ইউরোপ মহাদেশ সম্পর্কে
ইউরোপ মহাদেশ পৃথিবীর সাতটি মহাদেশের মধ্যে পঞ্চম বৃহত্তম মহাদেশ অর্থাৎ আয়তনে ইউরোপ পৃথিবী দ্বিতীয় ক্ষুদ্রতম মহাদেশ। মহাদেশটি আয়তনে এশিয়া মহাদেশের পাঁচ ভাগের একভাগ কিন্তু জনসংখ্যার ঘনত্বের দিক থেকে ইউরোপ মহাদেশ বিশ্বের প্রথম। ইউরোপের উত্তরে রয়েছে উত্তর মহাসাগর, পশ্চিমে আটলান্টিক মহাসাগর এবং দক্ষিণে রয়েছে ভূমধ্যসাগর। এটি বৃহত্তর ইউরেশিয়া মহাদেশীয় ভূখন্ডের পশ্চিমে উপদ্বীপ দিয়ে গঠিত। পূর্ব দিকে উরাল পর্বতমালা, উরাল নদী ও কাম্পিয়ান সাগর এবং দক্ষিণ-পুর্ব দিকে ককেশাস পর্বতমালা ও কৃষ্ণ সাগর ইউরোপকে এশিয়া মহাদেশ থেকে পৃথক করেছে। পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন মানব সভ্যতা ও সংস্কৃতির নিদর্শন মিলে এই মহাদেশ থেকেই। The Earth Banglar আজকের পর্বে আমরা আপনাদের জানাবো ইউরোপ মহাদেশ সম্পর্কে এমনই অজানা ও অবাক করার মত কিছু তথ্য। তার আগে চলুন দেখে নেয়া যাক এক নজরে ইউরোপ মহাদেশ সম্পর্কে।
আরো জানুন: (এশিয়া মহাদেশ) (ইউরোপ মহাদেশ) (আফ্রিকা মহাদেশ)
ইউরোপ মহাদেশ পরিচিতি
- আয়তন: ১,০১,৮০,০০০ বর্গকিলোমিটার
- জনসংখ্যা: ৭৫ কোটি
- জনসংখ্যার ঘনত্ব: প্রতি বর্গকিলোমিটারে ৭৩ জন
- শতকরা আয়তন: পৃথিবীর মোট আয়তনের ৬.৮%
- শতকরা জনসংখ্যা: পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার ১১%
- মোট দেশ সংখ্যা: ৫০টি
- জাতিসংঘ ভুক্ত দেশ: ৪৯টি
- ধর্ম: ৭৬.২% খ্রিষ্টান, ৪.৯% ইসলাম, ১৮.৩% নাস্তিক ও ০.৬% অন্যান্য।
- বৃহত্তম শহর: মস্কো, ইস্তানবুল, লন্ডন, প্যারিস, রোম, মাদ্রিদ, ভিয়েনা, সেন্ট পিটার্সবার্গ, বার্সেলোনা ও বার্লিন।
- সবচেয়ে জনবহুল শহর: ইস্তানবুল
- সবচেয়ে বড় দেশ: রাশিয়া (মোট মহাদেশ এলাকার ৩৭%)
- সবচেয়ে ছোট দেশ: ভ্যাটিকান সিটি
- সবচেয়ে বেশি জনসংখ্যার দেশ: রাশিয়া
- সবচেয়ে কম জনসংখ্যার দেশ: ভ্যাটিকান সিটি
- সবচেয়ে ধনী দেশ: লুক্সেমবার্গ
- সবচেয়ে গরিব দেশ: ইউক্রেন
- সর্বোচ্চ স্থান: মাউন্ট ব্লাঙ্ক (৪,৮০৮ মিটার উচু)
- সর্বনিম্ন স্থান: কাস্পিয়ান সাগর (সমুদ্র পৃষ্ঠতল থেকে ২৮ মিটার নিচে)
- ভাষা সংখ্যা: ২০০ এর বেশি.
- সবচেয়ে জনপ্রিয় ভাষা: রাশিয়ান (প্রায় ১৬ কোটির বেশি মানুষ)
- সবচেয়ে দামি মুদ্রা: সুইস ফ্রাংক (১ সুইস ফ্রাংক = ১০২ টাকা)
- সবচেয়ে বড় নদী: ভোলগা নদী (৩৬৯২ কিলোমিটার)
- সবচেয়ে বড় সাগর: ভূমধ্যসাগর
- নোবেল পাওয়া মানুষের সংখ্যা: ৪৭০ জন (সবচেয়ে বেশি নোবেল পুরস্কার বিজয়ী মহাদেশ)
- মাথাপিছু জিডিপি: $৩৪,৪৩০ মার্কিন ডলার
- সর্বোচ্চ মাথাপিছু জিডিপির দেশ: লুক্সেমবার্গ ($১৪০,৬৯৪ মার্কিন ডলার)
- ডোমেইন সংকেত: .eu
ইউরোপ মহাদেশ সম্পর্কে অজানা তথ্য
এবার তাহলে জেনে নেয়া যাক ইউরোপ মহাদেশ সম্পর্কে অজানা ও অবাক করার মত কিছু তথ্য
- ধারণা করা হয় ইউরোপ নামটি গ্রীক পুরাণশাস্ত্র থেকে এসেছে যেখানে গ্রিক দেবতা জিউস ফিনল্যান্ডের রাজকুমারী ইউরোপার প্রেমে পড়েছিলেন। পরেই এই অপরূপ সুন্দর রাজকুমারী ইউরোপার নাম থেকেই মহাদেশটির নাম দেওয়া হয় ইউরোপ।
- পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে বড় দুটি যুদ্ধ ছিল প্রথম বিশ্বযুদ্ধ ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। আর অবাক করার মতো ব্যাপার হল, এই দুটি যুদ্ধই হয়েছিল ইউরোপ কে কেন্দ্র করে।
- বিশ্বের প্রাচীনতম চিড়িয়াখানাটি দেখতে হলে আপনাকে ইউরোপে যেতে হবে। কারন বিশ্বের প্রাচীনতম চিড়িয়াখানাটি অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় অবস্থিত এবং ১৭৫২ সাল থেকে এটি বিদ্যমান।
- ইউরোপ সারা বিশ্বের কাছ থেকে একটি শিল্পোন্নত দেশ হলেও ইউরোপের মোট ভূমির ৩৯% এলাকা হল তৃণভূমি বা কৃষিজমি যা ফসল ফলানোর জন্য ব্যবহৃত হয়।
- পৃথিবীর শীর্ষ ১০টি পর্যটন কেন্দ্রের মধ্যে ৫টি স্থানই ইউরোপ মহাদেশ অবস্থিত। এরমধ্যে শুধুমাত্র ফ্রান্সের আইফেল টাওয়ার ও লুভর মিউজিয়াম দেখতে প্রতিবছর প্রায় ৯০ মিলিয়ন আন্তর্জাতিক পর্যটক ফ্রান্সে ভিড় জমান।
- পৃথিবীর সবচেয়ে বড় চার্চ সেন্ট পিটারস ব্যাসিলিকা যা ইউরোপ মহাদেশের ভ্যাটিকান সিটিতে অবস্থিত এবং অনুসারীর দিক থেকে খ্রিস্টধর্ম ইউরোপের সবচেয়ে বড় ধর্ম।
- বিশ্বের উৎপাদিত মোট ওয়াইনের প্রায় ৪৪% ওয়াইন উৎপাদন হয় ইউরোপ মহাদেশের দেশগুলোতে যার মধ্যে বৃহত্তম ওয়াইন উৎপাদক দেশ ফ্রান্স, ইতালি এবং স্পেন। এছাড়াও ইউরোপীয় ইউনিয়নে আরও ২১টি দেশ রয়েছে যারা ওয়াইন উৎপাদন করে থাকে।
- ইউরোপের মোট ১১ টি দেশে রাজপরিবার রয়েছে যা বর্তমান পৃথিবীর অন্য কোথাও দেখা যায় না। এই রাজতন্ত্রগুলোর মধ্যে যুক্তরাজ্য, সুইডেন, নরওয়ে, ডেনমার্ক, স্পেন, অ্যান্ডোরা, মোনাকো, লুক্সেমবার্গ, বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ডস এবং লিচটেনস্টাইন এর মতো দেশগুলো অন্তর্ভুক্ত।
- পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট দেশ ভ্যাটিকান সিটি ইউরোপ মহাদেশই অবস্থিত। আয়তন এবং জনসংখ্যা উভয় দিক থেকেই এটি বিশ্বের সবচেয়ে ছোট দেশ।
- ইউরোপে ২০০ টিরও বেশি ভাষায় কথা বলা হয় কিন্তু ইউরোপের অফিসিয়াল ভাষা ২৪টি। এর মধ্যে ইংরেজি, ফরাসি এবং জার্মানি অধিক প্রচলিত। তবে ইউরোপীয় জনসংখ্যার ৩৮% ইংরেজিতে কথা বলতে পারে।
- ইউরোপীয়রা বরাবরই চকলেটের জন্য বিখ্যাত। বিশ্বের অন্য যেকোনো জায়গার মানুষদের থেকে ইউরোপীয়রা বেশি চকলেট পছন্দ করেন। ধারণা করা হয়, বিশ্বের মোট উৎপাদিত চকলেটের ৫০% চকলেট শুধুমাত্র ইউরোপীয়রাই খেয়ে থাকেন।
- ইউরোপের মানুষরা আলু খুব পছন্দ করে সেটা চিপস, রোস্ট ডিনার বা ম্যাশ হিসাবেই হোক। তাই বিশ্বের মোট উৎপাদিত আলুর ৭৫% আসে ইউরোপ মহাদেশ থেকে।
- বিশ্বের মোট ১১৫৪ টি ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের মধ্যে প্রায় ৪০০ টিরও বেশি ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট ইউরোপ মহাদেশ অবস্থিত। তাই বরাবরই পর্যটকদের জন্য ইউরোপ একটি আদর্শ গন্তব্য।
- ইউরোপের অধিকাংশ দেশই ল্যান্ড লক কান্ট্রি বা স্থলবেষ্টিত দেশ। অর্থাৎ সেই দেশগুলোর কোন অঞ্চলের সাথে সমুদ্রের কোন সংযোগ নেই বা সমুদ্র উপকূল নেই। তবে ইউরোপের অধিকাংশ দেশ ল্যান্ড লক হলেও এই মহাদেশের কোন মরুভূমি নেই।
- ইউরোপ বিশ্বের সবচেয়ে ধনী মহাদেশ কারণ বিশ্বের ধনী দেশগুলোর এক তৃতীয়াংশ দেশ ইউরোপ মহাদেশে অবস্থিত। যদিও ইউরোপ আয়তনে বিশ্বের দ্বিতীয় ক্ষুদ্রতম মহাদেশ এবং ইউরোপ মহাদেশের আয়তন প্রায় কানাডা দেশের সমান।
- ইউরোপীয়দের বংশধর প্রায় প্রতিটি মহাদেশেই দেখতে পাওয়া যায় কারণ প্রাচীনকালে ইউরোপীয়রা ব্যবসা-বানিজ্যের কাজে প্রায় সব মহাদেশেই ভ্রমণ করত এবং সেখানে উপনিবেশন স্থাপন করতো। ফলে বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডের বেশিরভাগ সাদা মানুষ ইউরোপীয়দের বংশধর। এছাড়াও দক্ষিণ আমেরিকার অধিকাংশ সাদা মানুষ স্প্যানিশ, পর্তুগিজ এবং ইতালীয় বংশধর।
এই ছিল পৃথিবী দ্বিতীয় ক্ষুদ্রতম মহাদেশ ইউরোপ সম্পর্কে জানা অজানা ও অবাক করার মত কিছু তথ্য।
এছাড়াও যদি আপনি নিয়মিত বিশ্বের ছোট ছোট অদ্ভুত, রহস্যময় ও আশ্চর্যজনক বিষয় সম্পর্কে জানতে চান তাহলে আমাদের সামাজিক মাধ্যমগুলোর সাথে যুক্ত থাকুন।
ফেইসবুক পেইজ:
ইউটিউব চ্যানেল:
ইনস্টাগ্রাম পেজ: The Earth Bangla
ফেইসবুক গ্রুপ:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Please do not Enter any spam comment or Link in the comment Box