বিশ্বের প্রাচীনতম ১০টি দেশ
পৃথিবীতে এমন কিছু দেশ রয়েছে যাদের একটি সমৃদ্ধ ইতিহাস এবং ঐতিহ্য রয়েছে যা হাজার হাজার বছর ধরে বিস্তৃত। এই দেশগুলি বহু শতাব্দী ধরে বিভিন্ন যুদ্ধ, বিপ্লব এবং সংঘাতের মধ্য দিয়ে গেছে কিন্তু তারা তাদের সার্বভৌমত্ব বজায় রেখেছে এবং আজও স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বিদ্যমান রয়েছে। এই ধরনের দেশগুলোকে পৃথিবীর সবচেয়ে পুরনো বা প্রাচীন দেশ হিসেবে বিবেচনা করা হয় এবং তাদের প্রত্যেকেরই নিজস্ব বৈশিষ্ট্য রয়েছে। The Earth Banglar সেরা ১০ সিরিজের আজকের পর্বে আমরা আপনাদের জানাবো বিশ্বের সবচেয়ে পুরনো ১০টি দেশ সম্পর্কে।
১০. আফগানিস্তান
আফগানিস্তান বিশ্বের সবচেয়ে পুরনো দেশগুলির মধ্যে একটি যার ইতিহাস প্রায় ৪ হাজার বছরেরও বেশি সময় আগে শুরু হয়েছিল। ২০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের পর মধ্য এশিয়া থেকে এই এলাকায় লোক আসতে শুরু করে। এদের অধিকাংশই ছিল আর্য, যারা ইরান ও ভারতেও বসতি স্থাপন করেছিল। তখন এই এলাকার নাম ছিল আরিয়ানা। আফগানিস্তান প্রাচীনকালে গ্রীক, রোমান, পারস্য এবং আরব সাম্রাজ্যের অধীনে ছিল। খ্রিস্টীয় ৭ম শতাব্দীতে আরব সৈন্যরা আফগানিস্তানে নতুন ধর্ম ইসলাম নিয়ে আসে এবং ১৮ শতকে আফগানিস্তান একটি স্বাধীন দেশ হয়ে ওঠে।
৯. ইরান
ইরান একটি প্রাচীন দেশ যার পূর্ব নাম ছিল পারস্য। এই দেশে সভ্যতার ইতিহাস প্রায় ৪ হাজার বছরেরও বেশি পুরনো। ইরান পৃথিবীর প্রাচীনকাল থেকে শুরু করে বর্তমান পর্যন্ত অস্তিত্বশীল বৃহৎ সভ্যতাগুলোর মধ্যে অন্যতম। এই অঞ্চলে মানব বসতি ৭০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দেরও আগের হলে প্রাচীন ইরানি সভ্যতা খ্রিস্টপূর্ব ২০০০ থেকে ৫০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের মধ্যে বিকাশ লাভ করেছিল। আর্য জাতির বিভিন্ন গোত্র খ্রিস্টপূর্ব ২০০০ অব্দের দিকে ইরানীয় মালভূমিতে বসতি স্থাপন শুরু করে। এখানে পারস্য, আরবি, তুর্কি এবং আরও অনেক জাতির সংস্কৃতির মিশ্রণ রয়েছে। তাই ইরান দেশটি প্রাচীন সভ্যতা থেকে আধুনিক বিশ্বের একটি গুরুত্বপূর্ণ শক্তি হয়ে ওঠার সাক্ষী হয়ে হয়েছে।
আরো জানুন: বিশ্বের সবচেয়ে পুরনো ১০টি শহর
৮. চীন
চীনকে বিশ্বের সবচেয়ে পুরনো ঐতিহ্যবাহী সভ্যতাগুলির মধ্যে একটি বলে মনে করা হয়। চীনের ইতিহাস প্রায় ৪ হাজার বছরের পুরনো এবং এটি বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন লিখিত ইতিহাসগুলির একটি। চীনের প্রথম সাম্রাজ্য হল শিয়া সাম্রাজ্য, যা খ্রিস্টপূর্ব ২০৭০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। চীনের ইতিহাসে অনেক সাম্রাজ্য এবং রাজবংশ এসেছে ও গিয়েছে, কিন্তু চীন সবসময় একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসাবে বিদ্যমান ছিল। চীনে অনেকগুলি প্রাচীন স্থাপত্য নিদর্শন রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে The Great Wall of China, The Tower of Blue Dragon এবং The Pagoda of Five Pillars.
৭. ইথিওপিয়া
ইথিওপিয়া বিশ্বের সবচেয়ে পুরনো দেশগুলির মধ্যে একটি যা কখনও কোনও বিদেশী শক্তি দ্বারা উপনিবেশিত হয়নি। ইথিওপিয়ার ইতিহাস প্রায় সাড়ে ৪ হাজার বছরের বেশি পুরনো। এটি সাম্প্রতিক বছরগুলিতে আধুনিক দেশ হিসাবে আবির্ভূত হলেও এই অঞ্চলটিতে দশ হাজার বছরেরও বেশি পুরানো মানব বসতির প্রমাণ পাওয়া গেছে। তবে ইথিওপিয়ায় প্রথম সভ্যতার বিকাশ ঘটেছিল খ্রিস্টপূর্ব ২৫০০ সালে। ইথিওপিয়ায় ঐতিহাসিকভাবে অনেকগুলি শক্তিশালী সভ্যতা ছিল, যার মধ্যে ছিল আক্সুম সাম্রাজ্য অন্যতম। ইথিওপিয়ায় অনেকগুলি প্রাচীন স্থাপত্য নিদর্শন রয়েছে, যেগুলো দেখতে প্রতিবছর হাজার হাজার পর্যটক ভিড় করেন।
৬. গ্রীস
গ্রীসকে বিশ্বের সবচেয়ে পুরনো দেশগুলির মধ্যে একটি বলে মনে করা হয় কারণ এটি একটি প্রাচীন সভ্যতার জন্মস্থান। গ্রীসের ইতিহাস প্রায় ৫ হাজার বছরেরও বেশি পুরনো। গ্রীসে অনেক প্রাচীন সভ্যতার ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে যা প্রায় ৫০০০ বছরের পুরনো। গ্রীক সভ্যতা খ্রিস্টপূর্ব প্রায় ৩,০০০ বছর পূর্বে শুরু হয়েছিল এবং এই সভ্যতায়ই প্রথম গণতন্ত্রের ধারণা প্রচলিত হয়েছিল। এছাড়াও গ্রীক সভ্যতা পশ্চিমা সভ্যতার ভিত্তি স্থাপন করেছিল এবং এটি শিল্প, সাহিত্য, দর্শন, বিজ্ঞান এবং স্থাপত্যকে সমৃদ্ধ করেছিল। গ্রীক সভ্যতার অনেক ধারণা এবং আবিষ্কার আজও আমরা ব্যবহার করে থাকি।
আরো জানুন: পৃথিবী থেকে হারিয়ে যাওয়া ১০টি দেশ
৫. মিশর
মিশরকে বিশ্বের সবচেয়ে পুরনো সার্বভৌম দেশের মধ্যে একটি বলে মনে করা হয়, এবং এর ইতিহাস প্রায় ৫ হাজার বছরেরও বেশি পুরনো। এটি বিশ্বের প্রাচীনতম সভ্যতাগুলির মধ্যে একটি। মিশরের প্রাচীন সভ্যতা ৪৫০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দেরও আগে শুরু হয়েছিল, এবং এটি ৩১০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের দিকে প্রাচীন মিশরীয় রাজত্বের সাথে সংযুক্ত হয়েছিল। মিশরের প্রাচীন এই সভ্যতাটি নীল নদের অববাহিকায় গড়ে উঠেছিল। প্রাচীন মিশরীয়রা স্থাপত্যে, শিল্পে, সাহিত্যে এবং বিজ্ঞানে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে। তারা পিরামিড, স্ফিংস এবং অন্যান্য বিশাল স্থাপত্য তৈরি করেছিল যা আজও মানুষকে বিস্মিত করে।
৪. ভারত
ভারতকে বিশ্বের সবচেয়ে পুরনো দেশগুলির মধ্যে একটি বলে মনে করা হয় যার ইতিহাস প্রায় সাড়ে ৫ হাজার বছরেরও বেশি পুরনো। এখানে ভারত বলতে মূলত ভারতবর্ষকে বুঝানো হয়েছে। এখানে অনেক প্রাচীন সভ্যতার উত্থান ঘটেছিল, যার মধ্যে সিন্ধু সভ্যতা অন্যতম। এই সভ্যতা মূলত সিন্ধু নদীর তীরে গড়ে উঠেছিল যা খ্রিস্টপূর্ব ৩৩০০ থেকে ১৩০০ সাল পর্যন্ত বিদ্যমান ছিল। সিন্ধু সভ্যতার পরেও ভারতে অনেকগুলি সভ্যতা বিকাশ লাভ করেছে, যার মধ্যে রয়েছে মৌর্য সাম্রাজ্য, গুপ্ত সাম্রাজ্য এবং মুঘল সাম্রাজ্য। এই সভ্যতাগুলি ভারতকে একটি সমৃদ্ধ এবং বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি দিয়েছে।
৩. লেবানন
লেবানন একটি প্রাচীন দেশ যা বিশ্বের প্রাচীনতম দেশগুলির মধ্যে অন্যতম। লেবাননের ইতিহাস প্রায় ৭ হাজার বছরের পুরনো, এবং এটি পৃথিবীর প্রাচীনতম সভ্যতাগুলির একটি ছিল। লেবাননের প্রথম অধিবাসী ছিলেন ফিনিশিয়ানরা। ধারণা করা হয়, খ্রিস্টপূর্ব প্রায় ৫০০০ সালের দিকে সেখানে ফিনিশিয়ানরা বসতি স্থাপন করেছিলেন। ফিনিশিয়ানরা লেবাননে অনেক গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো নির্মাণ করেছিল, যার মধ্যে রয়েছে রাস্তা, সেতু, দুর্গ এবং শহর। লেবাননে অনেকগুলি প্রাচীন শহর এবং এর ধ্বংসাবশেষ রয়েছে, যা এই দেশের সমৃদ্ধ ইতিহাসের সাক্ষ্য দেয়। এছাড়াও এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রও ছিল এবং এখানে অনেক বিখ্যাত দার্শনিক, কবি, এবং লেখকের জন্মস্থান ছিল।
আরো জানুন: বিশ্বের সবচেয়ে পুরনো ১০টি ভাষা
২. জর্জিয়া
জর্জিয়াকে বিশ্বের সবচেয়ে পুরনো দেশগুলির মধ্যে একটি হিসাবে বিবেচনা করা হয়। এটি বিশ্বের প্রথম খ্রিস্টান দেশ এবং এর ইতিহাস প্রায় ৮ হাজার বছরেরও বেশি পুরনো। প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন সমূহ প্রমাণ করে যে, জর্জিয়া ৬০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দেরও পূর্বে থেকেই মদ উৎপাদনের জন্য পরিচিত ছিলো, যা সময়ের সাথে সাথে জর্জীয়ান সংস্কৃতি ও জাতীয় পরিচিতির পেছনে ব্যাপক ভূমিকা রাখে। জর্জিয়ার একটি সমৃদ্ধ সংস্কৃতি রয়েছে যা বাইজেন্টাইন, পারস্য এবং আর্মেনীয় সংস্কৃতির মিশ্রণ। জর্জিয়ার প্রাচীন ইতিহাসের অনেক প্রমাণ পাওয়া যায়, যার মধ্যে রয়েছে প্রাচীন অনেক শহর, গির্জা এবং দুর্গ।
১. সিরিয়া
সিরিয়া হল বিশ্বের সবচেয়ে পুরনো সার্বভৌম দেশ, যার ইতিহাস প্রায় ১০ হাজার বছর পুরোনো। সিরিয়ায় ৮০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দেরও আগের প্রাচীন মানব বসতিগুলির প্রমাণ পাওয়া গেছে। সিরিয়াতে অনেকগুলি প্রাচীন সভ্যতা বিদ্যমান ছিল, যার মধ্যে রয়েছে আক্কাদিয়ান, সুমেরিয়ান, ব্যাবিলনীয়, আসিরিয়ান এবং রোমান সভ্যতা উল্লেখযোগ্য। বিশ্বের প্রাচীনতম শহরগুলোর মধ্যে একটি হল দামোস্কো যা সিরিয়াতে অবস্থিত। এছাড়াও এটি ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র ছিল। বর্তমানে সিরিয়া দীর্ঘদিন ধরে গৃহযুদ্ধের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে কিন্তু এটি তার সমৃদ্ধ ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য জন্য পরিচিত।
এছাড়াও যদি আপনি নিয়মিত বিশ্বের ছোট ছোট অদ্ভুত, রহস্যময় ও আশ্চর্যজনক বিষয় সম্পর্কে জানতে চান তাহলে আমাদের সামাজিক মাধ্যমগুলোর সাথে যুক্ত থাকুন।
ফেইসবুক পেইজ:
ইউটিউব চ্যানেল:
ইনস্টাগ্রাম পেজ: The Earth Bangla
ফেইসবুক গ্রুপ:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Please do not Enter any spam comment or Link in the comment Box