রতম দেশ। দেশটির মোট জনসংখ্যার প্রায় ৩২% মানুষ দারিদ্র সীমার নিচে বসবাস করে। কৃষির উপর দেশটির নির্ভরতা এবং সম্পদের অসমবণ্টন এই দারিদ্রতার মূল কারণ। যথেষ্ট সুযোগ থাকার পরও দেশটি শুধুমাত্র তুলা ও তামাক রপ্তানি করেই বৈদেশিক বাণিজ্য চালাচ্ছে। এছাড়াও কিরগিজস্তানের অনেক অঞ্চলে ব্যাংকিং ও আর্থিক পরিষেবা না থাকায় দেশটি বিনিয়োগে অন্যান্য দেশের থেকে অনেক পিছিয়ে। আর এসব কারনই কিরগিজস্তানকে এশিয়ার অন্যতম দরিদ্র দেশে পরিণত করেছে।
৩. তাজিকিস্তান
প্রায় প্রতিটি অর্থনৈতিক সূচকেই তাজিকিস্তান শেষের দিক থেকে দ্বিতীয় বা তৃতীয় অবস্থানে আছে। মূলত, বিপুল সংখ্যক দক্ষ কর্মী ভাল কর্মসংস্থানের আশায় দেশ ছেড়ে চলে যাওয়া ও রাষ্ট্রীয় অবকাঠামোগত দূর্বলতার কারণে দেশটি অর্থনৈতিক উন্নতি করতে পারছে না। তবে তাজিকিস্তানের অর্থনীতিতে প্রবাসী বিশেষ করে রাশিয়াতে বসবাসকারী প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স বড় ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। ১৯৯০ সালে সংগঠিত গৃহযুদ্ধে দেশটির প্রায় ২০ শতাংশ স্কুল ধ্বংস হয়ে যায়। এই ঘটনাটি তাজিকিস্তানের শিক্ষার ক্ষেত্রে অত্যন্ত নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। দরিদ্র এই দেশটির বর্তমান মাথাপিছু জিডিপি মাত্র ১০৬০ মার্কিন ডলার যা এশিয়ার তৃতীয় দরিদ্রতম।
আরো জানুন: এশিয়ার সবচেয়ে ছোট ১০টি দেশ
২. ইয়েমেন
ইয়েমেন মধ্যপ্রাচ্যের একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ যা আরব উপদ্বীপের দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত। ইয়েমেন শুধু এশিয়ার নয় বরং পুরো বিশ্বের গরীব দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম। দেশটির প্রায় ৬৫% জনসংখ্যা দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে। দীর্ঘস্থায়ী গৃহযুদ্ধ, দুর্নীতি এবং দূর্বল অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা এর প্রধান কারণ। সঠিক তথ্য জানা না গেলেও ধারণা করা হয় যে, ইয়েমেনের মাথাপিছু জিডিপি মাত্র ৮৪০ মার্কিন ডলার যা এশিয়ার দ্বিতীয় দরিদ্রতম। বিংশ শতাব্দীর শেষে খনিজ তেল আবিষ্কার হলে ইয়েমেনের অর্থনৈতিক উন্নতি ও জনগণের জীবনের মান উন্নয়নের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিল। তবে ৮ বছরেরও বেশি সময় ধরে চলমান যুদ্ধ ও সশস্ত্র সংঘাতের কারণে মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশটি মানবিক সংকটের মুখে পড়েছে।
১. আফগানিস্তান
আফগানিস্তান দক্ষিণ এশিয়ার একটি স্থলবেষ্টিত পাহাড়ি দেশ যা এশিয়ার সবচেয়ে গরিব দেশ হিসেবে পরিচিত। দেশটির মাথাপিছু আয় প্রায় ৬১১ মার্কিন ডলার এবং দেশটির প্রায় ৫৫% জনসংখ্যা দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে। এদেশের প্রায় ৭০ শতাংশ মানুষ কৃষিকাজ বা পশুপালনের সাথে জড়িত। প্রতিনিয়ত সশস্ত্র যুদ্ধ, ব্যাপক দুর্নীতি, বেকারত্ব এবং দক্ষ শ্রমিক ও প্রশাসকের অভাব এই পার্বত্য দেশটির আজকের দূর্দশার প্রধান কারণ। দেশটি সোভিয়েত ইউনিয়ন দ্বারা দখলের আগেই এখানকার জীবনযাত্রার মান ছিল বিশ্বের সর্বনিম্ন। পরবর্তীতে সোভিয়েত-আফগান যুদ্ধ ও তার পরে গৃহযুদ্ধ দেশটির অর্থনীতির চূড়ান্ত বিপর্যয় ঘটায়। এতো কিছুর মধ্যেও দেশটির সাধারণ মানুষ জীবনযাত্রা মান উন্নত করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। তবে ক্রিকেটে দেশটির সাম্প্রতিক উন্নতি বিষ্মিত করেছে অনেককেই।
এছাড়াও যদি আপনি নিয়মিত বিশ্বের ছোট ছোট অদ্ভুত, রহস্যময় ও আশ্চর্যজনক বিষয় সম্পর্কে জানতে চান তাহলে আমাদের সামাজিক মাধ্যমগুলোর সাথে যুক্ত থাকুন।
ফেইসবুক পেইজ:
ইউটিউব চ্যানেল:
ইনস্টাগ্রাম পেজ: The Earth Bangla
ফেইসবুক গ্রুপ:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Please do not Enter any spam comment or Link in the comment Box