বিশ্বের সবচেয়ে বড় ১০টি বিল্ডিং

পৃথিবীতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে, বাড়ছে শহরায়ন এবং মানুষের আবাসনের প্রয়োজনে তৈরি হচ্ছে উঁচু উঁচু সব দালান। কিছু কিছু বিল্ডিং এতটাই উঁচু যে মনে হবে তা যেন আকাশ ছোঁয়ার প্রতিযোগিতায় নেমেছে। বিগত কয়েক দশকে বিশ্বে অনেকগুলি গগনচুম্বী ও সুন্দর বিল্ডিং তৈরী হয়েছে এবং এখনো আধুনিক ও উন্নত সব ইঞ্জিয়ারিং প্রযুক্তির সাহায্যে অনেকগুলি বিল্ডিং তৈরীর পর্যায়ে রয়েছে। The Earth Banglar সেরা ১০ সিরিজের আজকের পর্বে আমরা আপনাদের জানাবো বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু ১০টি ভবন সম্পর্কে।

১০. তাইপেই 101 , তাইওয়ান

তাইপেই 101 একটি সুপরিচিত বহুতল ভবন যা তাইওয়ানের জিনই জেলার তাইপেই শহরে অবস্থিত যা পূর্বে তাইপে ওয়ার্ল্ড ফাইন্যান্সিয়াল সেন্টার নাম পরিচিত ছিল। ভবনটির নাম টাইপে 101 হওয়ার কারণ এটি ১০১ তলা নিয়ে গঠিত যার উচ্চতা ৫০৮ মিটার বা ১৬৬৭ ফুট। তবে মাটির নিচে আরো ৫ তলা রয়েছে। ২০০৪ সালে ভবনটি জনগণের জন্য উম্মুক্ত করে দেওয়া হয়।  উদ্বোধনের পর থেকে এই ভবনটি আধুনিক তাইওয়ানের প্রতিচ্ছবি হিসাবে বিবেচিত হয়ে আসছে এবং ইংরেজি নববর্ষের অনুষ্ঠানে তাইপে ১০১ থেকে করা আতশবাজির দৃশ্য সারা বিশ্বে সম্প্রচারিত হয়। ২০০৪ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত এটি ছিল বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু ভবন যা  ২০১০ সালে বুর্জ খলিফার উদ্বোধনের পর বিশ্বের সর্বোচ্চ ভবনের খেতাব হারায়।

৯. চায়না জুন , চীন

চায়না জুন হল বেইজিং এর আকাশচুম্বী CITIC টাওয়ারের সংক্ষিপ্ত নাম। সুউচ্চ এই বিল্ডিংটি চায়নার ব্যাবসায়িক কেন্দ্র বেইজিং শহরের মধ্যভাগে অবস্থিত। ১০৯ তলা উচ্চতার এই বিল্ডিংটি ৫২৮ মিটার বা ১৭৩২ ফুট উঁচু যা বিশ্বের উচ্চতম ভবনগুলোর মধ্যে নবম স্থান দখল করেছে। এছাড়াও মাটির নীচে ৮টি অতিরিক্ত ফ্লোর রয়েছে। এটি বেইজিং শহরের সবথেকে উঁচু বিল্ডিং। ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১১ সালে নির্মাণ শুরু হয়ে ২০১৮ সালে এটি উদ্বোধন করা হয়। বিল্ডিংটি প্রায় ৬০ তলা অফিস স্পেস, ২০ তলা বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট এবং ২০ তলায় ৩০০টি কক্ষ সহ একটি বিলাসবহুল হোটেল নিয়ে গঠিত। এছাড়াও শপিং মল, রেস্তোরাঁ এবং ছাদে একটি বাগান রয়েছে ভবনটিতে।

আরো জানুন: বিশ্বের বৃহত্তম ১০টি জাহাজ

৮. তিয়ানজিন সিটিএফ ফাইন্যান্স সেন্টার , চীন

তিয়ানজিন সিটিএফ ফাইন্যান্স সেন্টার হল একটি উঁচু গগনচুম্বী ভবন যা চীনের তিয়ানজিন শহরে অবস্থিত। ১৭৩৯ ফুট বা ৫৩০ মিটার উঁচু এবং ৯৮ তলা বিশিষ্ট এই বিল্ডিংটি তিয়ানজিনের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ এবং বিশ্বের অষ্টম উঁচু ভবন। এই বিল্ডিংটি ২০১৩ সালে নির্মাণ শুরু হয় এবং ২০১৯ সালে নির্মাণ সমাপ্ত হয়। বিল্ডিং এর নামে CTF থাকার কারণ এটি চৌ তাই ফুক এন্টারপ্রাইজের মালিকানাধীন একটি ভবন। ভবনটিতে বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুততম লিফট রয়েছে যা প্রতি ঘণ্টায় ৪৫ মাইল গতিতে নিচ থেকে উপরে পৌঁছাতে পারে। ভবনটি সূর্যের আলোতে প্রতিসরণ করে যা সারা দিন বিভিন্ন রঙ দেখায় এবং ঝুঁকে থাকা টাওয়ারের শীর্ষটি রাতে হীরার মতো জ্বলজ্বল করে।

৭. গুয়াংজু সিটিএফ ফাইন্যান্স সেন্টার , চীন

গুয়াংজু সিটিএফ ফাইন্যান্স সেন্টার চীনের গুয়াংজুতে অবস্থিত আকাশচুম্বী ভবন যাকে ইস্ট টাওয়ারও বলা হয়। এটিও চীনের চৌ তাই ফুক এন্টারপ্রাইজের মালিকানাধীন একটি ভবন। ১৭৩৯ ফুট বা ৫৩০ মিটার উঁচু এবং ১১১ তলা বিশিষ্ট এই বিল্ডিংটি চীনের তৃতীয় সর্বোচ্চ এবং বিশ্বের সপ্তম উঁচু ভবন। তিয়ানজিন সিটিএফ ফাইন্যান্স সেন্টার এবং গুয়াংজু সিটিএফ ফাইন্যান্স সেন্টার এর উচ্চতা এক হলেও গুয়াংজু ভবনের তলা বেশি হওয়ায় এটিকে এগিয়ে রাখা হয়েছে। ২০০৯ সালে এটির নির্মাণ শুরু হয় এবং ২০১৬ সালের অক্টোবরে এই ভবনটির নির্মাণ কাজ শেষ হয়।

৬. ওয়ান ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার, মার্কিন যুক্তরাষ্ট

পাশ্চাত্য বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু এবং বিশ্বের ষষ্ঠ উচ্চতম অট্টালিকা হল ওয়ান ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার যা যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক সিটির ম্যানহাটানে অবস্থিত। এটি মার্কিন যুক্তরাষ্টের সবথেকে উঁচু স্কাইস্ক্রাপ যা ফ্রিডম টাওয়ার নামেও পরিচিত। মূলত ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর তারিখে সন্ত্রাসী হামলায় ধ্বংস প্রাপ্ত আসল ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার এবং টুইন টাওয়ারের সঙ্গে মিলিয়ে এই নামকরণ করা হয়। এর উচ্চতা ৫৪১ মিটার বা ১৭৭৬ ফুট এবং মোট ১০৪ টি ফ্লোর রয়েছে। এর নির্মাণ কাজ ২০০৬ সালে শুরু হয় এবং ৩ নভেম্বর ২০১৪ সালে ভবনটি উদ্বোধন করা হয়।

আরো জানুন: বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘতম ১০টি টানেল

৫. লোটে ওয়ার্ল্ড টাওয়ার , দক্ষিণ কোরিয়া

লোটে ওয়ার্ল্ড টাওয়ার দক্ষিণ কোরিয়ার সিউল শহরে অবস্থিত সর্বোচ্চ উঁচু এবং বিশ্বের পঞ্চম উচ্চতম ভবন হিসেবে পরিচিত। এর উচ্চতা ৫৫৪ মিটার বা ১৮১৯ ফুট এবং মোট ১২৩ টি ফ্লোর রয়েছে। এটির নির্মাণকাল ২০১০ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত। ২০১৭ সালের ৩ এপ্রিল টাওয়ারটি সবসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হয়। ভবনটিতে রয়েছে ইনডোর থিম পার্ক,  বিলাসবহুল হোটেল, থিয়েটার, শপিং মল, অফিস, দোকান এবং স্টুডিও অ্যাপার্টমেন্ট। ভবনটি রিখটার স্কেলে ৯ মাত্রা পর্যন্ত ভূমিকম্প প্রতিরোধের জন্য একটি অনন্য স্থাপত্য নকশায় নির্মিত হয়েছে।

৪. পিং অ্যান ফাইন্যান্স সেন্টার , চীন

পিং অ্যান ফাইন্যান্স সেন্টার চীনের গুয়াংডং প্রদেশে শেনজেন শহরে অবস্থিত ১১৫ তালার একটি সুপার স্কাইস্ক্রাপ। এটি ‘পিং অ্যান আইএফসি’ নামেও পরিচিত। এর উচ্চতা ৫৯৯ মিটার বা ১৯৬৫ ফুট। এই ভবনটি নির্মাণে ১৫০ কোটি মার্কিন ডলার খরচ হয়েছে। ২০১০ সালে এটির নির্মাণ শুরু হয় এবং ২০১৭ সালে সকলের জন্য খুলে দেয়া হয়। ১৮০৪ ফুট উঁচুতে তৈরি অবজারভেশন ডেকে প্রতিদিন ৯ হাজার দর্শণার্থীর সমাগম ঘটে। আর যাতায়াতের জন্য ব্যবহার করা হয়েছে ৩৩টি ডাবল ডেকার এলিভেটর।

৩. আবরাজ আল-বাইত ক্লক টাওয়ার , সৌদি আরব

আবরাজ আল-বাইত ক্লক টাওয়ার হল সৌদি আরবের পবিত্র নগরী মক্কা শহরে অবস্থিত সরকারের মালিকানাধীন একটি কমপ্লেক্স ভবন। এটি ক্লক টাওয়ার এবং জেদ্দা টাওয়ার নামেও পরিচিত। ১৯৭১ ফুট বা ৬০১ মিটার উঁচু বিশিষ্ট এই বিল্ডিংটি বর্তমানে বিশ্বের তৃতীয় সর্বোচ্চ উঁচু ভবনের মর্যাদা লাভ করেছে। ভবনটির নির্মাণ কাজ ২০০৪ এ শুরু হয় এবং ২০১২ সালে এর নির্মাণ কাজ শেষ হয়। ১২০ তলাবিশিষ্ট এই ভবনে রয়েছে হোটেল, কনফারেন্স সেন্টার, চাঁদ পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র, ইসলামি জাদুঘর এবং মসজিদ যেখানে একসাথে ১০ হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারবেন।

আরো জানুন: বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘতম ১০টি সেতু

২. সাংহাই টাওয়ার , চীন

সাংহাই টাওয়ার চীনের বাণিজ্য নগরী সাংহাই শহরে অবস্থিত একটি অসাধারণ আকাশচুম্বী ভবন। ২০৭৩ ফুট বা ৬৩২ মিটার উঁচু বিশিষ্ট এই বিল্ডিংটি বর্তমানে বিশ্বের দ্বিতীয় উচ্চতম ভবন হিসেবে পরিচিত। এতে মোট ১২৮ টি ফ্লোর রয়েছে। টাওয়ারটির নির্মাণ কাজ ২০০৮ সালের নভেম্বর থেকে শুরু হয় এবং ২০১৫ সালে শেষ হয়। চীনের সাংহাই শহরের এই স্কাইস্ক্রাপারটির সৌন্দর্য্য শুধু আপনাকে মুগ্ধ করবে না, সাথে চমৎকৃত করবে এর নির্মাণশৈলী দ্বারা। এছাড়াও রয়েছে আকর্ষণীয় অবজারভেশন ডেক। বর্তমানে এই ভবনটি মূলত অফিস এবং হোটেল হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। 

১. বুর্জ খলিফা , দুবাই

বুর্জ খলিফা হলো সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে অবস্থিত একটি আকাশচুম্বী ভবন, যা বর্তমানে পৃথিবীর সবচেয়ে উচ্চতম ভবন হিসেবে পরিচিত। ৩ লাখ ৩৪ হাজার স্কয়ার মিটার জায়গা জুড়ে তৈরি ১৬৩ তলার এই ভবনটির উচ্চতা ২৭১৭ ফুট বা ৮২৮ মিটার। এক সাথে ৩০ হাজার মানুষের আবাসন, ৯টি হোটেল এবং শপিং মল রয়েছে এই বিল্ডিংয়ে। চলাচলের জন্য রয়েছে ৫৭টি এলিভেটর ও ৮টি এস্কেলেটর। এই ভবনটি বানাতে খরচ হয়েছে প্রায় ১.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বর্তমানে এই ভবনটি আধুনিক দুবাইয়ের একটি প্রতিচ্ছবি যা দুবাই টাওয়ার নামেও পরিচিত। ভবনটির নির্মাণ কাজ ২০০৪ সালে শুরু হয় এবং এর উদ্বোধন করা হয় ২০১০ সালে।

এছাড়াও যদি আপনি নিয়মিত বিশ্বের ছোট ছোট অদ্ভুত, রহস্যময় ও আশ্চর্যজনক বিষয় সম্পর্কে জানতে চান তাহলে আমাদের সামাজিক মাধ্যমগুলোর সাথে যুক্ত থাকুন।

ফেইসবুক পেইজ: The Earth Bangla

ইউটিউব চ্যানেল: The Earth Bangla

ইনস্টাগ্রাম পেজ: The Earth Bangla

ফেইসবুক গ্রুপ: The Earth Bangla Family

Post a Comment

Please do not Enter any spam comment or Link in the comment Box

নবীনতর পূর্বতন