জনসংখ্যায় আফ্রিকার সবচেয়ে বড় ১০টি দেশ
প্রায় ১৪৬ কোটি ৪ লক্ষ জনসংখ্যা নিয়ে আফ্রিকা বিশ্বের দ্বিতীয় জনবহুল মহাদেশ। ৫৪ টি দেশের সমন্বয়ে গঠিত এই মহাদেশটি বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তরুণ জনসংখ্যার মহাদেশ হিসেবে পরিচিত। অধিক তরুণ জনসংখ্যার কারণে মহাদেশটিতে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং উন্নয়নের বিরাট সুযোগ তৈরি হয়েছে, আবার অন্যদিকে বেকারত্বর মতো সমস্যাও সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমানে বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় ১৭% আফ্রিকায় বসবাস করে। The Earth Banglar সেরা ১০ সিরিজের আজকের পর্বে আমরা আপনাদের জানাবো জনসংখ্যায় আফ্রিকার সবচেয়ে বড় ১০টি দেশ সম্পর্কে।
১০. আলজেরিয়া
জনসংখ্যায় আফ্রিকার দশম বৃহত্তম দেশ আলজেরিয়া। এটি উত্তর আফ্রিকায় ভূমধ্যসাগরের দক্ষিণ উপকূলে অবস্থিত একটি মুসলিম রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যা প্রায় ৪ কোটি ৫৪ লক্ষ যা আফ্রিকার মোট জনসংখ্যার ৩.১%। আয়তনের দিক থেকে আলজেরিয়া আফ্রিকা মহাদেশের সবচেয়ে বড় দেশ যেখানে প্রতি বর্গকিলোমিটারে জনসংখ্যার ঘনত্ব মাত্র ১৯ জন। দেশটির জনসংখ্যার ৭০% এর বেশি শহরাঞ্চলে বাস করে। দেশটির রাজধানী ও সবচেয়ে জনবহুল শহর আলজিয়ার্স যেখানে প্রায় ৪৫ লক্ষ জনগণের বসবাস। আলজিয়ার্স শহরটি আলজেরিয়ার রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হিসেবেও পরিচিত। বর্তমানে এই দেশটির বার্ষিক জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১.৬%।
৯. উগান্ডা
"আফ্রিকার মুক্তা" নামে পরিচিত উগান্ডা পূর্ব আফ্রিকায় অবস্থিত একটি স্থলবেষ্টিত রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যা প্রায় ৪ কোটি ৭৭ লক্ষ যার বেশিরভাগ খ্রিস্টধর্মের অনুসারী । আফ্রিকার মোট জনসংখ্যার ৩.৩% উগান্ডার বাসিন্দা। দেশটির রাজধানী ও সবচেয়ে জনবহুল শহর কাম্পালা যার জনসংখ্যা প্রায় ১৭ লক্ষ। আফ্রিকার নবম জনবহুল এই দেশটির জনসংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে দেশটির বার্ষিক জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ২.৮% এবং প্রতি বর্গকিলোমিটারে জনসংখ্যার ঘনত্ব ১৫৭ জন। তবে আশংকার বিষয় হচ্ছে দেশটিতে নবীন জনসংখ্যার তুলনায় প্রবীণ জনসংখ্যা খুবই কম। দেশটির প্রায় ৭৭% জনসংখ্যার বয়স ২৫ বছরের নিচে যা উগান্ডাকে বিশ্বের অন্যতম নবীন জনসংখ্যার দেশ করে তুলেছে। মূলত উচ্চ প্রজনন হার, বাল্যবিবাহ, পরিবার পরিকল্পনার ব্যাপারে সীমিত ধারণা এবং সাংস্কৃতিক কারণগুলোকে এর জন্য দায়ী করা হয়।
আরো জানুন: জনসংখ্যায় ইউরোপের সবচেয়ে বড় ১০টি দেশ
৮. সুদান
সুদান উত্তর-পূর্ব আফ্রিকার একটি দেশ যাকে কখনো কখনো উত্তর সুদান নামে অভিহিত করা হয়। এটি আফ্রিকার অষ্টম জনবহুল দেশ যার সংখ্যাগরিষ্ঠ জনসংখ্যাই মুসলিম। দেশটির জনসংখ্যা প্রায় ৪ কোটি ৯১ লক্ষ। অর্থাৎ আফ্রিকার মোট জনসংখ্যার ৩.৩% এই দেশের বাসিন্দা। দেশটির রাজধানী ও সবচেয়ে জনবহুল শহর খার্তুম। দেশটির বার্ষিক জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ২.৬% এবং প্রতি বর্গকিলোমিটারে জনসংখ্যার ঘনত্ব মাত্র ২১ জন। বর্তমানে সুদানের প্রায় ৬০% এরও বেশি জনসংখ্যার বয়স ২৫ বছরের কম এবং মাত্র ৩% জনসংখ্যার বয়স ৬৫ বছরের বেশি। সুদান জাতিগতভাবে বেশ বৈচিত্র্যময়। এখানে ৫০০টিরও বেশি জাতিগত গোষ্ঠী রয়েছে। এর মধ্যে বৃহত্তম জাতিগোষ্ঠীগুলো হল আরব, বেজা, ফুর এবং নুবা।
৭. কেনিয়া
প্রায় ৫ কোটি ১৫ লক্ষ জনসংখ্যা নিয়ে কেনিয়া আফ্রিকার সপ্তম জনবহুল দেশ। এটি পূর্ব আফ্রিকায় অবস্থিত একটি খ্রিস্টান সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ। আফ্রিকার মোট জনসংখ্যার ৩.৫% এই দেশে বাস করে। কেনিয়া দেশটির নাম এসেছে কেনিয়া পর্বত থেকে যা আফ্রিকা মহাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পর্বত। দেশটির রাজধানী ও সবচেয়ে জনবহুল শহর নাইরোবি যেখানে জনসংখ্যার পরিমাণ প্রায় ৪৭ লক্ষ। বর্তমানে দেশটির বার্ষিক জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ২.০% এবং প্রতি বর্গকিলোমিটারে জনসংখ্যার ঘনত্ব ৮২ জন। কেনিয়া বন্যপ্রাণীর জন্য বিখ্যাত যার মধ্যে রয়েছে সিংহ, হাতি, জিরাফ এবং জেব্রা। এছাড়াও কেনিয়ার সংস্কৃতি বৈচিত্র্যময় যা অনেক জাতিগত গোষ্ঠীর প্রতিফলন ঘটায়।
৬. তানজানিয়া
তানজানিয়া পূর্ব আফ্রিকার একটি প্রজাতান্ত্রিক রাষ্ট্র। জনসংখ্যার বিচারে এটি আফ্রিকার ষষ্ঠ বৃহত্তম দেশ যার মোট জনসংখ্যা প্রায় ৬ কোটি ১৭ লক্ষ। আফ্রিকার মোট জনসংখ্যার ৪.২% এই দেশের বাসিন্দা। দেশটির রাজধানী দোদোমা এবং সবচেয়ে জনবহুল শহর দারুস সালাম। জাতিগত বৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ এই দেশটিতে প্রায় ১০০টিরও বেশি ভাষা প্রচলিত রয়েছে এবং এখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ খ্রিস্টান ধর্মের অনুসারী। দেশটির বার্ষিক জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ৩.০% এবং প্রতি বর্গকিলোমিটারে জনসংখ্যার ঘনত্ব ৬৫ জন। তানজানিয়া একটি উন্নয়নশীল দেশ যা সোনা, হীরা এবং প্রাকৃতিক গ্যাসের একটি বড় উৎপাদক। দেশটির প্রধান শিল্পগুলো হল কৃষি, পর্যটন এবং খনন। আফ্রিকার সর্বোচ্চ পর্বত কিলিমাঞ্জারো সহ বেশ কয়েকটি জাতীয় উদ্যান এবং বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ এলাকার আবাসস্থল এই দেশটি।
আরো জানুন: জনসংখ্যায় এশিয়ার সবচেয়ে বড় ১০টি দেশ
৫. দক্ষিণ আফ্রিকা
জনসংখ্যায় আফ্রিকার পঞ্চম বৃহত্তম দেশ দক্ষিণ আফ্রিকা যা আফ্রিকা মহাদেশের সর্বদক্ষিণে অবস্থিত। দেশটির জনসংখ্যা প্রায় ৬ কোটি ২০ লক্ষ যা আফ্রিকার মোট জনসংখ্যার ৪.২%। দক্ষিণ আফ্রিকার জনসংখ্যা বেশ বৈচিত্র্যময় যা কৃষ্ণাঙ্গ, শ্বেতাঙ্গ, মিশ্র জাতি এবং এশিয়ান বংশোদ্ভূতদের নিয়ে গঠিত। দেশটির অধিকাংশ জনসংখ্যাই প্রোটেস্ট্যান্ট খ্রিস্টান। এটিই পৃথিবীর একমাত্র দেশ যার ৩ টি রাজধানী রয়েছে। কেপ টাউন, প্রিটোরিয়া এবং ব্লুমফন্টেইন। তবে দেশটির সবচেয়ে জনবহুল শহর জোহানেসবার্গ। দক্ষিণ আফ্রিকার বার্ষিক জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ০.৯% এবং প্রতি বর্গকিলোমিটারে জনসংখ্যার ঘনত্ব ৫০ জন। দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত দেশগুলোর একটি। এছাড়াও দেশটি এর সুন্দর সমুদ্র সৈকত, বিশ্বমানের ওয়াইন এবং বিচিত্র বন্যপ্রাণীর জন্য বিখ্যাত।
৪. মিশর
মিশর আফ্রিকার উত্তর-পূর্ব কোণে অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক মুসলিম রাষ্ট্র। নীল নদের তীরে অবস্থিত এই দেশটি বিশ্বের প্রাচীনতম সভ্যতাগুলোর একটি যাদের প্রথম সভ্যতা ৫,০০০ বছরেরও বেশি সময় আগে বিকশিত হয়েছিল। বর্তমানে মিশর আফ্রিকার চতুর্থ জনবহুল দেশ যার মোট জনসংখ্যা প্রায় ১১ কোটি। অর্থাৎ আফ্রিকার মোট জনসংখ্যার ৭.৬% এই দেশের বাসিন্দা। দেশটির রাজধানী ও সবচেয়ে জনবহুল শহর কায়রো। এছাড়াও দেশটির বার্ষিক জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১.৬% এবং প্রতি বর্গকিলোমিটারে জনসংখ্যার ঘনত্ব ২৬৮ জন। মিশর বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র। দেশটির জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্যগুলোর মধ্যে রয়েছে গিজার পিরামিড, দ্য গ্রেট স্ফিংস, কার্নাক মন্দির, লাক্সর মন্দির ইত্যাদি।
৩. গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্র
গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্র বা DRC মধ্য আফ্রিকায় অবস্থিত একটি দেশ যা পূর্বে জায়ার নামে পরিচিত ছিল। আয়তনের দিক থেকে এটি আফ্রিকার দ্বিতীয় বৃহত্তম এবং জনসংখ্যার দিক থেকে তৃতীয় বৃহত্তম দেশ। দেশটির জনসংখ্যা প্রায় ১১ কোটি ১৮ লক্ষ যা আফ্রিকার মোট জনসংখ্যার ৭.৭%। দেশটির প্রায় ৯৫% জনসংখ্যা খ্রিস্টান ধর্মের অনুসারী। দেশটির রাজধানী ও সবচেয়ে জনবহুল শহর কিনশাসা যার জনসংখ্যা প্রায় ১.৫ কোটির অধিক। এছাড়াও দেশটির বার্ষিক জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ৩.৩% এবং প্রতি বর্গকিলোমিটারে জনসংখ্যার ঘনত্ব ৪৬ জন। গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্র প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ একটি দেশ তবে দেশটি দীর্ঘদিন ধরে দুর্নীতি, দারিদ্র্য, দুর্ভিক্ষ, অস্থিতিশীলতা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের মতো সমস্যার সম্মুখীন।
আরো জানুন: জনসংখ্যায় বিশ্বের সবচেয়ে বড় ১০টি দেশ
২. ইথিওপিয়া
ইথিওপিয়া পূর্ব আফ্রিকার একটি স্থলবেষ্টিত দেশ যা জনসংখ্যায় আফ্রিকার সবচেয়ে বড় দেশের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। কফির জন্মস্থান হিসেবে পরিচিত এই দেশটি "আফ্রিকার শিং" তথা সোমালি উপদ্বীপ অঞ্চলে অবস্থিত। দেশটির বর্তমান জনসংখ্যা প্রায় ১২ কোটি ৭৯ লক্ষ যা আফ্রিকার মোট জনসংখ্যার ৮.৭%। দেশটির রাজধানী ও সবচেয়ে জনবহুল শহর আদ্দিস আবাবা যেখানে প্রায় ৩৯ লক্ষ জনসংখ্যা বসবাস করে। দেশটির বার্ষিক জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ২.৬% এবং প্রতি বর্গকিলোমিটারে জনসংখ্যার ঘনত্ব ৯২ জন। ইথিওপিয়া বিশ্বের প্রাচীনতম খ্রিস্টান দেশগুলির মধ্যে একটি এবং দেশটির বেশিরভাগ জনগণ ইথিওপিয়ান অর্থোডক্সের অনুসারী।
১. নাইজেরিয়া
জনসংখ্যার বিচারে আফ্রিকার সবচেয়ে জনবহুল এবং পৃথিবীর সপ্তম বৃহত্তম জনবহুল দেশ নাইজেরিয়া। এটি পশ্চিম আফ্রিকার আটলান্টিক মহাসাগরীয় উপকূলে অবস্থিত একটি দেশ যা আফ্রিকা মহাদেশের বৃহত্তম মুসলিম জনসংখ্যার দেশ হিসেবেও পরিচিত। দেশটির জনসংখ্যা প্রায় ২৩ কোটি ৮ লক্ষ যা আফ্রিকার মোট জনসংখ্যার ১৬%। দেশটির রাজধানী আবুজা এবং সবচেয়ে জনবহুল শহর লেগোস যেখানে জনসংখ্যার পরিমাণ ২ কোটির অধিক। এছাড়াও নাইজেরিয়ার বার্ষিক জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ২.৪% এবং প্রতি বর্গকিলোমিটারে জনসংখ্যার ঘনত্ব ২৪৯ জন। তবে দেশটির সিংহভাগ জনসংখ্যাই তরুণ তরুণী। জনসংখ্যার পাশাপাশি অর্থনীতির দিক থেকেও নাইজেরিয়া বেশ সমৃদ্ধ। বর্তমানে এটি আফ্রিকা মহাদেশের বৃহত্তম অর্থনৈতিক শক্তি।
এছাড়াও যদি আপনি নিয়মিত বিশ্বের ছোট ছোট অদ্ভুত, রহস্যময় ও আশ্চর্যজনক বিষয় সম্পর্কে জানতে চান তাহলে আমাদের সামাজিক মাধ্যমগুলোর সাথে যুক্ত থাকুন।
ফেইসবুক পেইজ:
ইউটিউব চ্যানেল:
ইনস্টাগ্রাম পেজ: The Earth Bangla
ফেইসবুক গ্রুপ:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Please do not Enter any spam comment or Link in the comment Box